গাইবান্ধা থেকে: গাইবান্ধায় এবার আউশ ধানের ভালো ফলন হয়েছে। বোরো ও আমন ধানের মাঝামাঝি সময়ে এ ধান ঘরে তুলতে পেরে কৃষকের চোখে-মুখে আনন্দের ঝিলিক দেখা দিয়েছে।
স্বল্প খরচ এবং বন্যা ও খরার ঝুঁকি কম থাকায় আউশ ধানের প্রতি কৃষকদের আগ্রহ দিনদিন বাড়ছে। স্থানীয়ভাবে এ ধান ‘বর্ষালী’ নামেই পরিচিত।
জেলা কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, জেলার সাত উপজেলায় ৭ হাজার ১৪০ হেক্টর জমিতে আউশ ধানের ফলন হয়েছে ৩০ হাজার মেট্রিক টন। যা গত বছরের চেয়ে ছয়গুন বেশি। তবে সাত উপজেলার মধ্যে সুন্দরগঞ্জ ও গোবিন্দগঞ্জ উপজেলায় আউশ ধানের চাষ বেশি হওয়ায় ফলনও বেশি হয়েছে।
সুন্দরগঞ্জ উপজেলার কৃষি অফিসার রাশেদুল ইসলাম জানান, চলিত বছরে এ উপজেলায় ২ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে আউশের ফলন হয়েছে বিঘা প্রতি গড়ে ১৬ মণ করে। যার পরিমাণ প্রায় ১২ হাজার মেট্রিক টন। বর্তমান বাজার অনুযায়ী এ ধানের মূল্য প্রায় ২২ কোটি টাকা।
তিনি আরো বলেন, বোরো ও আমন ধানের মধ্যবর্তী সময়ে কম খরচে আশানুরুপ ফলন পাওয়ায় কৃষকরা এ ধান চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। এছাড়াও আউশ ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা বৃদ্ধির জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে কৃষিবিদ ও ডিপ্লোমা কৃষিবিদরা। তারা কৃষকদের নানাভাবে সহযোগিতা করার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে আসছেন। আগামী বছর এ ধানের চাষ ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাবে।
আউশ ধানসুন্দরগঞ্জ উপজেলার রামজীবন ইউনিয়নের কৃষক কুদ্দুস আলী বলেন, দুই বিঘা জমিতে সাত হাজার টাকা খরচ করে ৩০ মণ ধান পেয়েছি। এর চেয়ে অনেক বেশি খরচ করে বোরো-আমন মৌসুমে অনেক সময় ৩০ মণ ধান পাওয়া যায় না। তাছাড়া এ সময়ে ধানের দামও ভাল পাওয়া যায়। গবাদি পশুর খড়ের চাহিদাও পূরণ হয়।
এদিকে, গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের ২ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে আউশের ফলন হয়েছে ১৩ হাজার মেট্রিক টন।
এ বিষয়ে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা ছহেরা বানু বলেন, বোরো-আমন ধান আবাদের মাঝামাঝি সময়ে কোনো ফসলের চাষ না থাকায় দীর্ঘ সময় এ উপজেলার অধিকাংশ জমি পতিত থাকতো । তবে আউশ ধান এ চিত্র পাল্টাতে শুরু করেছে।
তিনি আরো বলেন, আউশ মৌসুমের ব্রি-ধান-৪২, ৪৩, ৪৮ ও কুদরতের মতো নতুন নতুন উফশি জাত আসায় কৃষকদের মধ্যে এ ধান চাষের আগ্রহ যেমন বেড়েছে, তেমনি প্রতিবছর বৃদ্ধি পাচ্ছে আউশ ধান চাষের এলাকাও।
এ বছর গাইবান্ধা সদর, সাদুল্লাপুর, পলাশবাড়ি, সাঘাটা ও ফুলছড়ি উপজেলায় ১ হাজার ৯৪০ হেক্টর জমিতে আউশের ফলন হয়েছে প্রায় ৫ হাজার মেট্রিক টন।
জেলা কৃষি বিভাগ আশা করছে, আউশের চাষ এ বছরের তুলনায় আগামী বছর দ্বিগুন হবে। এতে করে এ ধান চাষের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতি আরো চাঙ্গা হবে।
ফার্মসঅ্যান্ডফার্মার২৪ডটকম/মোমিন