বন্যায় মৎস্য চাষীদের ক্ষতি কমানোর কিছু পরামর্শ:
১. বন্যার পানিতে জলাশয় ডুবে গেছে কিন্তু সম্পন্ন মাছ ধরতে পারে নি বা কোনও মাছই ধরতে পারেনি এমন চাষী ওই জলাশয়ে বাঁশ, ডালপালা প্রভৃতি দিতে পারে,যাতে ওই জলাশয়কেই মাছ আশ্রয়স্থল হিসেবে ব্যবহার করতে পারে। ফলে পানি কমে যাওয়ার পর অন্যান্য মাছসহ আরও দেশি মাছ/ ছোট মাছ পাওয়া যাবে। এতে করে ক্ষতি অনেকটাই লাঘব হবে।
২. সম্ভব হলে জলাশয়ে সহজলভ্য কিছু খাবার ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে বেশি নয়। ফলে খাবারের প্রয়োজনে মাছ জলাশয়ে অবস্থান করবে এবং অন্যান্য দেশি মাছ প্রবেশ করবে।এটা পরীক্ষালব্ধ এবং অনেকটা ফলপ্রসূ। খাদ্য হিসেবে দেওয়া যেতে পারে-
ক. বন্যার সময় অনেক শামুক পাওয়া যায়,সেগুলো সংগ্রহ করে শামুকের খোলস সরায়ে মাংসগুলো রোদে শুকিয়ে কিছুটা চূর্ণ করে তার সাথে চালের কুড়া দিয়ে জলাশয়ে ব্যবহার খুবই উপকারী।এ খাবার মাছকে আকর্ষণ করে।
খ. বন্যার সময় বাড়ির আশেপাশে প্রচুর কেঁচো পাওয়া যায় সেগুলো সংগ্রহ করে জলাশয়ে ব্যবহার করা যেতে পারে,ফলে একদিকে পরিবেশ ভাল থাকবে অন্যদিকে মাছ সেগুলো খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করবে।
গ. ধানের খড় ব্যবহার করা যেতে পারে, তবে বেশি নয় ( শতাংশে ৫০০ গ্রাম থেকে ১ কেজি মাসে ১ বার)
ঘ . খৈল ও চালের কুড়া ব্যবহার করা যেতে পারে।খেয়াল রাখতে হবে খরচ যেন বেশি না হয়।
৩ . বন্যার প্রকপতা কম হলে একই এলাকার মৎস্যচাষীরা সমাজভিত্তিক অর্থাৎ সবাই মিলে (হতে পারে ২০-৩০ জন বা বেশি / কম) জাল দিয়ে ঘিরে পেন তৈরি করে মাছ আটকাতে পারে এবং পরে নিচু এলাকাগুলোতে খাবার দিয়ে মাছ চাষ করে সবাই ক্ষতির সম্ভাবনা কমাতে পারে। এমন কি পোনা মজুদ করে আরও বেশি লাভবান হতে পারে।
৪. পানিতে খুব বেশি ভাসেনি কিন্তু নোংরা পানি প্রবেশ করেছে এবং ঘোলা হয়েছে এমন জলাশয়ে ২৫০-৩০০ গ্রাম চুন প্রতি শতাংশে দেওয়া যেতে পারে। আবার খড় ও ব্যবহার করা যেতে পারে।
৫. ভারি বৃষ্টি / কয়েকদিন ধরে চলমান বৃষ্টি এলাকা কিন্তুু বন্যার পানিতে একেবারে ভেসে যায় নি। মাছ খাবি খাচ্ছে এমন পরিস্থিতিতে অক্সি গোল্ড/ অক্সি ফ্লো/ কুইক অক্সিজেন ২০০-৫০০ গ্রাম/ একর/৩-৬ ফুট গভীরতায় দেওয়া যেতে পারে।
বন্যায় জলাশয় কবলিত হতে পারে এমন মৎস্যচাষীদের সম্ভাব্য ক্ষতি কমানোর জন্য পরামর্শ
১. মাছ বড় সাইজের হলে ধরে জীবন্ত মাছ ঢাকাতে বা বড় শহরে বিক্রি করতে পারে।লোকাল এলাকায় দাম পাবেনা। ঢাকাতে বা বড় শহরে দাম অনেকটা ভাল পাবে।সেক্ষেত্রে মৎস্য অধিদপ্তরের সহযোগিতা নিতে পারে।
২. মাছ ছোট সাইজের হলে জাল দিয়ে টেনে জীবন্ত মাছ অন্য এলাকায় ( যেখানে বন্যা নেই) স্থানান্তর করা যেতে পারে।
৩. বন্যার প্রকপতা কম অর্থাৎ পানির স্রোতের গতিবেগ কম / অল্প পরিমান পানি আসতে পারে এমন এলাকায় নেট/ বানা দিয়ে জলাশয়ের চারপাশে ভালভাবে বেড়া দেওয়া যেতে পারে।
৪. পানিতে জলাশয় ভরপুর হয়ে গেলে নালা করে ভাল করে জাল দিয়ে পানি বের করা যেতে পারে।
উপজেলা মৎস্য দপ্তরের করণীয়:
১.বন্যা কবলিত মৎস্যচাষীদের সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখা যেতে পারে।
২. চাষিদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেয়া এবং চাষিদের মনোবল অটুট রাখতে সাহায্য করা যেতে পারে।
৩. চাষিরা যাতে জীবন্ত মাছ ঢাকা বা অন্য বড় শহরে ভাল দামে বিক্রি করতে পারে সেক্ষেত্রে যোগাযোগ মাধ্যম হিসেবে কাজ করা যেতে পারে।
৪. বন্যার প্রকপতা কমে গেলে নিচু জলাশয়ে ( তবে বন্যার পানি যেখানে আছে) ওই এলাকার মৎস্যচাষীদের সমাজভিত্তিক পেনে মাছ চাষে উদ্বুদ্ধ করা এবং তালিকা তৈরি করে সহায়তা করা যেতে পারে।
৫. বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মৎস্যচাষিদের তালিকা তৈরি করে বেশি ক্ষতিগ্রস্তদের পর্যায়ক্রমে প্রশিক্ষণ দিয়ে প্রদশর্নী খামার দেয়া যেতে পারে।
৬.বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মৎস্যচাষীদের বিভিন্ন সরকারি, এনজিও এবং স্বেচ্ছা সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ করায়ে দেয়া যেতে পারে। যাতে মৎস্যচাষিরা কিছু সহযোগিতা পায়।
মৎস্য অধিদপ্তর, বাংলাদেশ নিম্নোক্ত কয়েকটি বিষয় নজর দিতে পারেন:
১. মনিটরিং সেল গঠন করা যেতে পারে।
২. সম্ভব হলে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মৎস্যচাষিদের সরকারিভাবে পোনা দেওয়া যেতে পারে।এক্ষেত্রে উন্মুক্ত জলাশয়ে বা প্রাতিষ্ঠানিক পুকুরে আমরা যে পোনা অবমুক্ত করি সেখান থেকে ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
৩. প্রদর্শনী পুকুরগুলো দেওয়ার ক্ষেত্রে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের অগ্রাধিকার দেওয়া যেতে পারে।
পরামর্শগুলো একত্র করে রেডিও, টেলিভিশন, সংবাদপত্র, সামাজিক মাধ্যম বা উদ্বুদ্ধকরণ সভার মাধ্যমে চাষির কাছে পৌঁছানো যেতে পারে। যাতে সম্ভাব্য ক্ষতি কমে যায়, চাষিরা মাছ চাষ করার মনোবল না হারায়। তাহলে বেঁচে যাবে আমাদের মৎস্য সেক্টর, বাঁচব আমরা, বাঁচবে জাতি, বাঁচবে বাংলাদেশ।