আল আমিন মণ্ডল, বগুড়া থেকে: আসন্ন আর মাত্র দুইদিন পর পবিত্র ঈদ উল আজহা। মুসলমান সম্প্রদায়ের সবচেয়ে পবিত্র ধর্মীয় উৎসব পবিত্র কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে বগুড়া জেলাসহ গাবতলীতে শেষ সময়ে জমে উঠেছে পশুর হাট।
গত বছরের তুলনায় এ বছরে বিদেশি গরু-ছাগল আমদানি হলেও দেশি গরু-ছাগলের চাহিদা সবচেয়ে বেশি ছিল। বেশিরভাগ ক্রেতা কিনছেন দেশি গরু-মহিষ ও ভেড়া-ছাগল। ফলে আশানুরূপ মূল্যে থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন গরু ব্যবসায়ী ও খামাররা। দুর-দূরান্ত থেকে অনেক ক্রেতা-বিক্রেতার সমাগমে জমে উঠছে পশুর হাটগুলো।
গত কয়েকদিন কাগইল করুণা কান্ত উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে পশুর হাটে ব্যাপক বেচাকেনা হয়েছে। পছন্দ মতে ক্রয়-বিক্রয় করেছে সবাই। মাঝারি গরুর দামটা একটু বেশি হলেও ছাগলের দাম ছিল তুলনামূলকভাবে কম। ফলে দাম কম হলেও ব্যবসায়ীসহ খামারীরা বিক্রি করেছে পশুদের। এতে করে কিছুটা হলেও ব্যবসায়ীদের লাভ কম হচ্ছে বলে জানিয়েছেন গরু ব্যবসায়ীরা।
উপজেলার কাগইল, পীরগাছা, ডাকুমারা, সুখানপুকুর, কদমতলী, নাড়ুয়ামালা, মহিষাবান, পেরীহাট, দূর্গাহাটা, তরুনীহাট ও বাগবাড়ী পশুর হাট জমে উঠেছে।
এছাড়াও ইউনিয়নভিত্তিক পশুর হাট বসেছে। কাগইল হাট ইজারাদার মো. দুলাল আকন্দ ও হাটের পরিচালক কাগইল ইউনিয়ন পরিষদের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মিকরাইল ইসলাম জানান, এলাকার অধিকাংশ মানুষ কৃষির ওপর নির্ভরশীল। ফলে তারা স্থানীয় কাগইল হাট থেকে কোরবানি জন্য পশু কিনেছেন। বেচাকেনাও ভাল হয়েছে।
ক্রেতা আব্দুল মোত্তালিব জানান, ৬০ হাজার টাকায় একটি গরু কিনেছি। কাগইল পশুর হাট নিয়মিত হলে হাট আরো জমে যাবে।
খামারী রাকিব হাসান জানান, পশু লালন পালন করতে যে টাকা খরচ হয়েছে। এখন সে টাকাও উঠছে না।
এদিকে গরু ব্যবসায়ীরা জানান ভিন্ন কথা তারা বলেন, এ বর্ষায় চারিদিকে বন্যা হওয়ায় কৃষকদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এছাড়াও গতবোরো মৌসুমে কৃষকরা ধানের ন্যায্যমূল্যে না পাওয়া সেই প্রভাব পড়েছে পশুর হাটে।
কাগইল হাটে গরু কিনতে আসা সাংবাদিক আব্দুল বাসেদ ও আতাউর রহমান জানান, এ বছরে খাজনা পরিমাণ বেড়েছে। প্রতিটি গরু ৫শ টাকা ও ছাগল-ভেড়া ২শ ৫০ টাকা নেয়া হচ্ছে। এমনকি বিক্রি করতে আসা গরু-মহিষের মালিকদের কাছে থেকে প্রতিটি গরু ১শ টাকা ও ছাগল-ভেড়া ৫০ টাকা করে খাজনা (টোল) আদায় করা হয়েছে।
তারা আরো জানান, গত হাটের চেয়ে শুক্রবার হাটে পশুর দামটা বেশি ছিল। পুলিশের টহল ছিল ফলে ক্রেতা-বিক্রেতারা নিরাপদে কোরবানি পশু কেনাবেচা করেছে।
এদিকে ডাকুমারা হাটের ইজারাদার আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ হাসান রানা জানান, পুলিশ মোতায়েন করার ফলে হাটে ভালভাবে পশু বেচাকেনা হয়েছে। ডাকুমারা পশুর হাট প্রতি রোববার হয়ে থাকে।
এদিকে পশুর হাটে ক্রেতা ও বিক্রেতাদের সাথে কেউ জেন প্রতারণা করতে না পারে সে জন্য জাল টাকার সনাক্তকরণে স্থানীয় ব্যাংকগুলো সনাক্তকরণ মেশিন বসানো হয়েছে।
পশুর স্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে গাবতলী উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ. মো. গোলাম মোস্তফা ও ভেটানারি সার্জন ডা. মো. একরামুল হক মন্ডলের নেতৃত্বে কোরবানি পশুর হাটে পশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও তদারকি করা হচ্ছে। এ কাজে সহযোগিতা করছেন ভিএফএ ও স্বেচ্ছাসেবকরা।
কাগইল ইউনিয়নে দায়িত্বপ্রাপ্ত কৃত্রিম প্রজনন সহকারী জাহিদুল ইসলাম জানান, কাগইল পশুর হাটে পশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও তদারকি করার জন্য সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ছিলাম। ক্রেতাদের সার্বিক সহযোগিতা করা হয়েছে।
এ বিষয়ে গাবতলী উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. গোলাম মোস্তফা জানান, গাবতলীতে ভেটেরিনারি ২টি মেডিক্যাল টিম গঠন করা হয়েছে। মেডিক্যাল টিম বিভিন্ন পশুর হাটে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের উদ্যোগে কোরবানির জন্য সকল পশু সুস্থ সবল ও রোগমুক্ত রয়েছে কি না সে জন্য পরীক্ষা ও তদারকি করা হচ্ছে।
এদিকে হাটগুলোর নিরাপত্তা দেওয়া জন্য মোতায়ন করা হয়েছে অতিরিক্ত পুলিশ ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সদস্য। হাটে গরু চোর ও নকল (জাল) টাকা সনাক্তকরণে (প্রতিরোধে) গাবতলী মডেল থানা ওসি মো. খায়রুল বাসার জানান, আমরা গাবতলী উপজেলার বিভিন্ন পশুর হাট-বাজারে ব্যাপক প্রচার প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছি।
এ বিষয়ে গাবতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান জানান, সুশৃঙ্খলভাবে হাটে কোরবানির পশু বেচাকেনার জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। আশা করছি সবাই সুন্দরভাবে পবিত্র ঈদ উল আজহা উদযাপন করতে পারবেন। এ জন্য সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন।
ফার্মসঅ্যান্ডফার্মার২৪ডটকম/মোমিন