ইলিয়াস আরাফাত, স্টাফ রিপোর্টার : বরেন্দ্র অঞ্চলজুড়ে আম্রপালির জনপ্রিয়তা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। আম চাষে অনেকেই সফলতার মুখ দেখছেন। গোপাল ভোগ, ফজলি কিংবা ল্যাংড়ার চেয়ে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট উদ্ভাবিত আঁশবিহীন সুস্বাদু, আম্রপালির বারি-৩ চাষে কৃষকও চাষিরা ঝুঁকে পড়ছেন। আগে শৌখিন আম চাষীরা অল্প পরিসরে চাষাবাদ করলেও বর্তমানে তা বাণিজ্যিকভাবেও গড়ে উঠেছে সুস্বাদু আম্রপালি বারি-৩ আমের বাগান।
সবচেয়ে বেশি আম্রপালি চাষাবাদ হচ্ছে, বরেন্দ্র অঞ্চল হিসাবে পরিচিত চাঁপাইনবাবঞ্জে সদর উপজেলা আমনুরা, নাচোল, রহনপুর, নওগাঁ জেলার পোরশা, নিয়ামতপুরে। এছাড়া রাজশাহীর তানোর, গোদাগাড়ী অঞ্চলগুলোতে আম্রপালি চাষাবাদ শুরু হয়েছে। এসব এলাকায় এখন বাগানে বাগানে সোভা পাচ্ছে আম্রপালি। ছোট গাছে আম ধরে মাটিতে হেলে পড়েছে থোকা, এসব দেখে সড়কে চলাচলরত অনেক পথচারীর নজর কাড়ছে সহজেই।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ হর্টিকালচার সেন্টার ও জেলা কৃষি সম্প্রাসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, ২০১৩ সালে জেলায় মাত্র ৫২ বিঘা জমিতে আম্রপালি চাষ শুরু করা হয়। ২০১৪ সালে হয় ৭৫ বিঘা। ২০১৫ সালে বেড়ে আ¤্রপালি চাষ হয় ১১২ বিঘা জমিতে। ২০১৬ সালে তা ব্যাপক বিস্তার হয়ে জেলাই আম্রপালি চাষ হচ্ছে ৩২১ বিঘা জমিতে। সর্বশেষ ২০১৮-২০১৮ সালে চাষাবাদ বেড়ে দাড়ায় ৮৫০ হেক্টর জমিতে। এছাড়াও নওগাঁ জেলাতেও আম্রপালি চাষ হয়েছে ব্যাপক হারে। বাড়ছে রাজশাহী জেলাতেও।
বরেন্দ্র অঞ্চলের চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার সদর উপজেলার ঝিলিম ইউনিয়নের জামতলা এলাকায় আসলাম নামের এক ব্যাক্তি সড়কের ধার ঘিষে তিন বিঘা জমিতে আম্রপালি চাষাবাদ করছেন। তার বাগানে সোভা পাচ্ছে থোকায় থোকায় আম।
তিনি বলেন, মাত্র চার বছর আগে তিন বিঘা জমিতে ৩০০ আম্রপালি গাছ লাগায়েছিলেন তিনি। দ্বিতীয় বছর থেকেই আম ধরা শুরু। গত বছর এ তিন বিঘা আম বাগান থেকে আম বিক্রি করে দেড় লাখ আয় করেছেন। চলতি বছর আরো বেশি হবে বলে আশা করছেন তিনি।
নাচোল উপজেলার নিজামপুর গ্রামের আম্রপালি বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদ করছেন রবিউল ইসলাম। তিনি ফার্মসঅ্যান্ডফার্মারকে জানান, চাঁপাইনবাবগঞ্জ হর্টিকালচারের পরামর্শে তিনি দুই বছর আগে তার ৫ বিঘা জমিতে আম্রপালি গাছ রোপন করেছেন। এ বছর প্রথম আম ধরেছে। রোপনের অল্প সময়ের আম ধরায় খুশি তিনি।
তিনি আরো জানান, ধানসহ অন্য ফসল করে লোকসান হচ্ছে। তাছাড়া অন্য আমের জাত লাগালে জায়গা ও সময় দুইট বেশি লাগে,আর আম্রপালিতে দুইট কম লাগায় অল্প সময়ে বেশি লাভ হচ্ছে। তাই তিনি আম্রপালি চাষাবাদ করেছেন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ হর্টিকালচার সেন্টারের উদ্যান জার্মপ্লাজম অফিসার জহুরুল ইসলাম ফার্মসাঅ্যান্ডফার্মারকে জানান, আম্রপালি গাছ বামন আকৃতির ও ঝোপালো। ছোট হওয়া সত্ত্বেও অন্যান্য জাতের আমগাছের সমান বয়স ধরে বাঁচে। দেশের সব এলাকায় ও সব মাটিতে উপযোগী। অল্প জমিতে বেশি ও লাগানো যায়। এমনকি বাড়ির ছাদে টপেও হয়। এ জাতটি জমিতে মিশ্রভাবে আবাদ করা যায়। প্রথম বছরেই ফল দেয়। আঁশবিহীন সুস্বাদু, আম্রপালি বারি-৩ চাষের বরেন্দ্র অঞ্চলে জনপ্রিয়তা ক্রমেই বাড়ছে।
এ কর্মকর্তা আরো জানান, প্রায় ২৫ বছর আগে এ জাতটি পাশের দেশ ভারত থেকে বাংলাদেশে আসে। পরবর্তিতে বাণিজ্যিকভাবে আম্রপালি বারি-৩ আম চাষ বরেন্দ্র অঞ্চলসহ পুরো দেশে ছড়িয়ে দেয়া হয়। এর আগে ১৯৯৩ সালে জাতীয় আম প্রদর্শনীতে সর্ব প্রথম আমের গুণগত মান দেখে আম্রপালি আম চাষের প্রতি আমাদের দেশে সবার দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়।
ফার্মসঅ্যান্ডফার্মার২৪ডটকম/আরাফাত/ মোমিন