ফলন বাড়ানোর জন্য সার ও কীটনাশক ব্যবহার, ঝুঁকির মুখে কৃষি

1008

syes shishir pics02
কৃষি জমিতে ফলন বাড়ানোর জন্য মাত্রাতিরিক্ত সার ও উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন কীটনাশক ব্যবহার করে। ফলে প্রতিনিয়ত ঝুঁকির মুখে পড়ছে উপকূলীয় এলাকার কৃষি। তবে কী পরিমাণ মাটি ও পরিবেশের ক্ষতি হয়েছে তার সঠিক কোনো পরিসংখ্যান পাওয়া যায়নি। এক্ষেত্রে এখনই সরকারকে কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানান সংশ্লিষ্টরা।

পটুয়াখালীতে নগরায়নের ফলে দিন দিন কমছে কৃষি জমির পরিমাণ। এরপরও জেলায় ২ লাখ ৩ হাজার ৬০১ হেক্টর জমিতে উচ্চ ফলনশীল জাতের বীজ ব্যবহার করে বিভিন্ন রকম ফসলের চাষাবাদ করে চাষিরা।

বিশেষজ্ঞরা জানান, গাছ বাড়ার জন্য ১৭টি মৌলিক পুষ্টি উপাদানের প্রয়োজন হয়। এসব পুষ্টি উপাদানের কিছু (হাইড্রোজেন, অক্সিজেন ও কার্বন) আসে পানি ও বাতাস থেকে। বাকি ১৪টি (নাইট্রোজেন, ফসফরাস, পটাশিয়াম, গন্ধক, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, ক্লোরিন, লৌহ, ম্যাঙ্গনিজ, বোরন, দস্তা, তামা, মলিবডেনাম, কোবাল্ট) আসে মাটি থেকে। ১৯৫০ সালের পর থেকে মাটিতে মৌলিক পুষ্টি উপাদানের অভাব দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যে আমাদের মাটির ৬-৭টি মৌলিক পুষ্টি উপাদানের অভাব দেখা দিয়েছে। আগামী ২০-৩০ বছর পর আরও ৩-৪টি পুষ্টি উপাদানের অভাব দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এর ফলে বেশি ফলন পাওয়ার অভাব দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সূত্রমতে, ২০১০ সালে পটুয়াখালী জেলায় কৃষি জমির পরিমাণ ছিল ২ লাখ ১৩ হাজার ৬শ হেক্টর। ২০২০ সালে কৃষি জমির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৩ হাজার ৬০১ হেক্টরে। গত ১০ বছরে বিভিন্ন নগরায়নের ফলে জেলায় আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ কমেছে ১০ হাজার হেক্টর।

অনিয়ন্ত্রিত মাত্রায় রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহারের ফলে মাটির ক্ষতি হচ্ছে। বাংলাদেশের আবাদযোগ্য মাটির কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তার ওপর এখন পর্যন্ত কোনো গবেষণা হয়নি। এ ক্ষতি পুষিয়ে আনতে গবেষণা দরকার বলে মনে করেন পটুয়াখালী মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের (এসএসও) মো. মামুন।

পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাটি বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আসাদুল হক জানান, সার বেশি পরিমাণে ব্যবহার মারাত্মক সমস্যা। মাটিতে একটি সার বেশি পরিমাণে ব্যবহার করলে অন্য সার গ্রহণের পরিমাণ কমে যায়। যদি মাটিতে ওই উপাদান বেশি থাকে তখন গ্রন কমে যায়। ওই খাবার যখন মানুষ খায়; তখন মানুষের শরীরে পুষ্টির সমস্যা দেখা দেয়। কীটনাশক একটি সমস্যা। মাটিতে কীটনাশক ব্যবহারের ফলে ক্ষতিকারক পোকাসহ উপকারী অনুজীব মারা যায়।

তিনি আরও জানান, দক্ষিণ অঞ্চলের কৃষকরা ধানের খড় জমিতে রেখে আসে। এ খড় মাটিতে মিশিয়ে দেওয়া যায়। তবে ইতোমধ্যে যেসব মাটিতে পুষ্টি উপাদানের অভাব দেখা দিয়েছে, তা অনেক অংশে কমে যাবে।

পটুয়াখালী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক হৃদয়েশ্বর দত্ত বলেন, ‘কৃষকরা জৈব সারের চেয়ে রাসায়নিক সার বেশি ব্যবহার করে। তবে জৈব সার ব্যবহারে কৃষকরা উদ্বুদ্ধ হয়, তার জন্য আমরা কাজ করছি। এ অঞ্চলে কীটনাশক ব্যবহার হয়। কৃষকরা সচেতনতার অভাবে অনিয়ন্ত্রিতভাবে কীটনাশক ব্যবহার করে। পরিমিত মাত্রায় যাতে কীটনাশক ব্যবহার করে, তার জন্য কৃষি বিভাগ কাজ করছে।

ফার্মসএন্ডফার্মার/২৪জানু২০২০