ইলিয়াস আরাফাত, স্টাফ রিপোর্টার : উদ্ভিদের অত্যাবশ্যকীয় ১৩টি খাদ্য ও উপকারী উপাদান। এগুলো হচ্ছে নাইট্রোজেন, ফসফরাস, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, সালফার, কপার, আয়রন, বোরন, জিঙ্ক, ম্যাঙ্গানিজ, মলিবডেনাম ও ক্লোরিন। এসব উপাদান দিয়েই তৈরি করা হচ্ছে ম্যাজিক গ্রোথ।
ম্যাজিক গ্রোথ উদ্ভাবন করেছেন বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) রাজশাহীর সার ব্যবস্থাপনা বিভাগের যুগ্ম পরিচালক আরিফ হোসেন খান। এটি ফসলে ব্যবহারে ৩০ ভাগ পর্যন্ত ফলন বৃদ্ধি করা সম্ভব। পাশাপাশি ২৫ শতাংশ ইউরিয়া সারের ব্যবহার কমিয়ে আনা সম্ভব বলে দাবি করেছেন কৃষিবিদ আরিফ হোসেন খান।
ইতোমধ্যেই কৃষিবিদ আরিফ হোসেন খানের ‘ম্যাজিক গ্রোথ’ প্রয়োগ করে অভাবনীয় সাফল্য পেয়েছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের চাষিরা। দীর্ঘ গবেষণার পর দেশে সহজে পাওয়া যায় উদ্ভিদের এমন অত্যাবশ্যকীয় ১৩টি খাদ্য ও উপকারী উপাদান নিয়ে এই ম্যাজিক গ্রোথ উদ্ভাবন করেছেন তিনি।
আরিফ হোসেন খান ফার্মসঅ্যান্ডফার্মারকে জানান, প্রতিবছর শীত মৌসুমে কোল্ড ইনজুরির কারণে বোরো ধানের চারা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সিডর ও আইলার পর থেকে লবণাক্ততা বেড়ে যাওয়ায় উপকূলীয় অঞ্চলে ধান চাষে নানা সমস্যা দেখা দিয়েছে। সেসব অঞ্চলের কৃষকরা ধান চাষ করে ভালো ফলন পাচ্ছে না। পান চাষের অন্যতম সমস্যা হচ্ছে শীতকালে পাতা ঝরে যাওয়া ও পাতায় দাগ পড়া। এসব সহ বিভিন্ন ফসল, ফল ও ফুলের গাছে ম্যাজিক গ্রোথ ব্যবহারে উপকার পাচ্ছে প্রান্তিক চাষিরা।
রাজশাহী মহানগরীর ভদ্রা এলাকার গৃহবধূ শিল্পী ফার্মসঅ্যান্ডফার্মারকে জানান, তার ছাদ বাগান আছে। ছাদ বাগানে ম্যাজিক গ্রোথ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। এতে ফলাফলও বেশি ভালো। আগের চেয়ে ফল ও ফুল বেশি এসেছে এবং শিকড়ের বৃদ্ধি ভালো হয়েছে।
কৃষিবিদ আরিফ হোসেন খান ফার্মসঅ্যান্ডফার্মারকে জানান, উদ্ভিদের পাতা ও কান্ডের ওপর যখন এসব পুষ্টি উপাদানের দ্রবণ স্প্রে করে প্রয়োগ করা হয় তখন পাতার স্টোমাটা, কিউটিকুলার পোর (ছিদ্র) এবং কান্ডের লেন্টিসেলের মাধ্যমে এসব পুষ্টি উপাদান খুব দ্রুত গাছের ভেতরে ঢুকে যায় এবং বিভিন্ন মেটাবলিক (বিপাকীয়) কার্যাবলিতে অংশগ্রহণ করে। এ প্রক্রিয়াকে বৈজ্ঞানিক ভাষায় বলা হয়ে থাকে নন-রুট অ্যাবজবসন। এ প্রক্রিয়ায় গাছ সঠিক মাত্রায় প্রয়োজনীয় সব পুষ্টি পেয়ে সুস্থ ও স্বাভাবিকভাবে বেড়ে ওঠে এবং অধিক ফলন দিয়ে থাকে।
তিনি আরও জানান, মাটিতে যখন সার দেয়া হয়, তখন মাত্র ১০ ভাগ কাজে লাগে। কিন্তু পাতার মাধ্যমে পুষ্টি প্রদান করলে সেখানে কোনো অপচয় হয় না, শতকরা ৯০ ভাগেরও বেশি কাজ করে, যা আমেরিকার মিশিগান স্টেট ইউনিভার্সিটির হর্টিকালচার বিভাগের গবেষণা থেকে প্রমাণিত। বর্তমান সময়ে উন্নত বিশ্বে পাতার মাধ্যমে খাদ্য প্রদানের এই কৌশল তাদের ফসল উৎপাদনে ব্যাপকহারে ব্যবহৃত হচ্ছে। পাতার মাধ্যমে পুষ্টি প্রদানের এই ম্যাজিক গ্রোথ প্রযুক্তি দ্রুত সম্প্রসারণ করার উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।
ফার্মসঅ্যান্ডফার্মার২৪ডটকম/ আরাফাত/ মোমিন