পোল্ট্রি সেক্টর নানামুখী ষড়যন্ত্র ও বিভ্রান্তির তথ্য থেকে রেহাই পাচ্ছে না

441

26179652_10214585245162148_

দেশের মানুষের প্রাণীজ আমিষের সিংহভাগ দেশের পোল্ট্রি শিল্প যোগান দিলেও নানামুখী ষড়যন্ত্র ও বিভ্রান্তির তথ্য থেকে এ শিল্প রেহাই পাচ্ছে না। ফলে পোল্ট্রি ফিডে নিম্নমান, দেশীয় মুরগি স্বাস্থ্যের জন্য ভালো, ডিম প্রতিদিন খাওয়া যাবে না, আবার প্লাস্টিকে ডিম দেশ ভরে গেছে এ রকম হাজারো বিভ্রান্তিকর তথ্য, পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে মুরগি ও ডিম আমদানি হচ্ছে এরকম ষড়যন্ত্রে আক্রান্ত দেশের পোল্টি শিল্প।

বৃহস্পতিবার (২৮ ডিসেম্বর) ক্যাবের উদ্যোগে ফুড সেফটি গর্ভানেন্স ইন পোল্ট্রি সেক্টর প্রকল্পের সূচনা অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেন।

বক্তারা বলেন, অন্যদিকে দেশীয় খামারীরা মুরগির বাচ্চা ও ফিডের অতিরিক্ত মূল্য, উৎপাদন খরচ এর তুলনায় বিক্রি মূল্য কম হওয়ায় অনেক খামারী দিনে দিনে খামার ছেড়ে দিয়ে অন্য ব্যবসায় মনোনিবেশ করছে। এ অবস্থায় দেশে নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করা, বিশেষ করে আমিষের অন্যতম যোগানদাতা পোল্ট্রি শিল্পকে ধ্বংসের হাত থেকে যেমন বাঁচাতে হবে তেমনি এ সেক্টরে বিরাজমান বিভ্রান্তি, অনিয়ম দূর করে এ সেক্টরকে নিরাপদ করা না গেলে আগামী প্রজন্ম প্রাণীজ আমিষের ঘাটতিতে পড়বে। যা দেশের জন্য খুবই ভয়াবহ হবে। তাই সংকট উত্তরণের জন্য পোল্ট্রি শিল্পের সাথে জড়িত খামারী, হ্যাচারি, খুচরা বিক্রেতা, ক্রেতা-ভোক্তা, সরকারি দায়িত্বশীল কর্মকর্তা, গণমাধ্যম কর্মী ও নাগরিক সমাজের সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।

ক্যাব কেন্দ্রিয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এসএম নাজের হোসাইনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত প্রকল্প সূচনা অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. রিয়াজুল হক জসিম, ভেটেনারি অ্যান্ড অ্যানিমেল সায়েন্স ইউনিভাসিটির ডিন অব ফেকাল্টিজ প্রফেসর এমএ হালিম, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোশেনের কাউন্সিলর আবিদা আজাদ, সরকারি হাস-মুরগি খামারের সহকারী পরিচালক ডা. অজিত কুমার সরকার, পাঁচলাইশ থানা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. সেতু ভূষণ দাশ।

ক্যাব চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাধারণ সম্পাদক কাজী ইকবাল বাহার ছাবেরীর সঞ্চালনায় প্রকল্প পরিচিতি তুলে ধরেন ক্যাব কেন্দ্রিয় কার্যালয়ের প্রজেক্ট অফিসার কৃষিবিদ মিজানুর রহমান।

আলোচনায় অংশ নেন ক্যাব মহানগরের সভাপতি জেসমিন সুলতানা পারু, ক্যাব চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা সভাপতি আলহাজ আবদুল মান্নান, দৈনিক কালের কণ্ঠের ব্যুরো প্রধান মুস্তফা নঈম, দৈনিক সুপ্রভাত বাংলাদেশের প্রধান প্রতিবেদক ভুইয়া নজরুল, প্রশিকার বিভাগীয় সমন্বয়কারী অজয় মিত্র শংকু, বৃহত্তর চট্টগ্রাম পোল্ট্রি খামারী অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক রিটন চৌধুরী, ক্যাব নেতা হারুন গফুর ভুঈয়া, সেলিম জাহাঙ্গীর, নারী উদ্যোক্তা রুখসানা আখতারুন্নবী, ক্যাব বিভাগীয় কর্মসূচি সংগঠক জহুরুল ইসলাম প্রমুখ।

সভায় বক্তারা বলেন, দেশে নব্বই দশক থেকে পোল্ট্রি শিল্পে ব্যাপক প্রসার ঘটলেও বেকার যুকবরা কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে দিনে দিনে ব্রয়লার মুরগি পালন বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠে। যার কারণে দেশের প্রাণীজ আমিষের ৪৫ ভাগ পোল্ট্রি সেক্টর পূরণ করে থাকে। কিন্তু নিম্নমানের পোল্ট্রি ফিড, মাত্রাতিরিক্ত ও অতিরিক্ত অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার, খুচরা বিক্রেতাদের অসস্বাস্থ্যকর পরিবেশে জবাই ও বিক্রি ইত্যাদি কারণে পোল্ট্রি খাদ্যকে অনিরাপদ করে তুলেছে। খামারীরা নিজের অজান্তে প্রাণিসম্পদ চিকিৎসকের পরামর্শকে বাদ দিয়ে বিভিন্ন মানহীন কোম্পানির ওষুধ ব্যবহার করছে। অধিক অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহ্ত মুরগির মাংস খাওয়ার ফলে মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে। একই সাথে স্বাস্থ্যঝুঁকির পাশাপাশি খামারীরা অহেতুক অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের কারণে উৎপাদন খরচ বাড়ছে এবং অর্থনৈতিকভাবেও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

26000993_1533837983378722_8

তারা আরো বলেন,একই সাথে পোল্ট্রি ফিড ও মুরগির বাচ্চার দাম বেশি হওয়া, মাঝে মাঝে পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে ডিম ও মুরগি আমদানি হওয়ায় দেশীয় খামারীরা পোল্ট্রির ন্যায্য দাম পাচ্ছে না। ফলে আর্থিক দেনায় পড়ে অনেক খামারী খামার বন্ধ করে অন্য ব্যবসায় মনোননিবেশ করছে। এ প্রক্রিয়াটি চলমান থাকলে দেশ আবারো প্রাণীজ আমিজের সরবরাহ জঠিলতায় পড়বে। তাই এখন প্রয়োজন পোল্ট্রি শিল্পের সাথে জড়িত খামারী, খুচরা ব্যবসায়ী, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর, গণমাধ্যম কর্মী, ক্রেতা-ভোক্তাদের নিরাপদ পোল্ট্রি উৎপাদন, বাজারজাতকরণ, সংরক্ষণ, জবাই ইত্যাদি বিষয়ে বৈজ্ঞানিক সম্মত জ্ঞান প্রদান ও সচেতনতা বৃদ্ধি করা। আরএ লক্ষ্যে ক্যাব এর উদ্যোগে ব্রিটিশ কাউন্সিলের প্রকাশ প্রকল্পের সহায়তায় সেফটি গর্ভানেন্স ইন পোল্ট্রি সেক্টর প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।

ক্যাব এর উদ্যোগে চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ রাজশাহীর পবা ও রংপুরের সদর উপজেলায় প্রাথমিকভাবে পাইলট আকারে প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়েছে। পরবর্তীতে প্রকল্পটি দেশের অন্যান্য অঞ্চলে সম্প্রসারণ করা হবে। প্রকল্প সূচনা অনুষ্ঠানে সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা, শিক্ষাবিদ, খামারী, হ্যাচারি, নারী উদ্যোক্তা, গণমাধ্যম কর্মী, ক্যাব সদস্য ও বিভিন্ন এনজিও প্রতিনিধিসহ অংশগ্রহণ করেন।

ফার্মসঅ্যান্ডফার্মার২৪ডটকম/মোমিন