করোনা মহামারিতে দফায় দফায় পোল্ট্রি ফিডের দাম বাড়ানোর পরও ফের ফিডের বস্তায় বাড়তে পারে ৬০ টাকা! এ নিয়ে ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন খামারিরা। তারা বলছেন, পোল্ট্রি খাত সিন্ডিকেটের উপর চলছে। তারা সম্ভাবনাময় খাতটাকে ধ্বংশের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। তা নিয়ে সরকার নিশ্চুপ।
গতকাল শুক্রবার (৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২) বিকেল সাড়ে ৫ টার দিকে ফার্মিং ফিউচার বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক মোঃ আরিফ হোসেন এর উপস্থাপনায় দীপ্ত টিভিতে প্রচারিত সংলাপ এর আলোচনায় এসব তথ্য উঠে আসে।
ফিডের বস্তায় ৬০ টাকা বাড়তে পারে এমন পূ্বাভাস দিয়েছেন “পোল্ট্রিফিড-সংরক্ষণ, সরবরাহ ও বিতরণ” নিয়ে আফতাব বহুমুখী ফার্মস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবু লুতফে ফজলে রহিম খান ও বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পোলট্রি বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. ইলিয়াস হোসেন।
ধারণা করা হচ্ছে দাম বাড়ানোর পূর্বাভাসে, নারিশ ফিড, সিপি বাংলাদেশ, প্যারাগন ফিড, আমান ফিড, নিউ হোপ, এজি এগ্রো, নাহার, এলিয়া ফিড, কেএনবি, ফ্রিডম এগ্রো, সানরাইজ পোল্ট্রি ফিড, বুস্টার ফিডসহ অন্যান্য পোল্ট্রি খাদ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্টানগুলো দাম বাড়াতে পারে।
আলোচনায় বলা হয়, প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকার পোল্ট্রি খাতে ৫০ হাজার থেকে ১ লক্ষ খামারি জড়িত। পোল্ট্রি, ডেইরি ও মৎস্য খাত বাংলাদেশের কৃষি তথা অর্থনীতির অন্যতম প্রধান খাত। প্রায় ১.৫ কোটি থেকে ২ কোটি লোকের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কর্মসংস্থান হচ্ছে এই খাতে।
এতকিছুর পরও খুদ্র-মাঝারি প্রায় ১৫০০০০ পোল্ট্রি খামারি সমসময়ই ইনভেস্টমেন্ট নিয়ে হুমকিতে থাকে। পাটের বস্তায় পোল্ট্রিফিড বাজারজাত ও সংরক্ষণ করতে সম্প্রতি সরকার নির্দেশনা জারি করেছে। এটি সফল করতে বছরে দরকার হবে প্রায় ৩৬ কোটি পাটের বস্তা।
এই চাহিদা পূরণের মতো পাট দেশে নেই। তাছাড়া প্রতিটি বস্তার জন্য বাড়তি ৫০-৬০ টাকা খরচ হবে যা খামারি ও ক্রেতার উপর বিরূপ প্রভাব ফেলবে। ফার্মিং ফিউচার বাংলাদেশ নিবেদিত দীপ্ত কৃষি সংলাপের ৪০তম পর্বে আলোচনা হয়।
পোল্ট্রি সেক্টরের সাথে জড়িতদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বর্তমানে একটি ডিমের উৎপাদন ও তা’ পাইকারী পর্যায়ে বিক্রি পর্যন্ত খামারীদের খরচ পড়ে ৬ টাকার বেশি। সেইসাথে আশানুরুপ দাম না পাওয়ায় লোকসান না হলেও এভাবে চলতে থাকলে খামারে কর্মরত শ্রমিক, মুরগির ভ্যাকসিন, খাদ্যেও দাম বৃদ্ধি সব মিলিয়ে ব্যবসা পরিচালনা কঠিন হয়ে পড়বে। কয়েকমাসে তা মূলধনে আঘাত হানবে বলে জানান তারা। ইতোমধ্যে কিছু প্রান্তিক খামরি ব্যবসা ধরে রাখতে ব্যাংক ঋণ, এনজিও, ধার-দেনা ছাড়াও জমি বিক্রি করেছেন বলে জানা গেছে।
খাদ্যের দাম বাড়ার পর থেকেই প্রতিবাদ করছেন খামারিরা। খামারিদের অধিকার আদায় ও অস্বাভাবিক হারে পোল্ট্রি খাদ্যের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছে বাংলাদেশ পোল্ট্রি খামার রক্ষা জাতীয় পরিষদ (বিপিকেআরজেপি), বাংলাদেশ প্রান্তিক পোল্ট্রিশিল্প সংগঠনসহ বিভিন্ন সংগঠন।
তারা বলছেন, ২০২১-২০২২ অর্থ বছরের বাজেটে পোল্ট্রি খাদ্যের মূল্য কমানোর ঘোষণা থাকলেও বাজেটের ঘোষণা অপেক্ষা করে বাজেট ঘোষণার পর তিন দফায় পোল্ট্রি খাদ্যের দাম বাড়ানো হয়েছে। যথাক্রমে প্রথমে ৫০ টাকা বছরের শুরুতেই, এরপর ৭৫ টাকা এবং সর্বশেষ ১০০ টাকা বৃদ্ধি করা হয়। বাজেটের আগে ২৭৫ টাকা বৃদ্ধি করা হয়। মোট ৫০০ টাকা একবস্তা খাদ্যে বৃদ্ধি হলে খামারিরা কিভাবে লাভ করবে! খাদ্যের দাম বৃদ্ধিতে খামারিরা ব্যাপক লোকসানের মুখে পড়েছে এবং খামারিদের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। বর্তমানে পোল্ট্রি খামার ধ্বংসের পথে।
জানতে চাইলে বিপিকেআরজেপি কিশোরগঞ্জ জেলা শাখা সভাপতি একেএম ফজলুল হক এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, আমরা বিভিন্ন জেলা উপজেলা পর্যায়ে মানবন্ধন ও প্রতিবাদ সভা করছি। এভাবে চলতেই থাকবে যতদিন না খাদ্যের দাম কমানো হচ্ছে।
পোল্ট্রি খামারিদের দাবি আদায়ে ও বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে পোল্ট্রি প্রফেশনালস বাংলাদেশ (পিপিবি)। হটাৎ খাদ্যের দাম বাড়ার ফলে খামারিদের সমস্যা ও সরকারের ভূমিকা বিষয়ে সংগঠনটির সভাপতি মজুমদার অঞ্জন সিন্ডিকেটের মাধ্যমে দাম বাড়ানো হয়েছে এমন প্রশ্নে বলেন, সিস্টেমের মাধ্যমে ফায়দা লুটছে কাঁচামাল আমদানিকারকরা। সরকার ট্যাক্স ফ্রি করে দিয়েছে। এখানে কোন সিন্ডিকেট নেই- সাপ্লাই স্লো হওয়ার কারনেই এমন অবস্থা।
সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্যে খাদ্যের দামে বিপাকে পোল্ট্রি খামারিরা। তারা বলছেন, খুব দ্রুত খাদ্যের দাম কমাতে হবে। এভাবে একের পর এক দূর্যোগ নেমে আসলে পোল্ট্রি খামারিরা নিঃস হয়ে পড়বে। লোকসানে জীবনের শেষ সম্বলটুকু হারিয়ে যাবে।
প্রতিবাদ ও আন্দোলনের মাঝেও খাদ্যের দাম বাড়ানোর যৌক্তিকতা নিয়ে ফুঁসে উঠেছে খামারিরা। তারা বৃহত্তর আন্দোলনেও যেতে বাধ্য হবেন বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ প্রান্তিক পোল্ট্রিশিল্প সংগঠনের নেতা ইসমাইল মল্লিক।
ফার্মসএন্ডফার্মার/ ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২২