বাংলাদেশে চাষ হচ্ছে জাপানের জাতীয় ফল “পার্সিমন”

1968

পার্সিমন

সবুজে মোড়ানো আমাদের বাংলাদেশ। এদেশের মাটি সোনার চেয়েও খাটি। এদেশের মাটিতে কি ফলে না! উর্বর এই মাটিতে দেশি-বিদেশি সব ফসলের ঈর্ষণীয় উৎপাদন হয়। শান্তজ হলুদ বিকেলে নদীর ধারে পড়ন্ত রোদের সম্মুখে বসে কবি উদাস মনে গেয়ে উঠলেন ”ও ভাই খাঁটি সোনার চেয়ে খাঁটি আমার দেশের মাটি” সেদিনের সেই কবির কথাটাই যেন আজ সত্য বলে প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে।

এবার নাটোরে চাষাবাদ হচ্ছে জাপানের জাতীয় ফল পার্সিমন। যদিও নাটোরে সীমিত আকারে পার্সিমনের ফলন পাওয়া যাচ্ছে। তবে দ্রুত এই বিদেশি ফল এ দেশের মানুষের কাছে নন্দিত হবে এটাই আশা করছেন উদ্যানতত্ত্ববিদরা। জাপান, ইতালি, থাইল্যান্ড এবং ভিয়েতনাম থেকে সংগ্রহ করা ১৫টি পার্সিমন গাছে ফল ধরানোর চেষ্টায় নিজেকে নিয়োজিত করেন দেশের প্রখ্যাত ফল গবেষক এস এম কামরুজ্জামান।

নাটোরের মডার্ন হর্টিকালচার সেন্টারে তার কয়েক বছরের অক্লান্ত প্রচেষ্টা সফলতা পায় ২০১০ সালে। বর্তমানে তার প্রায় কুড়ি ফুট উচ্চতার ছয়টি গাছের প্রত্যেকটিতে দেড় থেকে দুই হাজার করে পার্সিমন ফল ধরেছে। রং এবং আকৃতিতে এ দেশের টমেটো এবং গাবের সঙ্গে সাদৃশ্য থাকা পার্সিমন ফল হলুদ ও কমলা রঙের মিশ্রণে গাছে ধরে রাশি রাশি। গাছ হয়ে ওঠে সুশোভিত। ছয় থেকে সাতটা ফলে এক কিলোগ্রাম হয়। সুস্বাদু ও রসালো পার্সিমনের মধ্যে ছবেদার মতো কয়েকটি বিচিও থাকে।

ভিয়েতনামের পার্সিমন খানিকটা কচকচা। জাপানের পার্সিমন বিচিমুক্ত হবে বলে আশাবাদী এস এম কামরুজ্জামান। পার্সিমন গাছে ফুল আসে মার্চে আর ফল সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে। তবে ফল প্রাপ্তির সময়কে দীর্ঘায়িত করে নভেম্বরে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টায় কাজ করছেন এই উদ্যানতত্ত্ববিদ ও অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত সচিব এস এম কামরুজ্জামান। তিনি বলেন, নভেম্বরে এ দেশে উৎপাদিত কোনো ফল নেই। ফলশূন্য নভেম্বরে এই ফল উৎপাদনের মাধ্যমে দেশের মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে পারলে অবশ্যই জনপ্রিয় হয়ে উঠবে।

মডার্ন হর্টিকালচার সেন্টারে থাকা গাছগুলোকে মাতৃগাছ হিসেবে ব্যবহার করে এক হাজার চারা তৈরি করা হচ্ছে। এসব চারা বাণিজ্যিকভাবে ছড়িয়ে যাবে সারাদেশে। আর এসব গাছ থেকে ফল পাওয়া যাবে তিন থেকে চার বছরের মধ্যে। এক সময় দেশের মানুষের কাছে পরিচিত হয়ে উঠবে।

যদিও পার্সিমনের উৎপত্তি চায়নাতে হলেও জাপান, কোরীয় উপদ্বীপ ছাড়িয়ে চলে গেছে ইউরোপ ও আমেরিকাতে। ভিটামিন এ, বি এবং সি’তে ভরপুর এই ফল। রয়েছে এন্টি অক্সিডেন্ট এবং পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, ফসফরাস ও কপারসহ একাধিক খনিজ লবণ। মানুষের শরীরের জন্য উপকারী পার্সিমনের অসংখ্য গুণাগুণ থাকলেও এতে থাকা পেকটিন রক্তচাপ এবং বস্নাড সুগার নিয়ন্ত্রণে অনন্য।

ফার্মসএন্ডফার্মার২৪/জেডএইচ