ফলের পরিপক্কতা চেনার সহজ উপায়

2317

কৃষিবিদ মোহাইমিনুর রশিদ: ফলের পরিপক্কতা বলতে ফলের বৃদ্ধি ও বিকাশ স্তরের এমন এক পর্যায়কে বুঝানো হয় যখন ফলের শারীরতাত্ত্বীয় বৃদ্ধির সর্বোচ্চ পর্যায় যার পরে ফলের বৃদ্ধি থেমে গিয়ে ফল পাকার দিকে ধাবিত হয়। সাধারণত ফল পরিপুষ্ট হলে কিছু শারীরতাত্ত্বীয় গুণাবলীর পরিবর্তন হয়ে খাওয়ার উপযোগী হয়ে ওঠে। ফলের পরিপক্কতা ফল সংগ্রহ ও পরবর্তী ব্যবস্থাপনাগুলো সম্পাদনের সিদ্ধান্ত নিতে সহযোগিতা করে। সঠিক সময় ফল সংগ্রহ করলে ফলের স্বাদ, গন্ধ, বর্ণ ঠিক থাকে এমনকি এর বাজারজাত ব্যবস্থাপনাও ভালোভাবে করা যায়। সর্বোপরি ফলের গুণগতমানও খুব ভালো থাকে। ফল পরিপক্ক হওয়ার কতগুলো বৈশিষ্ট্য থাকে; আসুন, এবার জেনে নিই-ফল পরিপক্কতার সনাক্তকারী বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ ধারণা।

আম পরিপক্ক হওয়ার সনাক্তকারী বৈশিষ্ট্য

আম পরিপক্ক
জাতভেদে আমের রঙ ও আকার বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে। তবে অধিকাংশ আমের ক্ষেত্রে সবুজ রঙ পরিবর্তন হয়ে হালকা হলুদ বা কমলা হলুদ বর্ণ ধারণ করে। আমের কাধ বরাবর বৃদ্ধি লক্ষ্যণীয়ভাবে প্রশস্থ হবে। কোনো কোনো আমের জাতের ফলত্বক ডট ডট বা বিন্দু বিন্দু চিহ্ন স্পষ্টভাবে বুঝাবে। পরিপক্ক ফলের আটি পরিপূর্ণভাবে গঠিত ও শক্ত হবে। আম কাটলে আটি বরাবর ক্রিম বা হলদেটে রঙ দেখা যায়। কিছু কিছু জাতের আমের বাইরের ত্বক খসখসে থেকে মসৃণ অবস্থার দিকে যায়। আবার কিছু আমের জাতের বাইরের ত্বকে মোমের হালকা সাদাটে আবরণ দেখা যায়। পরিপক্ক আমে কষের প্রবাহ ঘণ হবে। গাছ থেকে প্রাকৃতিকভাবেই পরিপক্ক দু’চারটি পাকা ফল পড়তে শুরু করবে। পানিতে পাকা আম ডুবে যায় কিন্তু কাঁচা আম পানিতে ভেসে থাকে। ল্যাংড়া জাতের আম কাঁচা পাকা সবসময়ই পানিতে ভেসে থাকে।

লিচু পরিপক্কতার সনাক্তকারী বৈশিষ্ট্য

লিচু পরিপক্ক
লিচুর ফলত্বক সমানভাবে লাল বর্ণের হবে। ফলত্বকের কাটাগুলো চ্যাপ্টা হয়ে খোসার প্রান্ত ক্রমশ মসৃণ হবে। ফলের বীজ পুরোটাই এরিল দ্বারা আবৃত হয়। ফল খেতে মিষ্টি লাগবে।

কলা পরিপক্ক হওয়ার সনাক্তকারী বৈশিষ্ট্য

কলা পরিপক্কতা
পরিপক্ক কলার গায়ের রঙ গাঢ় সবুজ থেকে হালকা সবুজ হওয়া শুরু হয়। কলার প্রান্ত কোণাকার আকৃতি হতে কিছুটা গোলাকার আকার ধারণ করে। কলার ফলের মাথায় লেগে থাকা শুকনা ফুলের অংশ বিশেষ খুব সহজেই ঝরে পড়ে। খাটো জাতের কলার ক্ষেত্রে গাছ লাগানোর সাধারণত ১১ থেকে ১৪ মাস পর এবং লম্বা জাতের কলার ক্ষেত্রে ১৪ থেকে ১৬ মাস পর কলা সংগ্রহ করা যায়। কলাগাছে ফুল বা মোচা আসার ১২০ থেকে ১৪০ দিন পর কলা সংগ্রহ করা যায়। তাছাড়া কলাগাছের শীর্ষ পত্রটি শুকাতে আরাম্ভ করে। কার্বাইড দিয়ে পাকানো কলার গলা বা বোঁটার অংশ সবুজ বর্ণের থেকে যায়। তবে সনাক্তকারী বৈশিষ্ট্য হলো কলার প্রান্ত গোলাকার রূপ ধারণ করাই কলা পরিপক্ক হওয়ার মূল লক্ষণ।

পেঁপে পরিপক্কতার বৈশিষ্ট্য

পেঁপে পরিপক্ক
পেঁপে ফলের রঙ সবুজ হতে হালকা সবুজ বা হলুদাভ হয়। তাছাড়া বোঁটা কাছের দিকে সবুজ রঙ হালকা হয়ে হলদে রঙ এর আভা দেখা দেয় তখন পেঁপে গাছ থেকে পাড়ার উপযুক্ত হয়। অপরিপক্ক ফলের কষ বেশ আঠালো, ঘন এবং দুধের মত সাদা রংয়ের হয়। পরিপক্ক ফলের গায়ে আচর কাটলে পানিরমতো পাতলা সাদা কষ বের হয়। সাধারণত ফুল ফোটার পর ১২৫ থেকে ১৪০ দিন পর পরিপক্ক হবে।

পেয়ারা পরিপক্কতার সনাক্তকারী বৈশিষ্ট্য

পেয়ারা পরিপক্ক
ফল দেখতে ডাসা ডাসা মনে হবে। ফলের বর্ণ গাঢ় সবুজ হতে হালকা সবুজ হবে। ফলত্বক মসৃণ এবং কাধ প্রশস্ত হবে।

আনারস পরিপক্কতার সনাক্তকারী বৈশিষ্ট্য

আনারস পরিপক্কতা
পরিপক্ক অবস্থায় আনারসের ওজন ও অম্লত্বের পরিমাণ বেড়ে যায়। ফুল আসা থেকে ফল পাকার সময় পর্যন্ত মোটামুটি ১ শ’ ১০ দিন সময় লাগে। ফলের গোড়ার দিকের রঙ যখন সবুজ থেকে হলদে অথবা হালকা বাদামি রঙ এ পরিণত হয় তখনই সাধারণত গাছ থেকে আনারস তোলা হয়।

সাইট্রাস ফল পরিপক্কতার সনাক্তকারী বৈশিষ্ট্য

সাইট্রাস ফল পরিপক্কতা
সাইট্রাস ফলের মধ্যে লেবু ও রাইম জাতীয় ফলের পরিপক্কতা আসা নির্ভর করে রসের পরিমাণের ওপর। তাছাড়া কমলা জাতীয় ফলের পরিপক্কতা মূলত দ্রবণীয় কঠিন পদার্থ, অম্লত্ব এবং এ দু’টোর আনুপাতিক মাত্রার ওপর নির্ভর করে।

সাম্প্রতিক সময়ে কিছু অসাধু কৃষক, ফল ব্যবসায়ীরা অপরিপক্ক ফল গাছ থেকে সংগ্রহ করে বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ দ্বারা ফল পাকিয়ে মানুষের হাতে তুলে দিচ্ছে। এতে একদিকে মানুষ গুণগতমানের পরিপক্ক স্বাদ গন্ধের ফল যেমন পাচ্ছে না তেমনি এসব রাসায়নিক পদার্থ মানুষের শরীরে প্রবেশ করে বিভিন্ন রোগশোকে আক্রান্ত হচ্ছে। ফলের পরিপক্কতা সহজে চেনার উপায়গুলো দেখে ফল কিনলে সহজেই গুণগতমানের ফল খেতে পারবে পাশাপাশি অসাধু ব্যবসায়ীরা অপরিপক্ক ফল বিক্রি থেকে বিরত থাকবে।