বাংলাদেশেও ফলছে মরুভূমির ত্বীন ফল

970

বাংলাদেশের আবহাওয়ার সাথে খাপ খাইয়ে নিয়েছে পবিত্র কোরআন শরীফে উল্লেখিত মরুভূমির ত্বীন ফল। ছাদবাগানে এ ফলের সফল চাষ করে ইতোমধ্যেই নজর কেড়েছেন সাতক্ষীরার এক যুবক। ত্বীন মরুভূমির ফল হলেও বাংলাদেশের মাটি ও নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়ার সাথে বেশ খাপ খাইয়ে নিয়েছে রসে ভরা, মিষ্টি ও সুস্বাদু এই জান্নাতি ফল।

মুসলমানদের ধর্মগ্রন্থ পবিত্র কোরআন শরীফে এই ত্বীন ফল নিয়ে একটি সূরাও রয়েছে। যে দুটি ফলের শপথ করে সুরা আত-ত্বীন নাজিল হয় তার মধ্যে যয়তুন (জলপাই) এর সাথে রয়েছে এই ত্বীন ফলের নাম। ত্বীন শব্দের অর্থ হচ্ছে আঞ্জির বা ডুমুর। তাই একে অনেকে ডুমুর ফল বলেও ডাকেন। আরবে সেই যুগে এই ত্বীন ও যয়তুন ছিলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দুটি ফল, খাদ্য ও অর্থকরী ফসল হিসেবে এর গুরুত্ব ছিল অসীম।

গুরুত্বপূর্ণ এই ফল বাংলাদেশে নিয়ে এসে চাষ শুরু করেন সাতক্ষীরা শহরের কাটিয়া সরকার পাড়ার আসিফুর রহমান নামের এক যুবক। তার ছাদ বাগানে গড়ে তোলা দেশি বিদেশি মিশ্র ফলের বাগানে ইতোমধ্যেই ফল দিতে শুরু করেছে ত্বীন গাছ।

আসিফুর রহমান জানান, “পবিত্র কোরআন শরীফে ত্বীন ও যয়তুন ফলের কথা উল্লেখ আছে জেনে ত্বীন ফল চাষে আগ্রহী হয়ে উঠি। প্রথমে খুলনা পরে ঢাকায় যোগাযোগ করে জানতে পারি বাংলাদেশেও ত্বীন ফল চাষ করা সম্ভব। পরে আমার এক বন্ধুর মাধ্যমে মিশর থেকে নিয়ে আসি একটি ত্বীন চারা।”

এখন ছাদবাগানে ৮ থেকে ১০ প্রজাতির ত্বীনগাছ রয়েছে জানিয়ে আসিফ বলেন, মাটিতে জৈব সার মিশিয়ে ছাদের রোদে টবে লাগিয়েছেন তিনি কয়েক প্রজাতির ত্বীন। বর্ষা ও শীতে ফল কম হলেও বছরের অন্যান্য সময়ে প্রতিটি পাতার গোড়ায় জন্মে একটি করে ফল। আসিফ জানান, স্বাভাবিক পরিচর্যায় জৈব সারেই বেড়ে ওঠে। মাত্র ছয়মাসের ব্যবধানে ত্বীন ফল পাকতে শুরু করে। পাকলে প্রকার ভেদে লাল, খয়েরি, গোলাপী ও হলুদাভ রংয়ের এই ফল আকারেও বেশ বড় হয়।

ত্বীন ছাড়াও পবিত্র কোরআনের ওই সূরায় উল্লেখিত যয়তুনের গাছও রয়েছে আসিফের ছাদ বাগানে। এছাড়া সুইট লেমন, সাদা জাম, লাল জামরুল, লাল আতা, বারোমাসি আমড়া, মালবেরি, স্ট্র বেরি, লাল আতায় সমৃদ্ধ এই ফল বাগানে নিয়মিত ভীড় করেন স্থানীয় এবং বাইরে থেকে আসা দর্শনার্থীরা।

ত্বীন ফল বাংলাদেশে ড্রাই ফুড হিসাবে আমদানি করা হয়ে থাকে। বানিজ্যিকভাবে এর উৎপাদন বাড়ানো গেলে দেশের পুষ্টি চাহিদা পূরণে তা সহায়ক হতে পারে বলে জানান স্বাতক্ষীরা সদর কৃষি কর্মকর্তা আমজাদ হোসেন।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. মো: আব্দুর রহিম বলেন, ব্রেস্ট ক্যান্সার রোধে এই ফল খুবই উপকারী। বাংলাদেশের ৩৪ শতাংশ নারী য়েখানে ব্রেস্ট ক্যান্সার ঝুঁকিতে আছেন, সেখানে এই ত্বীন ফল এই ঝুঁকি হ্রাসে সহায়ক শক্তি হিসাবে কাজ করতে পারে। এর আরও অনেক ভেষজ গুণ রয়েছে বলেও জানান ড. রহিম। বিশেষ করে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে ত্বীন। এতে আছে প্রচুর পটাসিয়াম ও ক্যালসিয়াম। পুষ্টি চাহিদা পূরণেও ত্বীন গুরুত্বপূর্ণ।

ত্বীন চাষাবাদে সফল আসিফ জানান, বাংলাদেশে এই ফলের চারা অনেকটাই সহজলভ্য। স্বাভাবিক পরিচর্যার মাধ্যমে ত্বীন বড় হয়ে ওঠে। বেশি পানি ব্যবহার করতে হয় না।

সৌদি আরব ও বাংলাদেশ এই ফলকে ত্বীন ফল নামে ডাকলেও অন্যান্য দেশ বিশেষ করে ভারত, তুরস্ক, মিশর, জর্ডান ও আমেরিকায় এর নাম আঞ্জির।

ফার্মসএন্ডফার্মার/৩০মে২০