ফরিদপুরে বিভিন্ন এলাকার পাটক্ষেতে দেখা দিয়েছে ঘোড়া পোকার আক্রমণ। এতে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে পাটক্ষেত ফলে হতাশায় ভুগছে পাট চাষিরা।
পাট চাষিদের দাবী, ঘোড়া পোকার আক্রমণ ও পর্যাপ্ত বৃষ্পিাতের অভাবে এ বছর পাটের আবাদ ব্যহত হতে পারে। যদিও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর মনে করছে এতে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে তেমন কোন প্রভাব পড়বেনা।
জানা গেছে, পাট উৎপাদনের দিক থেকে দেশে ফরিদপুর জেলার অবস্থান এক নম্বরে। আবহাওয়া ও মাটি সবকিছুই পাটের আবাদের জন্য উপযোগী। ফরিদপুরে ভালো মানের ও উন্নতজাতের পাট উৎপাদন হয় বলে এ জেলাকে ‘পাটের রাজধানী’ও বলা হয়। কিন্তু দীর্ঘ সময়ের তীব্র প্রখর খরা, মৌসুমে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাতের অভাব ও পোকার আক্রমণে পাটের ডগা ঝরে পড়া, পাট শুখিয়ে নষ্ট হচ্ছে, এতে ফলন কমে যাওয়ার শংকায় রয়েছেন চাষীরা। এছাড়া পোকার আক্রমন থেকে পাট বাচতে নানা ধরণের কীটনাশক ব্যবহার করায় বাড়ছে উৎপাদন অতিরিক্ত খরচও।
জেলার সালথা, নগরকান্দা ও বোয়ালমারী উপজেলার বেশ কয়েকটি মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, এসব মাঠের বিভিন্ন জমিতে ঘোড়া পোকার আক্রমণ দেখা গেছে। পোকা পাটের আগার পাতা খেয়ে ফেলছে। এতে পাটের আগা ভেঙে পড়ছে। ফলে পাট বড় হচ্ছে না। কান্ড থেকে ছোট ছোট শাখা বের হচ্ছে। অনেক স্থানে বিছা ও ছানা পোকা পাটের পাতা খেয়ে ফেলছে। আবার প্রখর খরার কারণেও শুখিয়ে যাচ্ছে পাট। কোথাও কোথায় চাষিরা সেচ দিয়ে পাটের ফলন স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করছেন।
সালথার পাট চাষি মোঃ ইখলাস শেখ বলেন, এই তীব্র খরার পাট শুখিয়ে যাচ্ছে। ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। ছানা পোকা ও বিভিন্ন পোকায় পাটের পাতা ও ডগা খেয়ে ফেলছে। এবার পাট হওয়া নিয়ে টেনশনে আছি। আমরা খুব বিপদের মধ্যে আছি।
আরেক চাষি রাম চন্দ্র মন্ডল বলেন, পাটে পোকার আক্রমণ বেড়েছে। পাট নিয়ে আমরা খুব চিন্তার মধ্যে আছি। এবার যে কি হবে তাই ভাবতেছি।
এ বিষয়ে বোয়ালমারী উপজেলার দাদুড়িয়া মাঠের পাট চাষি ইসরাফিল খান বলেন, আমরা সেচ দিয়ে পাটের আবাদ করছি। সার ঔষধ দিয়েছি। আবার সেচ দিতে হবে। বড় সমস্যা হচ্ছে পাট খেতে পোকা ধরেছে। ঔষধ দিতে হচ্ছে। পোকার কারনে প্রতি একরে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকার ঔষধ দিতে হচ্ছে। এতে বাড়তি খরচ হচ্ছে। প্রতি একরে এবার প্রায় ৩ হাজার ৫০০ টাকা থেকে ৪০০ হাজার টাকা খরচ ছাড়িয়ে যাবে বলে ধারণা করেন তিনি।
নগরকান্দার পাট চাষি খবির উদ্দিন বলেন, সেচ, সার, ঔষধ ও শ্রমিকের বাড়তি খরচে এবার উৎপাদন খরচ বেড়ে যাচ্ছে, কিন্তু পাটের ন্যয্যমূল্য পাবো কিনা তা নিয়ে সংশয়ে আছি।
এ ব্যাপারে সালথা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা, কৃষিবিদ জীবাংশু দাস বলেন, আমাদের কৃষি উপ-সহকারী কর্মকর্তারা পাট চাষিদের পোকা দমনের জন্য প্রতিনিয়ত পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন। পাট আরো একটু বড় হলে এই ধরনের সমস্যা থাকবে না।
আর ফরিদপুর কৃষি সম্প্রদারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক জিয়াউল হক বলেন, চলতি মৌসুমে এখন পর্যন্ত ফরিদপুরে ৭৭ হাজার ১০৩ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে। যা এখনও চলমান। এবার এ জেলায় পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৮৭ হাজার ৪৭৫ হাজার হেক্টর জমিতে পাটের আবাদের। তিনি আরও বলেন, বৃষ্টি হলে পোকা ঝড়ে পড়বে। পোকা ধরা চলমান একটা সমস্যা। তবে প্রখর খরার কারনে পোকার আক্রমণ বাড়তে পারে। তবে তা লক্ষমাত্রা অর্জনে খুব বেশী প্রভাব পড়বে না।
ফরিদপুরের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরামর্শ মতে, ঘোড়া পোকার আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে ক্ষেতে বাঁশ বা গাছের ডাল পুতে পাখি বসার ব্যবস্থা করতে হবে। পাখিরা পোকা খেয়ে পোকা দমনে সাহায্য করে। পোকার আক্রমণ অধিক হলে ক্ষেতে কীটনাশক ঔষধ যেমন হেজিনন ৬০ইসি ১.৫মিলি লিটার পানি, ইমিডাকোলর ১০ ডব্লিউপি ১.৫গ্রাম প্রতি লিটার পানি, সেভিন ৮৫এসপি ০.৫মিলি প্রতিলিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করলে এই পোকা দমন করা যায়।