বন্যা পরবর্তী উদ্ভুত পরিস্থিতিতে করণীয়

494

বন্যা পরবর্তী উদ্ভুত পরিস্থিতিতে করণীয়

কৃষিবিদ মোহাইমিনুর রশিদ, সিলেট থেকে: সাম্প্রতিক সময়ে সিলেট অঞ্চলের হাওরবেস্টিত এলাকাগুলো অতিবৃষ্টির ফলে আগাম পাহাড়ী ঢলে সৃষ্ট বন্যায় বোরো ফসল ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিভিন্ন জলজ উদ্ভিদ পচে পানির গুণাগুণ নষ্ট হচ্ছে। ফলে মাছ মারা যাওয়ার উপক্রম হয়েছে, এমনকি কিছু জায়গায় মাছ মারা যাচ্ছে। সবশেষে হাওর পাড়ের মানুষের একমাত্র সম্বল গবাদিপ্রাণি ও হাঁসমুরগির খাদ্যাভাব দেখা দিচ্ছে। তাছাড়া অনেক হাওর এলাকায় হাঁসও মারা যাচ্ছে। এরূপ প্রাকৃতিক দুর্যোগের অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য আপনাকে বিশেষ কিছু ব্যবস্থা নিতে হবে।

শুরুতেই বোরো ধানের কথায় আসব। ইতোমধ্যে আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ি বজ্রঝড়ের ঘনঘটা বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জেলাসমূহ যেমন: সুনামগঞ্জ, সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ এবং এর পার্শ্ববর্তী জেলায় ১৯-২৪ এপ্রিল, ২০১৭ সময়ে ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে। তাই কৃষকভাইদের প্রতি বিশেষ অনুরোধ মাঠে বোরো ধান প্রায় ৮০ ভাগ পাকা হলেই দ্রুত কেটে মাড়াই ঝাড়াই করে ঘরে তোলার ব্যবস্থা নিন। কান্দা বা উঁচু জায়গায় দ্রুত বর্ধনশীল যেমন: লালশাক, গীমাকলমি, ডাটাশাক, পুঁইশাক, পাটশাক এসব শাকসবজি চাষ করার উদ্যোগ নিন। বসতবাড়ির আঙ্গিনায় সবজি বাগান তৈরি করতে পারেন। বসতবাড়ির আঙ্গিনায় মূলত ডাটা, কলমিশাক, পুঁইশাক, করলা, ঢেঁড়শ, বেগুন, পটল এসব সবজি চাষ করতে পারেন। তাছাড়া মাদা তৈরি করে চিচিঙ্গা, ঝিঙা, ধুন্দল, শসা, মিষ্টিকুমড়া, চালকুমড়ার বীজ বুনে দিতে পারেন। বোরো ধানের ক্ষতির মাত্রা কিছুটা পুষিয়ে নিতে আউশ আবাদ বাড়িয়ে দিন। আপনাদের জন্য পরামর্শ হলো বন্যাপ্রবণ নিচু এলাকাতে আগাম জাতের আউশ ধান যেমন: ব্রি ধান২৬, ব্রি ধান২৭, ব্রি ধান৪৭, ব্রি ধান৪৩ এবং ব্রি ধান ৪৮ চাষ করতে পারেন। আউশের চারা ২০ থেকে ২৫ দিনের মধ্যেই রোপণ করতে পারবেন। সম্ভব হলে মাটি পরীক্ষা করে জমিতে সার প্রয়োগ করতে হবে। ব্রি ধান২৮ এবং বিনাধান ১৪ গুলোর ক্ষেত্রে একটু বিশেষ সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। তাছাড়া বন্যার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে আগাম শীতকালীন সবজির আবাদের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।

বন্যাকালীন ও বন্যা পরবর্তী সময়ে গবাদিপ্রাণির বিশেষ যত্ন নিতে হবে। তা না হলে আপনার গবাদিপ্রাণির ব্যাপক ক্ষতি হতে পারে। তাই গবাদিপ্রাণিকে দানাদার খাবার ও বিশুদ্ধ পানি খাওয়াতে হবে। গবাদিপ্রাণির খাবারের সংকট দেখা দিলে বিকল্প খাবারের ব্যবস্থা করতে হবে। বিকল্প খাবার হিসেবে ভুট্টা, জার্মান ঘাস, প্যারা ঘাসের আবাদ করতে পারেন। তাছাড়া বিভিন্ন গাছের পাতা যেমন কাঁঠাল পাতা, কলা পাতা, কলা গাছ কুঁচি কুঁচি করে কেটে এসব পাতা পরিমিত মাত্রায় খড়ের সাথে মিশিয়ে খাওয়াতে পারেন। বাড়িতে থাকা হাঁসমুরগির জন্যও সংরক্ষিত দানাদার খাবার দিতে হবে। হাওর এলাকায় হাঁস পালনে বিশেষ সতর্কতা নিতে হবে। তাছাড়া এ সময়ে গবাদিপ্রাণি ও হাঁসমুরগির বিভিন্ন প্রকার রোগব্যাধির প্রার্দুভাব দেখা দিতে পারে তাই উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসে যোগাযোগ করে প্রয়োজনে টীকা প্রদানের ব্যবস্থা নিতে পারেন।

সাম্প্রতিক সময়ে অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ী ঢলের কারণে এসব অঞ্চলের জেলাগুলোর বিভিন্ন হাওর, জলমহল, খাল, বিল আকস্মিকভাবে প্লাবিত হয়েছে। এর ফলে বিভিন্ন জলজ উদ্ভিদ পচে পানির গুণাগুণ নষ্ট হচ্ছে। ফলে মাছ মারা যাওয়ার উপক্রম হয়ে কিছু কিছু এলাকায় মাছ মারাও যাচ্ছে। এসব মরা মাছের শরীরে ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদান থাকতে পারে। এ সময় সাময়িকভাবে মাছ ধরা থেকে বিরত থাকতে হবে। এসব মরা মাছ আহরণ, বিক্রয় ও খাওয়া এমনকি শুটকি দেওয়া থেকেও বিরত থাকতে হবে। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সকলকে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ জানানো হচ্ছে।

প্রতিনিয়তই আমাদের কৃষিতে সমস্যা। তাই কৃষি বিষয়ক যে কোনো সমস্যা সমাধানের জন্য সংশ্লিষ্ট উপজেলা কৃষি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ দপ্তরের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।