বাঁচার জন্য চাই সুন্দর ও নির্মল পরিবেশ

2028

সুস্থ ও সুন্দরভাবে আমরা সবাই বাচঁতে চাই। কিন্তু সুন্দরভাবে বাঁচার জন্য চাই সুন্দর পরিবেশ। চারপাশে যা কিছু আছে তা নিয়েই আমাদের পরিবেশ। পরিবেশের প্রতিটি বিষয়কে গুরুত্বের সাথে নিতে হয়। পরিবেশের প্রতিটি বিষয়ের যত্ন না নিলে আমাদের চারপাশটা সুন্দর হয় না। আর যাদের চারপাশের পরিবেশ সুন্দর না তারা নিজেরাও সুন্দর না।

পরিবেশ একটা পরিবারের মতো। পরিবারে যেমন বাবা, মা, ভাই, বোন, দাদা, দাদি আরো অনেকেই থাকে তেমনি পরিবেশেও থাকে নানা উপাদান। সেখানে থাকে বিভিন্ন গাছপালা, তৃণলতা, পশু-পাখি, পুকুর, নদী, মাছ। পরিবেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো গাছ। গাছপালা নানাভাবে আমাদের উপকার করে। আমরা যে নিঃশ্বাস নিয়ে বেঁচে থাকি তাতে থাকে অক্সিজেন সেটা গাছ তৈরি করে। যদি গাছ না থাকে তাহলে অক্সিজেন থাকবে না আর আমরাও বেঁচে থাকব না। সুতরাং বেঁচে থাকতে হলেও গাছ লাগাতে এবং গাছের পরিচর্যা করতে হবে। গাছ থেকে আমরা ফল, কাঠ পাই। গাছ আমাদের ছায়া দেয়, নির্মল বাতাস দেয়

বাবা-মা আমাদের খুব ভালোবাসেন এবং আমাদেরকে চকলেট, আইসক্রিম কত কিছু কিনে দেন বলে আমরা যেমন তাদের ভালোবাসি। ঠিক একইভাবে গাছপালা আমাদের তার থেকেও গুরুত্বপূর্ণ অক্সিজেন দেয়। চকলেট আইসক্রিম না খেলেও আমরা বেঁচে থাকতে পারব কিন্তু অক্সিজেন ছাড়া বেঁচে থাকা যাবে না। তাই পরিবেশের জন্য গাছ লাগাতে হবে। পাখিরাও পরিবেশের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। যেমন—কাকের কথাই চিন্তা করি। নামটা শুনলে হয়তো সবার খুবই ঘেন্না লাগতে পারে। কিন্তু এই কাক আমাদের পরিবেশকে সুন্দর রাখে। খাবারের যে উচ্ছিষ্ট অংশ ফেলে দেই, কাক সেসব ময়লা খেয়ে পরিবেশকে সুন্দর রাখে। এ বিষয়ে একটা গল্প বলা যেতে পারে।

এক কাঠুরিয়া বন থেকে গাছ কেটে পুরো বন শেষ করে দিয়ে পরিবেশ নষ্ট করছিল। সেই বনে দুটো বড় গাছ ছিল। একটার নাম চিন্টু আরেকটার নাম পিন্টু। কাঠুরিয়া ওই গাছ দুটো কেটে নেওয়ার মতলব করল। গাছ দুটোর ছিল অনেক বন্ধু। বানরেরা ছিল তার বন্ধু, কারণ তারা ডালে ডালে ঝুলে বেড়াত। পাখিরা ছিল তার বন্ধু কারণ, পাখিরাও এসে বাসা বাঁধত তার ডালে। ভালুক, শিয়াল, টিয়া আরো অনেকেই ছিল তার বন্ধু। একদিন কাঠুরে আসলো। চিন্টু আর পিন্টু সব বন্ধুকে বলল, ওই যে কাঠুরে আসছে তোমরা পালাও। বন্ধুরা কেউ পালাল না। বলল, তোমরা ঝড় বৃষ্টি রোদ সব কিছুতে বন্ধু হয়ে আমাদেরকে রক্ষা করেছ।

আজ তোমাদের বিপদের দিনে আমরা কেন পালিয়ে যাব? তারা বুদ্ধি করল। কাঠুরিয়া যখন গাছ কাটবে বলে কুঠার হাতে নিল তখন বানরগুলো একযোগে ঝাঁপিয়ে পড়ল কাঠুরিয়ার ওপর। পাখিরা এসে কিচিরমিচির করে তার কানে তালা লাগিয়ে দিল আর টিয়াগুলো এসে কাঠুরিয়ার গায়ে ঠোকর মারতে লাগল। তখন ভালুকটা আসলো। কিন্তু ভালুক তখন কাঠুরিয়াকে ঘাড় মটকে না দিয়ে বলল, এই গাছ আমাদের ছায়া দেয়, অক্সিজেন দেয়, নির্মল বাতাস দেয়, ঝড় থেকে আমাদের বাঁচায়। এই উপকারী বন্ধুকে তুমি শেষ করে দিতে চাও? কাঠুরিয়া তার ভুল বুঝতে পারল এবং ক্ষমা চাইল। তার পর থেকে সুযোগ পেলেই কাঠুরিয়া নতুন গাছ লাগাত। একদিন আবার সেই বন সবুজে সবুজে ভরে গেল।

মানুষ পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ জীব। তাই তাদের দায়িত্ব আরো বেশি। যে পরিবেশে থাকি তাকে সুন্দর রাখা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। দূষিত ও বিষাক্ত পরিবেশে থাকলে নানা রোগে আক্রান্ত হতে হবে। আমাদের শিশুরা বিকলাঙ্গ হয়ে জন্মাবে। প্রত্যেকের উচিত পরিবেশকে সুন্দর রাখা। যখন একটা চকলেট বা আইসক্রিম খাই তখন আমাদের দায়িত্ব খোসাটা নির্দিষ্ট স্থানে ফেলা। যেখানে সেখানে ময়লা ফেললে পরিবেশ নষ্ট হয়। আমরা বাড়ির আঙিনাতে, ছাদে গাছ লাগিয়ে পরিবেশকে সুন্দর রাখতে পারি। পরিবেশ আর মন সুন্দর রাখলে আমাদের জীবন হয়ে উঠবে অনেক সুন্দর ও আনন্দময়।
ফার্মসএন্ডফার্মার২৪/জেডএইচ