ফার্মে যে কারণে সমস্যা হয়ে থাকে কিন্তু আমরা বুঝি না বা ভুল বুঝে থাকি.৫টি কারণকে দায়ী করা যায় যেমন
১।বায়োসিকিউরিটি
২।খাবার
৩।বাচ্চা
৪।ব্যবস্থাপনা
৫।ভাগ্য
১।বায়োসিকিউরিটি
এটা ব্যবস্থাপনার অংশ কিন্তু গুরুত্বের কথা চিন্তা করে আলাদা আলোচনা করেছি।
বায়োসিকিউরিটি বলতে আমরা স্প্রে করাকে বুঝি বিশেষ করে আক্রান্ত হবার পর আসলে এটা্ নগণ্য বা অর্থহীন একটা কাজ।
বায়োসিকিউরিটি শুরু হবে ফার্ম করার আগে আর আমরা করি মুরগি মারা যাবার পর।কি হাস্যকর ব্যাপার।
বায়োসিকিউরিটিকে ৩ভাগে ভাগ করতে পারি
ক।কনসেপসোয়াল(ধারণাগত)
খ।স্টাকসারাল(গঠন গত)
গ।অপারেশনাল(প্রায়োগিক যেটা নরমালী খামারীরা কিছুটা করে থাকে)
ক।কনসেপসোয়াল(ধারণা গত)
এটা হল আপনি ফার্ম টি কোথায় করবেন,কত দূরে করবেন।ফার্ম টি যদি বাড়ির পাশে হয় যেখানে দেশি মুরগি,হাস,কবুতর বা কাছাকাছি অন্য জাতের পাখি থাকে তাহলে রোগ ব্যাধি বেশি হবে।সেডে একবার ভুল হলে আর ঠিক করার সুযোগ থাকেনা।
সেড কাছাকাছি হলে অন্য সেড হেকে রানিক্ষেত,এ আই,আই এল টি মাইকোপ্লাজমা বাতাসের মাধ্যমে চলে আসে।
খ।স্টাকসারাল(গঠন গত)
ফার্ম টি কত উচু হবে,কোন দিক বরাবরা হবে,কতটি লাইন হবে,ক্যাপাসিটি কত হবে তা বুঝায়।
ফার্মের বেড়া,গেট,ভিজিটর নিয়ন্রণ,সেড থেকে সেডের দূরত্ব,মৃত বা অসুস্থ মুরগি গর্তে রাখা,পানি,কর্মাচারী,ফুটবাথ,লিটার ও যানবাহনব্যবস্থাপনা স্টাকসারাল বায়োসিকিউরিটির ভিতর পড়ে।তাছাড়া পশু পাখি থেকে রক্ষা করা গঠন গত বাতোসিকিউরিটির মধ্যে পড়ে।
ফার্ম টি যদি উচু কম হয় তাহলে তাপ বেশি হবে,স্টোক করে মারা যাবে।স্টেস বেশি পড়ে বিভিন্ন রোগ হবে।উত্তর দক্ষিণ বরাবর হলে সূর্্যের আলো বেশি পড়বে ফলে মুরগি ঠুকরাঠোকরি করবে।
গ।অপারেশনাল(প্রায়োগিক)
ফার্মের সব কিছু জীবানূ মুক্ত করা।বাহির থেকে যাতে কোন ভাবে জীবানূ ভিতরে না আসে।যেমন ভিজিটর,যানবাহন,ট্রে,খাচা ও কর্মচারীর দ্বারা যাতে জীবানূ না আসে।এটা প্রতিদিনের কাজ এবং রুটিন অনুযায়ী করতে হয়।
২।খাবার
সব কোম্পানির খাবার এক না।সস্তা বা বাকির জন্য কম দামি খাবার মুরগিকে খাওয়াবেন না।তাছাড়া সব সময় সব কোম্পানীর খাবার ভাল থাকে না।যখন সমস্যা মনে করবেন তখন খাবার পরিবর্তন করবেন তবে কয়েকদিন মিক্স করে খাওয়াবেন।
খাবারের কারণে আমাশয়,এন্টারাইটিস/নেক্রোটিক এন্টারাইটিস,মাইকোটসিন,ই-কলাই আসতে পারে।ডিম কমে যায় ওজন কম আসে।
৩।বাচ্চা
বাচ্চা যদি ভাল না হয় তাহলে সব কিছু ভাল হলেও ওজন /ডিম কম আসবে।অসুস্থ হবে।
লেয়ারের ক্ষেত্রে মেরেক্স,লিউকোসিস,সাল্মোনেলা,মাইকোপ্লাজমা,কলিব্যাসিলোসিস,ফাংগাস এমন কি এ আই ও হতে পারে।
এ আই,মেরেক্স,কলিবাসিলোসি ভার্টিকেল না হলেও ডিমের খোসার মাধ্যমে বা বাচ্চা ফোটার পর হ্যাচারী থেকে চলে আসতে পারে।
ব্রয়লারের ক্ষেত্রে কলিব্যাসিলোসিস,রিও,মাইকোপ্লাজমা,ফাংগাস,এ আই।
বাচ্চাতে যদি মেরেক্স বা লিউকোসিস বা রিও থাকে তাহলে খামারির কোন ক্ষমতা নাই ভাল করার।তাই খারাপ বাচ্চা মানে লস প্রজেক্ট।কম দামে খারাপ বাচ্চা নেয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।অনেকে খারাপ বা বাসিবাচ্চা নিয়ে থাকে কেউ কেউ ভাল করে কারণ তার হয়ত অন্য সব সাইট ভাল যার কারণে অভারকাম করতে পেরেছে।তাই বলে সবাই ভাল করতে পারবে না।তবে যদি রিও বা লিউকোসিস নিয়ে আসে তাহলে আর কিছু করার নাই যত ভাল থাকুক না কেন।
৪।ব্যবস্থাপনা
এর ভিতরে আছে নিচের বিষয়গুলি
লিটার ব্যবস্থাপনা
লিটার ভাল মানে ৫০% ভাল।অনেক ফার্মে দেখি লিটারের উচ্চতা কম হয়ে থাকে।কিছু টাকা বাচাতে গিয়ে বড় সমস্যায় পড়ে।শীতের সময় লিটার বেশি দিতে হয়।গরমের সময় কম লিটার দিতে হয়। লিটার বেশি শুকনা হলে এ আই,আই বি,মাইকোপ্লাজমা,রানিক্ষেত,নিউমোনিয়া হয়।আবার ভেজা হলে আমাশয়,এন্টারাইটিস,মাইকোটিক্সিন বেশি হয়।
পাত্র ব্যবস্থাপনাঃ
বয়স অনুযায়ী পাত্রের সংখ্যা ও উচ্চতা মেনে চলতে হবে।পাত্র কম দিলে মুরগি ছোট বড় হয়,পাত্র পড়ে লিটার ভিজে যায়।উচ্চতা কম হলে পাত্রে ময়লা পড়ে আমাশয়,এন্টারাইটিস হয়।উচু বেশি হলে ছোট বাচ্চা না খেয়ে মারা যাবে।
পর্দা ব্যবস্থাপনা
শীতে বাচ্চাকে খামারীরা তাপ দিতে পারেনা তাই পর্দা দিয়ে সেটা পূরণ করে থাকে।এতে ভিতরে অক্সিজেন ঢুকতে পারে না আবার ভিতরের এমোনিয়া ও কার্বন ডাই অক্সাইড বের হতে পারেনা।
শীতে অবশ্যই পর্দা দিবো তবে পর্দা দিয়ে ৫০% আর তাপ দিয়ে ৫০% ম্যানেজ করতে হবে।সবাই পর্দা দিয়ে ১০০% তাপের ব্যবস্থা করার চেস্ট করে।
পর্দাস ৪-৫ ঘন্টা পর পর খুলে দিয়ে গ্যাস বের করতে হবে।
পর্দা ঠিক না থাকলে গ্যাস হয়ে মাইকোপ্লাজমা পেঠে জমা,বংকাইটিস,রানিক্ষেত এ আই হয়ে যায়।
সিজনাল ব্যবস্থাপনা
বর্ষা,শীত ও গরমের সময় ব্যবস্থা নিতে হবে না হলে স্টেস পড়ে বিভিন্ন রোগ হবে।
একই সিজনে খাবারের প্রোটিন ও এনার্জি,টক্সিন বাইন্ডার,ভিটামিন্স মিনারেলস,এন্টিকক্সিডিওস্ট্যাস্ট,ভ্যাক্সিন সিডিউল একেক রকম হবে।
ভ্যাক্সিনেশনঃ
ভ্যাক্সিনেশন ঠিক মত না হলে কোন রিজাল্ট আসবে না।বেশি বেশি ভ্যাক্সিন দিলেই কাজ হবে না।অনেক খামারি আছে যারা ভ্যাক্সিন বেশি দিলেই খুশি হয়।আগে জানতে হবে কোন ভ্যাক্সিন দরকার।ভ্যাক্সিন কয়টা দিবো তা নির্ভর করে মুরগির জাত,বয়স,এলাকায় রোগের প্রাভুর্ভাব,ফার্মের বয়স,খামারীর দক্ষতা,ফার্মের ব্যবস্থাপনা,ভ্যাক্সিন কোম্পানীর সিডিউল,বাচ্চা ও খাবারের উপর।তাই সবার ভ্যাক্সিন সিডিউল এক হবে না কিন্তু আমরা বাস্তবে দেখি সবাই এক সিস্টেমে দিতে থাকে।
কিছু কিছু ভ্যাক্সিন আছে যেগুলো একবার দিলে সব সময় দেয়া লাগে যেমন আই বি,এ আই,আই এল টি।আই বি ডি ভেরিয়েন্ট/ইন্টার্মেডিয়েট প্লাস ভ্যাক্সিন
কৃমিনাশকঃ
কৃমিনাশক কবে হবে,কতদিন পরে হবে তা ফার্মের সিস্টেম(খাচা,মাচা,ফ্লোর,সিজন,বিয়সের উপর নির্ভর করে।
বডি ওয়েট ব্যবস্থাপনাঃ
বয়স অনুযায়ী ওজন ঠিক রাখতে হবে,২০-২২ সপ্তাহে ওজন ঠিক আসে না বা ডিম পাড়েনা।এই সমস্যার জন্য ১ম সপ্তাহ থেকেই ব্যবস্থাপনার দিকে নজর দিতে হবে।আবার অনেক সময় ওজন বয়স অনুযায়ী বেশি হয়ে গিয়ে প্রলাপ্স হচ্ছে।ডিম আটকে যাচ্ছে,ফ্যাটি লিভার হেমোরেজি সিন্ড্রম হয়ে মারা যাচ্ছে।এসবের সমাধান তেমন হয় না।
লাইটিং ও তাপের ব্যবস্থাপনাঃ
বয়স অনুযা্যী আলো,তীব্রতা ও তাপের ব্যবস্থা ঠিক মত করতে হবে যেটা আমাদের দেশে ৯০% খামারি করতে পারে না।ফলে ক্যানাবলিজম(ঠোকরা ঠুকরি করে),ওজন বেশি চলে আসে।
ব্রুডিং ব্যবস্থাপনা
ব্রুডিং এ শীতে সঠিক তাপ দিতে পারেনা আবার গরমের বেশি তাপ দিয়ে দেয়।
ব্রুডিং এর সময় খামারীকে ৭-১৪দিন ফার্মে সব সময় থাকা উচিত।
৫। ভাগ্যঃসব কিছু ঠিক থাকলেও অনেক সময় ভাল ফল আসেনা আবার কেউ তেমন কিছু না করেও লাভ করে।তাই ভাগ্যের ব্যাপার আছে।
৫টি পয়েন্ট এর মধ্যে যার পয়েন্ট যত বেশি সে তত বেশি ভাল করবে।
অনেকে প্রশ্ন করে আমি ত ভাল কোম্পানীর খাবার ও বাচ্চা নিলাম তবু সমস্যা হচ্ছে এর মানে উনার ব্যবস্থাপনা ভাল না,খাবার বা বাচ্চার দোষ দিবে।আবার অনেক সময় খাবার ও বাচ্চা ভাল হলে মোটামুটি চালিয়ে নেয়া যায় যদি ব্যবস্থাপনা ভাল থাকে।
কিছু খামারি আছে যাদের ব্যবস্থাপনা ভাল কিন্তু বায়োসিকিউরিটি ভাল না সে ক্ষেত্রেও সমস্যা হবে।
কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায় সব কিছু ভাল কিন্তু খাবারের মান খারাপ হওয়ায় প্রডাকশন /ওজন কম আসে।
আমরা একটা ফ্যামিলির সাথে তুলনা করতে পারি পরিবারের পিতামাতা আর ছেলে সন্তান যদি হয় ভাল তাহলে পুত্র বধূ খারাপ হলেও চালিয়ে নেয়া যায়।
আবার দেখা যায় সন্তান এবং পুত্র বধূ সবাই অবাধ্য এক্ষেত্রে পিতামাত সংসারটাকে টিকিয়ে রাখতে পারে না।
এমন পরিবার আছে যেখানে সবাই ভাল তাদের ক্ষেত্রে মনে হয় পরিবার টা একটা স্বর্গ।
অনেক সময় দেখা যায় স্নগসারটি ভালই চলতেছে কিন্তু একজন মরে যাওয়ায় বা নতুন একজন আসায় সংসারে ভাংগন ধরে।
উপরের আলোচনা থেকে আসা করি সবাই ফার্মের সমস্যার সমাধান বের করতে পারবেন।সব কিছু মেডিসিন দিয়ে হয় না।আবার ইচ্ছে করলেই সমাধান করা যায় না।সময়ের কাজ সময়ে করতে হয়।
খামারীরা মনে করে রোগ হবার আগেরদিন কোন জীবানূ ফার্মে ঢুকেছে বা কেউ দিয়েছে বা কারো মাধ্যমে এসেছে।
এসব ঘটনা ১% হতে পারে।৯৯% হল দীর্ঘ স্থায়ী কোন কারণ যার ফলে আস্তে আস্তে রোগটি হয়েছে।সেটা ১ সপ্তা,২ সপ্তা,৩,৫,৭,সপ্তা বা মাস খানেক সময় ব্যাপি হতে পারে।
কাজেই আজকের পর নিজেরাই খুজে বের করুন কিভাবে কি হচ্ছে।একদিকে না তাকিয়ে সব দিকে তাকাবেন
নোটঃ সব কিছু আরো বিস্তারিত জানতে ব্লগে বিভিন্ন টপিক্সে আলোচনা আছে সেখান থেকে জেনে নিতে পারেন।
ফার্মসএন্ডফার্মার/২৬জানুয়ারি২০২১