খাগড়াছড়ির রামগড়ে ফেনী নদীতে বিষ প্রয়োগে মাছ শিকার করা হচ্ছে। এতে দেশীয় প্রজাতির বিভিন্ন মাছসহ জলজ প্রাণীর অস্তিত্ব বিপন্নের পথে। ইতিমধ্যে নদী থেকে হারিয়ে গেছে বিভিন্ন প্রজাতির দেশীয় মাছ।
সরেজমিনে জানা যায়, নদীর রামগড় ও প্রতিবেশী দেশের সাব্রুম অংশের উজানের বিভিন্ন স্থানে বিষ প্রয়োগ করা হয়। বিষাক্ত জংলি লতা গাছ ও কীটনাশক ওষুধ নদীর উজানে পানিতে মিশিয়ে দেওয়ার পর স্রোতের টানে তা পুরো ভাটি অংশে ছড়িয়ে যায়। এ সময় বিষক্রিয়ায় ছোট-বড় সব ধরনের মাছ পানিতে ভেসে উঠে। ছটফট করতে করতে এক পর্যায়ে মাছগুলো মারা যায়। তখন এসব মাছ বিষ প্রয়োগকারীসহ তীরবর্তী বাসিন্দারা নদীতে নেমে সংগ্রহ করে। পরে মাছগুলো হাট-বাজারেও বিক্রি করে শিকারিরা।
সম্প্রতি রামগড়ের কাশিবাড়ি এলাকায় নদীতে বিষ প্রয়োগ করা হয়। মাছ ভেসে উঠার পর অসংখ্য নারী-পুরুষ নদীতে নেমে এসব মৃত-অর্ধমৃত মাছ সংগ্রহ করে। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ২-৩ কিলোমিটারব্যাপী নদীর ভাটির অংশে মাছ সংগ্রহ করে দুদেশের তীরবর্তী বাসিন্দারা।
রামগড় পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের সীমান্তবর্তী বল্টুরামটিলা এলাকার বাসিন্দা ও কারবারি আনন্দ মোহন বৈষ্ণব খোকন বলেন, কাশিবাড়ি এলাকায় সোমবার ভোরে কে বা কারা নদীর পানিতে বিষ ঢেলে দেয়। স্রোতে এ বিষ নদীর ভাটি অংশে ছড়িয়ে যায়। এতে ছোট-বড় সব ধরনের মাছ বিষক্রিয়ায় ছটফট করতে করতে ভেসে উঠে। দুপাড়ের অসংখ্য মানুষ নদীতে নেমে সে মাছ সংগ্রহ করে। এ সময় তারা আইড়, বোয়াল, কালিগইন্যাসহ বিভিন্ন প্রজাতির ছোট-বড় মাছ সংগ্রহ করে নিয়ে যায়। তিনি আরো জানান, প্রতি শুষ্ক মৌসুমে নদীতে এভাবে বিষ প্রয়োগ করে মাছ শিকার শুরু হয়।
রামগড়ের প্রবীণরা জানান, একসময় এ নদীতে প্রচুর বোয়াল, আইড়, পাঙাশ, চিতল, শোল, শিং, মাগুর, বাইলা, টেংরা, দারি, বেতাঙ্গী, বাইন, কালিগইন্যা, কুচিয়া ইত্যাদি মাছ পাওয়া যেত। এছাড়া পুঁটি, মলা, চাপিলা, খলিশা, ফলি, গুতুম প্রভৃতি ছোট মাছের অভাব ছিল না। প্রাকৃতিক মাছের নিরাপদ আবাসস্থল ছিল ফেনী নদী। কিন্তু নদীটি এখন প্রায় মাছ শূন্য হয়ে পড়েছে। এদিকে, বিষ প্রয়োগের কারণে শুধু মাছই নয়, কচ্ছপসহ নানা ধরনের জলজ প্রাণী ও সরীসৃপের অস্তিত্বও বিপন্নের পথে।
এ ব্যাপারে রামগড় উপজেলা মত্স্য কর্মকর্তা মো. মনোয়ার হোসেন বলেন, নদীতে বিষ প্রয়োগকারীদের নাম-পরিচয় জানার চেষ্টা করেছি। কিন্তু কেউ তাদের তথ্য দিতে পারেনি। তিনি বলেন, সীমান্ত নদী হওয়ায় যখন-তখন সেখানে কোনো অভিযান চালানো যায় না। এ ক্ষেত্রে বিজিবির সহযোগিতা প্রয়োজন।