প্রতিবেশীর রোষাণলে হাঁসের খামার নিয়ে বিপাকে তরুণ উদ্যাক্তা কবির

387

হাঁস002

ইলিয়াস আরাফাত, স্টাফ রিপোর্টার : তরুণ উদ্যোক্তা উচ্চশিক্ষিত কবির আহম্মেদ। বয়স মাত্র ৩০ বছর। ইতোমধ্যে তিনি মাছচাষে হয়েছেন সফল। তিনি তার সৃষ্টিশীল প্রতিভাকে আরও বিকশিত করতে চান। এরই ধারাবাহিকতায় মাস ছয়েক আগে মোটা অঙ্কের বিনিয়োগে গড়ে তুলেছেন হাঁসের খামার।

রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার কলন্টিয়া বিলে খামারটি একনজর দেখার জন্য প্রতিদিন বাড়ছে আগ্রহী মানুষের ভিড়।

কিন্তু উদ্যোক্তা কবিরের এ স্বপ্ন বাস্তবায়নে বাধ সেধেছেন তার এক প্রতিবেশী। পরিবেশ দূষণের অভিযোগ এনে সংশ্লিষ্ট অধিদফতরে করেছেন অভিযোগ। ফলে প্রতিবেশীর রোষাণলে পড়ে একটি বড় হাঁসের খামারের স্বপ্ন আদৌ সফল হবে কি না- এটি নিয়ে চরম আশঙ্কার মধ্যে রয়েছেন। মোটা অঙ্কের অর্থ বিনিয়োগ করে দেখছেন অন্ধকার। খামারটি রক্ষার জন্য তিনি দুর্গাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে কাছে লিখিত আবেদন জানিয়েছেন।

শনিবার বিকেলে কলন্টিয়া বিলে গিয়ে দেখা গেছে, পাশাপাশি তিনটি সেডে হাঁসের কোলাহল। পাশে রয়েছে একটি বিশাল চাতাল। চাতালে রাখা হয়েছে খাদ্যদ্রব্যের জন্য বেশকিছু পাত্র। সেসময় খামারের শ্রমিকরা খাবার দেবার জন্য নিচ্ছিলেন প্রস্তুতি। তিনটি সেডের গেট খোলার সাথে সাথে হাঁসগুলো খাবারের পাত্রের কাছে পৌঁছানোর জন্য একে অপরের সাথে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হল। মুহূর্তের মধ্যে চাতালটি হাঁসে পরিপূর্ণ হয়ে গেল।

সেখানেই ছিলেন খামারের মালিক কবির আহম্মেদ। তিনি ফার্মসঅ্যান্ডফার্মারকে জানান, পিকে হাঁসের খামার নামে গত ছয়মাস আগে তিনি কাজ শুরু করেন। এরপর প্রথম পর্যায়ে খাকি ক্যাম্বেল জাতের ৫ হাজার ছয়শ হাঁসের বাচ্চা খামারে তোলেন। বর্তমানে হাঁসগুলোর বয়স চারমাস। এর মধ্যে ছয়শ হাঁস মারা গেছে। আর এক থেকে দেড়মাস পরেই হাঁসগুলো ডিম দিতে শুরু করবে।

রাষ্ট্রবিজ্ঞানে মাস্টার্স করা উচ্চশিক্ষিত এ তরুণ উদ্যোক্তা বলেন, রাজশাহীতে বড় ধরনের হাঁসের খামার নেই। আমি অর্ধলাখ হাঁসের এরকম একটি বড় খামার করতে চাই। আর এরকম একটি স্বপ্ন নিয়েই ১৫ বিঘা জমি লিজ নিয়েছি। পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি চেয়েছি। এছাড়া গত ৫ মে পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর ব্যাংকের মাধ্যমে পাঁচ হাজার টাকা চালান করেছি।

তিনি বলেন, ইতোমধ্যে তিনটি সেড নির্মাণ করেছি। প্রতিদিন খামারে ১৬ জন শ্রমিক কাজ করেন। জমির লিজ, সেড নির্মাণ, বাচ্চা, শ্রমিকের মজুরিসহ বিভিন্ন খাতে এ পর্যন্ত ২৭ লাখ টাকা ব্যয় করেছি। ডিম দেয়া পর্যন্ত এ ব্যয় আরও বাড়বে। তবে ডিম পেতে শুরু করলে তখন আর অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতা থাকবে না।হাঁক001

আক্ষেপের জায়গা থেকে কবির ফার্মসঅ্যান্ডফার্মারের এ প্রতিবেদককে বলেন, আমি চাই- আমার দেখাদেখি এ অঞ্চলের তরুণরা এগিয়ে আসুক। রাজশাহী অঞ্চলে হাঁসের খামারের সংখ্যা বৃদ্ধি পাক। কিন্তু বাধ সেধেছেন আমার প্রতিবেশী নারী আনজুয়ারা। খামার থেকে তার বাড়ি তিনশ মিটার দূরে। খামারটির অবস্থান বিলের মধ্যে হলেও তিনি পরিবেশ অধিদপ্তর রাজশাহীর আঞ্চলিক কার্যালয়ে পরিবেশ দূষণের অভিযোগ করেছেন। ইতোমধ্যে সোনালী এবং ব্রাক ব্যাংকের কাছ থেকে ঋণ নিয়েছি। ফলে আমার আয়ের শেষ সম্বলটুকুও বিনিয়োগ করে চোখে অন্ধকার দেখছি।

বক্ত্যবের জন্য অভিযোগকারী আনজুয়ারার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু ফোন ধরেন তার মেয়ে তানভিন আক্তার রোকসানা। তিনি বলেন, মা নেই। বাইরে আছেন। তবে পরিবেশ দূষণ হচ্ছে বলে দাবি করেন তিনি। বলেন, খামারের কারণে প্রচ- রকমের দুর্গন্ধ হচ্ছে। বিশেষ করে রাতে বেশি। একারণে আমরা খেতে পারছি না। অসুস্থ হয়ে পড়েছি। আমরা অবিলম্বে খামারটি অন্যত্র স্থানান্তরের দাবি জানাচ্ছি।

এদিকে আনজুয়ারার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে পরিবেশ অধিদপ্তর রাজশাহী কার্যালয়ের পরিদর্শক আজাহারুল ইসলাম গত ৭ জুলাই কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছেন। গত ২১ জুলাই খামার মালিক কবির পরিবেশ অধিপ্তর রাজশাহীর উপপরিচালকের কাছে জবাব দাখিল করেছেন।

এ ব্যাপারে উপপরিচালক মামুন অর রশিদ বলেন, আমরা এলাকাটি পরিদর্শন করেছি। খামারটিতে বড় ধরনের বিনিয়োগ করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে বিবেচনা করা হচ্ছে। সময় সাপেক্ষে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে। খামার মালিক যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হন সে ব্যাপারটি আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্বের সাথে দেখব বলে মন্তব্য করেন এ কর্মকর্তা।

ফার্মসঅ্যান্ডফার্মার২৪ডটকম/ মোমিন