বাংলাদেশি পণ্যের চাহিদা বাড়ছে প্রবাসে

462

1-3-e1546010804772

প্রবাস থেকে পাঠানো আয় বা রেমিটেন্স মজবুত করেছে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ভিতকে। বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশের উন্নয়ন এখন আলোচনার বিষয়। তবে মধ্যপ্রাচ্যসহ অন্যান্য দেশে জনশক্তি রফতানিতে বাংলাদেশের জন্য নানা ধরণের সমস্যা তৈরি হয়েছে। ফলে জনশক্তি রফতানি খাতের চাহিদাও দিনকে দিন কমে যাচ্ছে।

বাংলাদেশের জনশক্তির অন্যতম বাজার সৌদি আরবে প্রায় ১৮ থেকে ২০ লাখ বাংলাদেশির বসবাস। এই হারও নানাবিধ কারণে হ্রাস পাচ্ছে। ফলে বেশ কয়েক বছর ধরে রেমিটেন্স প্রবাহে নিম্নগতির সৃষ্টি হয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যসহ উন্নত বিশ্বে অভিবাসী জীবনের ক্রান্তিকালের সাক্ষী এখন পুরো পৃথিবী। দেশ থেকে টাকা নিয়ে প্রবাসে জীবনযাপন করতে হচ্ছে অনেক বাংলাদেশিকে। মধ্যপ্রাচ্যের দেশ বাহরাইনে এমন অনেকেই আছে যাদের দেশ থেকে টাকা এনে নিত্যদিনের খরচ মেটাতে হয়।

জনশক্তি রফতানির বাইরেও আমাদের দেশের বেশ কিছু সম্ভাবনার খাত রয়েছে যেখান থেকে প্রচুর পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব। যেমন সৌদি আরবের রফতানি বাণিজ্যে বাংলাদেশি পণ্যের চাহিদা অনেক। রফতানির ক্ষেত্রে গার্মেন্টস পণ্য, ইলেকট্রিক এন্ড ইলেকট্রনিক্স, নানা ধরণের সবজি যেমন রয়েছে তেমনি অনেকেই সেখানে বিভিন্ন ধরণের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান করে লাভবান হচ্ছে। বিশেষ করে কফি শপসহ রেস্টুরেন্ট ব্যবসায় কেউ কেউ ভালো করছে। নিয়মিতই বাংলাদেশ থেকে অনেক পণ্য সৌদিতে যাচ্ছে। সৌদির বাজারে ভালো ব্যবসা করছে এই পণ্যগুলো।

আগামী দিনে বৈদেশিক আয়ে রফতানি বাণিজ্যের সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি বলে মনে করেন প্রবাসী বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা। ভয়েস বাংলার সঙ্গে কথা হয় সৌদি প্রবাসী ব্যবসায়ী মাহমুদ হাসান চৌধুরী টিটুর। তিনি বলেন, ‘বিদেশে আমাদের দেশীয় পণ্যের চাহিদা অনেক। এর মধ্যে নতুন করে বাংলাদেশি আরেকটি পণ্য রফতানির সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। আর তা হলো মিনারেল ওয়াটার।

সৌদি আরবের সঙ্গে বাংলাদেশি বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের কথা হচ্ছে রফতানির ব্যপারে। আমাদের মিঠা পানির ব্যাপক চাহিদাও রয়েছে সৌদিতে। আমরা যদি মিনারেল ওয়াটার রফতানি করতে পারি তবে এটা হবে আমাদের রফতানি বাণিজ্যে আরেকটি মাইলফলক।’

বাংলাদেশি পণ্য রফতানির এমন অসংখ্য সম্ভাবনা থাকার পরও কিছু সমস্যা এক্ষেত্রে বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। যে সমস্যাগুলো সমাধান করতে পারলে রফতানি বাণিজ্যে বাংলাদেশের অগ্রগতি আরো বেড়ে যাবে নিঃসন্দেহে। এ বিষয়ে সৌদি প্রবাসী ব্যবসায়ী টিটু জানান, ‘বিদেশে পণ্য রফতানির ক্ষেত্রে আমাদের যেতে হয় নানা ধরণের প্রতিবন্ধকতার মধ্য দিয়ে। এর মধ্যে অন্যতম একটি প্রতিবন্ধকতা হলো কার্গো বিমান না থাকা। ফলে যাত্রী বিমান ভাড়া করে মালামাল পাঠাতে হয়।

এতে বিভিন্ন ধরণের সবজি যেমন পুঁই শাক, পটল, ঢেড়স নষ্ট হয়ে যায়। যাত্রী বিমানে পণ্য যেখানে রাখা হয় সে জায়গাও শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত নয়। ফলে পণ্যগুলো অনেক সময় পৌঁছার আগেই নষ্ট হয়ে যায়। সেজন্য দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের বিকাশের স্বার্থে কার্গো বিমানের ব্যবস্থা করতে সরকারের ভূমিকা প্রয়োজন। ’

যোগাযোগ ব্যবস্থায় পরিবহন হিসেবে বাংলাদেশ বিমানের নানা অসঙ্গতি সম্পর্কেও কথা বলেন প্রবাসী ব্যবসায়ী মাহমুদ হাসান চৌধুরী টিটিু। তিনি জানান, ‘দুঃখ জনক হলেও সত্য আমরা প্রবাসী বলে আমাদের তেমন কোন সম্মান নেই। বিমানবন্দরে আমাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করা হয়। কিছুদিন আগে ঢাকায় বিমানবন্দরে দেখলাম বিমানের এক কর্মকর্তা একজন প্রবাসী যাত্রীকে ধমকাচ্ছে। কারণ সেই প্রবাসী একটি বড় ব্যাগ উঠাতে পারছিল না।

এখন প্রশ্ন এই যদি হয় আমাদের অবস্থা তাহলে প্রবাসীরা কী সম্মান পেল। রিয়াদে বিমানবন্দরে প্রবাসীরা হয়রানির শিকার হয়ে থাকে নিয়মিত। এটা সবাই জানে রিয়াদে আমাদের বিমানকে ভিনদেশি কিছু মানুষ নিয়ন্ত্রণ করে। আমাদের রফতানি বানিজ্যের অগ্রগতির স্বার্থে পরিবহন সেবার যে প্রতিবন্ধকতা আছে তা দূর করার কোন বিকল্প নেই। এর ফলে প্রবাসীদের অর্থে দেশের উন্নয়নের চাকা আরো গতি পাবে।’

দেশে বিনিয়োগের ক্ষেত্রেও কিছু সমস্যা রয়েছে বলে মনে করেন সৌদি প্রবাসী বাংলাদেশি ব্যবসায়ী মাহমুদ হাসান চৌধুরী টিটু। তিনি বলেন, আমরা দেশে বিনিয়োগ করতে চাই। বিদেশে বিভন্ন খাতে আমাদের অনেক টাকা বিনিয়োগ করা আছে। এখন আমরা দেশের জন্য কিছু করতে চাই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করব আমাদের সুযোগ করে দিন আমরা দেশের অবকাঠামো উন্নয়নে সহযোগীতা করতে প্রস্তুত। আমরা সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নে প্রকল্পে কাজ করতে চাই।’

প্রকৃতপক্ষে আগামী দিনের উন্নয়ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আমাদের সামনে রয়েছে অনেক সম্ভাবনা। আর সেই সম্ভাবনাকে বাস্তবে রূপ দিতে হলে যে প্রতিবন্ধকতাগুলো সামনে আসবে তা দূর করতে হবে, তাহলে আমাদের উন্নয়ন ও অগ্রগতি আরো গতিময় হবে। সম্পাদনা: ফারিয়া হোসেন। তথ্যসূত্র: ভয়েস বাংলা।
ফার্মসএন্ডফার্মার২৪/জেডএইচ