ফলি মাছের কৃত্রিম প্রজনন ও পোনা উৎপাদনে করণীয় সম্পর্কে অনেক মাছ চাষিরাই জানেন না। আমাদের দেশে মাছ চাষ একটি জনপ্রিয় পেশা। মাছ চাষ করে অনেক বেকার যুবকরা স্বাবলম্বী হচ্ছেন। আমাদের দেশে মাছের প্রাকৃতিক উৎস দিন দিন কমে আসছে। বিশেষ করে আমাদের প্রিয় মাছগুলি বিলুপ্ত হওয়ার পথে। এসব মাছের মধ্যে ফলি মাছ অন্যতম। এসব মাছের উৎপাদন টিকিয়ে রাখতে কৃত্রিম প্রজননের বিকল্প নেই। আসুন জেনে নেই ফলি মাছের কৃত্রিম প্রজনন সম্পর্কে-
ফলি মাছের কৃত্রিম প্রজননঃ
ফলি মাছের কৃত্রিম প্রজননের জন্য ডিমের পরিপক্কতার সম্পর্কে জানা অত্যন্ত জরুরী। সাধারণত ফলি মাছ মে-জুন মাসে প্রজনন করে থাকে। প্রকৃতিক পরিবেশে ফলি মাছ জলজ আগাছা অর্থ্যাৎ ঘাস ও লতাপাতার উপর ডিম দিয়ে থাকে। এর ফলে প্রাকৃতিক উৎস থেকে একসাথে অধিক পোনা বা ডিম সংগ্রহ করা কঠিন হয়ে পড়ে।
প্রজননের উপযোগী মাছঃ
কৃত্রিম প্রজনন উপযোগী স্ত্রী ও পুরুষ মাছকে সনাক্ত করার প্রধান উপায় হলো পৃষ্টপাখনার কাঁটা। প্রজননক্ষম পুরুষ এবং স্ত্রী মাছকে সনাক্ত করে পরবর্তী ধাপে যেতে হবে।
পোনা উৎপাদনঃ
ফলি মাছের কৃত্রিম প্রজননের জন্য প্রজনন মৌসুমের শুরুতে স্ত্রী এবং পুরুষ মাছকে ভিন্ন ভিন্ন পুকুরে মজুদ করতে হবে। মাছের ওজনের ৫% থেকে ৩% হারে সম্পূরক খাদ্য দিতে হবে। মে থেকে জুন মাস পর্যন্ত সাধারণত ফলি মাছ প্রজনন করে থাকলেও জুন মাসের মাঝামাঝি হলো সর্বোচ্চ প্রজননের সময়। প্রজনন মৌসুমে মাছ পরীক্ষা করে প্রজননক্ষম মাছ নির্বাচন করতে হবে। প্রথমত জননাঙ্গ পর্যবেক্ষণ করে স্ত্রী এবং পুরুষ মাছকে সনাক্ত করতে হবে।
ফলি মাছের প্রজনন মৌসুমে স্ত্রী মাছের পেট পরিপক্ক ডিমের জন্য ফোলা থাকে ও নরম থাকে। পেটের দুইপাশ অনেকটা সুপারির আকার ধারণ করে। কৃত্রিম প্রজননের জন্য পুরুষ এবং স্ত্রী ফলি মাছের পৃষ্টপাখনার নীচে পিজি দ্রবনের ইনজেকশন প্রয়োগ করা হয়ে থাকে।
ইনজেকশন দেওয়ার ২৪ ঘন্টা পর পুরুষ মাছকে কেটে গোনাড সংগ্রহ করে টুকরা টুকরা কেটে ০.৮% লবণ দ্রবণে মিশিয়ে শুক্রাণুর দ্রবণ তৈরী করা হয়ে থাকে। এরপর চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে স্ত্রী মাছ থেকে ডিম সংগ্রহ করে শুক্রাণু দ্বারা নিষিক্ত করা হয়। তাপমাত্রার ওপর নির্ভর করে নিষিক্ত ডিম থেকে ৩ থেকে ৪ দিন পর রেণু পোনা বের হয়।
এর ২ থেকে ৩ দিন পর জার থেকে রেণু পোনাগুলো ট্রেতে নেওয়া হয় এবং সেখানে ১৫ দিন পালন করা হয়ে থাকে। ডিম প্রস্ফুটিও হওয়ার ৪ থেকে ৫ দিন পর ডিম্বথলি নিঃশেষিত হওয়ার পর রেণু পোনাকে প্রতিদিন ৪ বার এবং ৬ ঘন্টা পর পর ডিমের কুসুম খাওয়াতে হয়।
ফার্মসএন্ডফার্মার/ ১০ জুলাই ২০২১