ফলন কম হ‌লেও ভালো দাম পেয়ে খুশি মানিকগঞ্জের পাট চাষিরা

989

পাট01

মো. সো‌হেল রানা খান, মা‌নিকগঞ্জ থেকে: মানিকগঞ্জে গতবা‌রের চে‌য়ে পাটের চাষ ও ফলন কম হলেও ভালো দাম পেয়ে মু‌খে হাসি ফুটেছে জেলার পাট চাষিদের মুখে।

‌জেলার ৭টি উপ‌জেলার হাটগু‌লো‌তে এখন নতুন পা‌টের সমারহ। কৃষকরা নতুন পাট বিক্রি ক‌রে বাড়তি দাম পেয়ে কৃষকদের মধ্যে উৎসবের আমেজ সৃষ্টি হয়েছে। আবার পাটকা‌ঠির ব্যাপক চা‌হিদা র‌য়ে‌ছে এলাকায়। বিঘাপ্রতি ৫ থে‌কে ৬ হাজার টাকার পাটখড়ি বি‌ক্রি ক‌রে অতিরিক্ত টাকা আয় হ‌চ্ছে।

মানিকগঞ্জ জেলার ৭টি উপ‌জেলায়ই এক সময় সোনালি আঁশ খ্যাত পাটের ব্যাপক আবাদ হতো। হাজার হাজার মন পাট জেলার বৃহত্তম ঘিওর, সাটু‌রিয়া, বরংগাইল, তরাসহ প্রত্যন্ত গ্রা‌মের হাটগু‌লো‌তেও কেনাবেচা হতো। মা‌নিকগ‌ঞ্জের পাটের মান ভালো হওয়ায় দেশের বিভিন্ন এলাকায় এর চাহিদা ছিল অনেক।

মানিকগঞ্জের ৭টি উপজেলার হাটবাজার ও বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ব্যবসায়ী ও আড়তদাররা পাট কি‌নে ট্রাকে বা বড় বড় নৌকায় ক‌রে নারায়ণগঞ্জ, খুলনা, ফরিদপুর, রাজবাড়ি সহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাট বি‌ক্রি কর‌তো। এ অঞ্চলের জলবায়ু পাট চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী আর ব্যাপক নদী, নালা, খাল, বিলের পানিতে পাট জাগ দেয়া, পাটের আশ এবং রঙ ভালো হওয়ায় তুলনামূলক পাটের চাহিদা ভালো।

ক‌য়েক বছর আগে পাট চা‌ষে সার, বীজ, কীটনাশক, সেচ ও শ্রমিকের মজুরি বৃদ্ধির ফলে উৎপাদিত খরচ এর চে‌য়ে দাম কম পাওয়ায় সাধারণ কৃষকেরা পাটের চাষ ক‌মি‌য়ে দি‌চ্ছিল। সরকার সার, চাল, চিনি, সিমেন্ট, ফসলের বীজসহ বিভিন্ন পণ্য বাজারজাতকরণের জন্য পাটের তৈরি ব্যাগ ব্যবহারের ওপর বাধ্যবাধকতা আরোপ করায় পা‌টের চা‌হিদা বাড়‌ছে।

পাট003

মা‌নিকগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূ‌ত্রে জানা গে‌ছে, জেলায় গত বছরের তুলনায় এ বছর পাটের আবাদ কম হয়েছে। গত বছর মানিকগঞ্জে দেশি পাট ৭শ ১৭ হেক্টর এবং তোষা ৪ হাজার ৪শ হেক্টর মেস্তা ২৭ হেক্টর মোট ৫ হাজার ১শ ৭১ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়। আর এ বছর দেশি ৫শ ৫৬ হেক্টর এবং তোষা ২ হাজার ৯শ ৫৬ হেক্টর এবং মেস্তা ১৬ হেক্টর, মোট ৩ হাজার ৫শ ২৮ হেক্টর জমিতে আবাদ করা হয়।

জেলার সাটু‌রিয়ায় নওগা গ্রা‌মের কৃষক আ. র‌শিদ জানায়, এবার ৫০ শতাংশ জ‌মি‌তে পা‌টের আবাদ ক‌রে‌ছিলাম। জমির পাট কে‌টে বি‌ক্রি ক‌রে‌ছি। প্রতি মণ পা‌টের দ‌াম পে‌য়ে‌ছি ২২শ টাকা ক‌রে। পা‌টের ফলন কম ও পা‌নি সংক‌টে পাট কে‌টে জাগ দেওয়া‌তে কিছুটা সংকট হ‌লেও পা‌টের দাম বে‌শি হওয়া‌তে লাভব‌ান হ‌য়ে‌ছি। আবার পা‌টের খ‌ড়ি (কা‌ঠি) আলাদা ১২ হাজার টাকা বি‌ক্রি ক‌রে‌ছি। প্রতিবার য‌দি পা‌টের এ রকম ভাল দাম পাওয়া যায় ত‌বে পাট চাষে এলাকার কৃষকদের আগ্রহ আরো বাড়‌বে।

মা‌নিকগ‌ঞ্জের কৃষ্ণপুর গ্রামের পাট চাষি আজাহার জানায়, এবার ৪ বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছি মৌসুমের শুরুতে বৃষ্টিপাত হওয়ায় জমিতে জো আসার সাথেই বীজ রোপণ করেছিলাম। নিড়ানী, পরিচর্যা, আগাছা দমন, সার, বীজ, কীটনাশক, পাট কাটা, ধোয়াসহ প্রতিবিঘা পাটে খরচ হয়েছে প্রায় ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা। প্রতি বিঘায় পা‌টের আবাদ হ‌য়ে‌ছে ৬ থে‌কে ৭ মণ। পাটের বাজার মূল্য ভাল থাকায় বিঘাপ্রতি প্রায় ৭/৮ হাজার টাকা লাভ হ‌য়ে‌ছে।

সাটু‌রিয়ার পা‌টের ব্যবসায়ী (বেপারী) উত্তম সাহা জানায়, পা‌টের দাম বর্তমান বাজা‌রে বে‌শি। পাট প্রকার ভে‌দে ১৮শ টাকা থে‌কে ২২শ টাকা মন ক‌রে ক্রয় কর‌ছি। ত‌বে আমরা যেখা‌নে পাট বি‌ক্রি কর‌বো সে জায়গায় পাট পাঠা‌তে ম‌ণে আরো ১৫০ টাকা খরচ হ‌বে। আর এখন ভাল দাম না পে‌লে পাট কি‌নে মজুদ ক‌রে রে‌খে ক‌য়েক মাস প‌রে বি‌ক্রি কর‌বো।

পাট

মা‌নিকগ‌ঞ্জের পাট ব্যবসায়ী মো. শরিফুল ইসলাম জানায়, বর্তমান বাজারে প্রতিমন দেশি পাট ১ হাজার ৮শ থেকে ২ হাজার ২শ টাকা এবং তোষা পাট ২ হাজার ২শ থেকে ২ হাজার ৪শ টাকা ক‌রে বিক্রয় হচ্ছে। বিভিন্ন মিলে পাটের চাহিদা থাকায় চাষিদের পাশাপাশি ব্যবসায়ীরাও লাভবান হচ্ছে।

মা‌নিকগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তররের জেলা প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা নাজমুল হক জানায়, গত বছরের তুলনায় মা‌নিকগ‌ঞ্জে এ বছর পাটের আবাদ কম হয়েছে। আবহাওয়া পরিবেশ অনুকুলে না থাকার এবার ফলনও কম হয়েছে। ত‌বে বাজা‌রে ভাল দাম পা‌চ্ছে কৃষক।

ফার্মসঅ্যান্ডফার্মার২৪ডটকম/মোমিন