প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় ডিম রাখুন, সুস্থ থাকুন

422

আন্তর্জাতিক এগ কমিশন ১৯৯৬ সাল থেকে প্রতি বছরের অক্টোবর মাসের শেষ শুক্রবার বিশ্ব ডিম দিবস হিসেবে গোষনা দেয়। এদিন সারা বিশ্বে এক যোগে পালিত হয় দিবসটি। সারা বিশ্বের ন্যায় বাংলাদেশেও নানা কর্মসুচির মাদ্যমে দিবসটি পালিত হয়। এ বছর শুক্রবার (১০ অক্টোবর) বিশ্ব ডিম দিবস পালিত হবে। এবারের প্রতিপাদ্য বিষয় “প্রতিদিন ডিম খান প্রতিদিন, ডিমের গুন অপরিসীম” প্রানিসম্পদ অধিদপ্তর, বাংলাদেশ ভেটেরিনারি এসোসিয়েশ (বিভিএ), বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিল (বিপিআইসিসি), পোল্ট্রি প্রফেশনালস বাংলাদেশ ( পিপিবি), বাংলাদেশ এনিমেল হাজবেন্ড্রী সোসাইটি, বাংলাদেশ এনিমেল হাজবেন্ড্রী এসোসিয়েশন (বাহা), দি ভেট এক্সিকিউটিভ, দেশের প্রাইভেট ভেট এসোসিয়েশন সহ নানা প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন আয়োজনের মাধ্যমে দিবসটি উদযাপন করে। ডিম সহজলভ্য প্রানিজ প্রোটিনের উৎস। ছোট থেকে বড় সকলের পছন্দের তালিকায় রয়েছে ডিম। অত্যন্ত পুষ্টিগুনাগুন সমৃদ্ধ এই ডিম। ধনী- গরিব সকলের প্রিয় খামার ডিম। একজন মানুষের দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় ডিম থাকা বাঞ্ছনীয়। ডিমের পুষ্টিগুন নিয়ে আলোচনা করা হলো।

ডিমের খাদ্য গুণ

ডিম অত্যন্ত পুষ্টিকর খাবার। ডিমে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের খাদ্য উপাদান। ডিমে যেসব খাদ্য গুণ থাকে তন্মোধ্যে ক্যালরি ৭৮, সম্পৃক্ত চর্বি ১.৬ গ্রাম, পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট ০.৭ গ্রাম, মনোআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট ২ গ্রাম, কোলেসটেরল ১৮৭ মিগ্রা ৬২%ডেইলি ভ্যালু, সোডিয়াম ৬২ মিগ্রা ২% ডেইলি ভ্যালু , পটাসিয়াম ৬৩ মিগ্রা ১%ডেইলি ভ্যালু, সর্বমোট কার্বোহাইড্রেট ০.৬ গ্রাম, সুগার ০.৬ গ্রাম, প্রোটিন ৬ গ্রাম-১২% ডেইলি ভ্যালু, ভিটামিন এ ৫% ডেইলি ভ্যালু , ভিটামিন ডি ১১%ডেইলি ভ্যালু , ভিটামিন বি-৬ ৫%ডেইলি ভ্যালু , কোবালমিন ১০%ডেইলি ভ্যালু, ক্যালসিয়াম ২%, আয়রন ৩%, ম্যাগনেসিয়াম ১%

এছাড়া আছে ভিটামিন ব-২, বি-৫, বুলেট, ভিটামিন ই ও কে, জিংক, সেলেনিয়াম। উল্লেখ্য ডিমে আছে নয়টি অত্যাবশ্যকীয় অ্যামাইনো এসিড ও লেসিথিন।

নিয়মিত ডিম খেলে কি কি উপকার হয়

ডিম দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করে। একটি বড় ডিমে রয়েছে প্রায় ২২ শতাংশ আরডিএ বা সেলেনিয়াম ।
ডিমে ওমেগা ৩ ফ্যাটি এসিড পাওয়া যায় ফলে নিয়মিত ডিম খেলে হদরোগের সম্ভাবনা কমে।
ডিমে উপস্থিত পেপটাইড উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
ডিমে ভিটামিন বি থাকায় দেহে এনার্জি যোগায় ।
ডিমে ভিটামিন বি কমপ্লেক্স থাকায় সুস্থ চুল, ত্বক, চোখ ও লিভার গঠনে সহায়তা করে।
ডিমে উপস্থিত ভিটামিন দেহের স্নায়ুতন্ত্রকে উন্নত করে এবং মাংসপেশীর উন্নয়ন ঘটায়।
মানুষের দেহে ২০ প্রকারের এমাইনো এসিডের প্রয়োজন হয়। তন্মদ্যে ১১ ধরনের এমাইনো এসিড পাওয়া গেলেও বাকি ৯ ধরনের এসিডের সহজ উৎস হলো ডিম।
ডিমে রয়েছে এন্টিঅক্সিডেন্ট লুথিন ও জেক্সাস্থিন । এই দুটি ক্যারটিনয়েড আমাদের দৃষ্টি শক্তিকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
ডিমে থাকা উপাদানগুলো আমাদের চোখের ছানি, মেকুলার পতন ও সূর্যের বেগুনি রশ্মি থেকে আমাদের চোখকে রক্ষা করে।
ডিমে উন্নতমানের ক্যালসিয়াম আছে। একটি ডিমে ৫০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম থাকে।
গবেষনায় দেখা গেছে একজন নারীর শরীরে রোজ কমপক্ষে ৫০ গ্রাম প্রোটিনের প্রয়োজন। একটি ডিমে থাকে ৭০-৮৫ ক্যালরি বা ৬.৫ গ্রাম প্রোটিন।
নিয়মিত ডিম খেলে কোলন পলিয়াপস্ ও স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধ করা যায়।
ডিমে রয়েছে আয়রণ, জিঙ্ক ও ফসফরাস । মহিলাদের মেনস্ট্রয়েশনের / পিরিয়ডের জন্য অনেক সময় অ্যানিমিয়া/রক্তসল্পতা দেখা দেয়। এতে শরীর দ্রুত ক্লান্ত হয়ে পয়ে পড়ে। ডিমে থাকা আয়রন এ ঘাটতি পূরন করতে পারে সহজেই।
ডিম মতিষ্কের উন্নতি ঘটায় ।
ডিমে উপস্থিত ফোলেট গর্ভবতী মহিলাদের ত্রুটিমুক্ত সন্তান জন্মদানের ঝুকি কমায়।
ডিমে উপস্থিত লৌহ শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং লোহিত রক্ত কনিকার পরিমান বৃদ্দি করে।
ডিম খেলে টাইপ-২ ডায়াবেটিকস এর ঝুকি কমে।
আসুন আমরা প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় ডিম রাখি ।

লেখক: ডা. মো. মুস্তাফিজুর রহমান (পাপ্পু)
ভিভিএম, এম এস ইন ভেট প্যাথলজি পবিপ্রবি সহ- সাধারন সম্পাদক,
বাংলাদেশ ভেটেরিনারি এসোসিয়েশন, বিভিএ, খুলনা বিভাগ।

ফার্মসএন্ডফার্মার/০৯অক্টোবর২০