জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার ভারাহুত গ্রামে প্রথমবারের মতো মাচায় চাষ হচ্ছে উন্নত জাতের বারোমাসি তরমুজ। কালচে রঙের তাইওয়ান ব্ল্যাকবেবি ও হলুদ রঙের মধুমালা জাতের বারোমাসি তরমুজসহ পরীক্ষামূলকভাবে ইন্ডিয়ান জেসমিন-১ ও ২ জাতের তরমুজ চাষ করা হয়। ভারাহুত গ্রামে ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে মূছা মিয়া ২.৫ শতাংশ জমিতে ৪ হাজার ৭শ’ টাকা খরচ করে পরীক্ষামূলকভাবে তাইওয়ান ব্ল্যাকবেবি জাতের তরমুজ চাষ করেন। ২ মাসেই তিনি ২৩ হাজার টাকার তরমুজ বিক্রি করেন। তার এ অভাবনীয় সাফল্যে এবার এলাকায় প্রায় ২ হেক্টর জমিতে তাইওয়ান ওই জাতের তরমুজ চাষ করা হয়।
ব্ল্যাকবেবি ও মধুমালা জাতের তরমুজ শীতকাল ছাড়া বছরের সবসময় চাষ করা যায়। এর দামও ভালো পাওয়া যায়। মাচা পদ্ধতিতে চাষ করায় উৎপাদন হারও বেশি। মালচিং পেপার বেডে সেটিং ও নেটিংয়ের ফলে বৃষ্টি, পোকা-মাকড় ও ইঁদুরের আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। মাচা ও মালচিং পেপার তিন বার ব্যবহারের উপযোগী হওয়ায় ২য় ও ৩য় ধাপে তরমুজের উৎপাদন খরচও খুব কম হয়। কীটনাশক ছাড়া বিষমুক্ত, কেঁচো সার, কম্পোস্ট, বায়োনিম, ফেরোম্যান ট্যাপ ব্যবহারের ফলে রোগের প্রকোপ কম হয়।
কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার এগারসিন্দুর ইউনিয়নের আঙ্গীয়াদি গ্রামের কৃষক নুরুল ইসলাম। মাত্র এক বিঘা জমিতে বারোমাসি তরমুজ চাষ করেছেন তিনি। বর্ষাকালেও তার মাচায় ঝুলছে ছোট-বড় অনেক তরমুজ। বৈরী আবহাওয়ার মধ্যেও তরমুজ চাষ করে সফল এই কৃষক। এই তরমুজের স্বাদও ভালো। অসময়ে তরমুজের বাম্পার ফলন ও লাভজনক হওয়ায় এলাকার অনেক কৃষক তরমুজ চাষে আগ্রহী হচ্ছেন।
আঙ্গীয়াদি গ্রামে ধান ছাড়াও অন্যান্য সবজিও চাষ করা হতো একসময়। কিন্তু এ গ্রামের চাষিরা বারোমাসি তরমুজ চাষ করে ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়েছেন। ফলে অসময়ে তরমুজ চাষের দিন দিন জনপ্রিয়তা বাড়ছে। সারাবছরই এখন চাষ হচ্ছে বারোমাসি তরমুজ। এসব তরমুজ দেখতে গাঢ় সবুজ। আর কাটলে ভেতরে লাল। খেতেও ভালো।
বর্ষাকালেও তরমুজ চাষে সফল এবং ভালো দাম পাওয়ার এটি চাষে ঝুঁকছেন এ অঞ্চলের চাষিরা। এক সময় বছরে তিন মাস বাজারে তরমুজ পাওয়া গেলেও এখন মিলছে সারাবছরই। স্থানীয় কৃষি বিভাগও এ ব্যাপারে সার্বক্ষণিক সহযোগিতা করে যাচ্ছেন চাষিদের।
একই এলাকার আরেক চাষি রইছ উদ্দিন বলেন, অল্প সময়ে ভালো ফলন হয়েছে। দামও বেশ ভালো। প্রতি বিঘা জমিতে ৭০০-৮০০ তরমুজ হয়। প্রতি কেজি ৭০-৮০ টাকায় বিক্রি করা হয়। বাজারে তরমুজের চাহিদাও বেশি। অসময়ে তরমুজ চাষ করে তারা অনেক খুশি ও লাভবান। এসব তরমুজ বাজারে তুলতে হয় না। বাগান থেকেই পাইকাররা কিনে নিয়ে যায়। ফলে বাড়তি খরচও লাগছে না তাদের।
পাকুন্দিয়া উপ-সহকারী কৃষি অফিসার হামিমুল হক সোহাগ জানান, বর্ষাকালে তরমুজ চাষে কৃষকদের বীজ, পরামর্শ ও প্রয়োজনীয় কারিগরি সহযোগিতা দিয়ে আসছে স্থানীয় কৃষি বিভাগ। বর্ষাকালের এই তরমুজ চাষ করতে কৃষকের এক বিঘা জমিতে খরচ হচ্ছে ৪০-৫০ হাজার টাকা। ভালো ফলন হওয়ায় বিঘা প্রতি উৎপাদিত তরমুজ বিক্রি হচ্ছে আড়াই লাখ থেকে ৩ লাখ টাকায়।অল্প পুঁজি ও অল্প সময়ে লাভ বেশি হওয়াতে খুশি চাষিরা।
পাকুন্দিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাইফুল হাসান জানান, জেলায় বর্তমানে কয়েক হেক্টর জমিতে বারোমাসি এই তরমুজের চাষ হচ্ছে। তরমুজ বর্তমান সময়ে এ অঞ্চলের চাষিদের লাভজনক ব্যবসা। তাই স্থানীয় কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে সবরকম সহযোগিতা করা হবে। আগামীতে তরমুজ চাষ এ অঞ্চলসহ সব জায়গায় আরও বাড়বে।
ফার্মসএন্ডফার্মার/২৪জুলাই২০