কৃত্রিম প্রজনন কি?
পুরুষ প্রানী থেকে বীর্য সংগ্রহ করে হাতেনাতে স্ত্রী জননাঙ্গে সংস্থাপিত করাকে কৃত্রিম প্রজনন বলা হয়।সঠিক জ্ঞান এবং পদ্ধতিই এতে যথাযথ সফলতা আনতে পারে।কিন্তু প্রজনন কারীর সঠিক জ্ঞান এবং দক্ষতার অভাবে কৃত্রিম প্রজননের সাফল্য নিরুৎসাহজনকভাবে খারাপ হতে পারে।
কৃত্রিম প্রজননের সুবিধাঃ
কৃত্রিম প্রজনন করলে যে কোন ছোট খাট খামারে ছাগ(পাঠা) রাখার প্রয়োজন হয়না। ফলে ছাগের জন্য খাবার,ঘর এবং অন্যান্য ব্যবস্থপনার খরচ বেঁচে যায়।
১.শ্রেষ্ঠতর ছাগের বীর্য ব্যাবহার হলে এই পদ্ধতিতে দ্রুত উন্নততর ছাগল উৎপন্ন হয়।
২,রোগ ছড়ানোর বিপদ ব্যাপক ভাবে কমে যায়।
৩.প্রজনন করানোর সঠিক সময় ভালভাবে নিয়ন্ত্রন করা যায় এবং পালক সঠিক ভাবে প্রজননের সময় জানতে পারে যেটা ছাগ-ছাগী একসাথে চরানো হলে খুবই মুশকিল হয়ে পড়ে।
৪.(বিঃ দ্রঃ কৃত্রিম প্রজনন শুরু হলে গ্রামের মানুষ যারা ২/৪ টি ছাগী পালন করে সে সব মা, বোনেরা,বাচ্চারা, লজাস্কর অবস্থায় দাড়িয়ে পাঠাঁর কাছে তারা ছগীটি নিয়ে পাঁঠা বাড়ী লাইন দেওয়ার হাত থেকে রক্ষা পাবে।#পাঠাঁ পালনের জন্য সমাজে যে নেরো মানসিকতা রয়েছে তা থেকে# সামাজীক ধক্কিারও কমবে ) গরুর ক্ষেত্রেও হুবহু এখন কৃত্রিম প্রজননই চলছে যা ইতি পুর্বে ছিলনা।)
অসুবিধাঃ
১.গরম হওয়ার সঠিক সময় নির্ধারণ এবং সঠিক পদ্ধতিতে কৃত্রিম প্রজনেনর জন্য উপযুক্ত প্রশিক্ষিত লোক প্রয়োজন।
২.তুলনামুলকভাবে স্বাভাবিক প্রজননের থেকে কৃত্রিম প্রজননে গর্ভধারণের হার কম হয়।
৩.যদি মনোনিত পাঁঠার কোন বংশগত খুঁত থাকে তাহলে দ্রুত বহু ছাগলের মধ্যে তা প্রসারিত হয়।
ছাগলের বীর্য সংরক্ষণঃ
তরল বীর্য হিমায়ন তাপমাত্রায় (৪থেকে ৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস)
অথবা হিমায়িত বীর্য(-)১৯৬ ডিগ্রী সেরসিয়াস তাপমাত্রায়
তরর নাইট্রোজেনে মজুদ করা যায়,তরল বীর্য মজুত করার ৩থেকে ৫দিনের মধ্যে কৃত্রিম প্রজননের জন্য ব্যবহার করলে সাফল্যের ফল ভাল হয়।
সঞ্চিত হিমায়িত বীর্য যতদিন খুশি ব্যবহার করা যায়।কিন্তু ঠাণ্ডা-গরম জনিত আঘাতেরফলে তরল বীর্যের থেকে তুলনা মূলক ভাবে গর্ভধারণের হার এতে কম হয়।
কৃত্রিম প্রজননে ব্যবহৃত দ্রব্যসমুহঃ
১.তরল নাইট্রোজেন আধার (হিমায়িত বীর্যের জন্য )
২.হীমযন্ত্র বা ঠাণ্ডা করার যন্ত্র(তরল বীর্যের জন্য )
৩.ভ্যাজাইনাল স্পেকুলাম বা যোনীজনিত দর্পন
৪.নির্বীজ পিচ্ছিল পর্দাথ(শ্রক্রানু অবিনাশক)
৫.প্রজনন বন্দুক
৬.থার্মোসফ্লাক্স
৭.তোয়লা,কাচি,তাপমানযন্ত্র
৮.বীর্যনল,খাপ ইত্যাদি।
হিমায়িত বীর্যের কৃত্রিম প্রজনন পদ্ধতিঃ
তরল নাইট্রোজেনের আধার থেকে বীর্যনল বের করুন এবং যত তাড়াতাড়ি সম্ভব গরম পানিতে পুর্ণ(৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রী সেলসিয়াস)থার্মোফ্লাক্সে বীর্য নলটিকে ৬০ সেকেন্ডের জন্য রাখুন। ফ্লাক্স থেকে বীর্য নলটি বের করে আনুন এবং পরিষ্কার তুলো দিয়ে খুব ভাবে পরিষ্কার করুন। শুক্রানুকে রক্ষার জন্য গলানো বীর্য কখনোই সরাসরি সূর্যের আলো বা ঠাণ্ডা তাপমাত্রায় অনাবৃত করা উচিৎ নয়।
গলানো বীর্যনল যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ব্রবহার করা উচিত এবং ব্যবহৃত না হলে কখনোই পুনরায় তরল নাইট্রোজেনে রাখা উচিৎ নয়।কৃত্রিম প্রজনন বন্দুকে তুলোর ছিপি/উপর্যুপরিবন্ধ/কারখানাজাত বন্ধ অবস্থায় বীর্য নল ভর্তি করুন এবং দেখুন যেন বন্দুকের মধ্যে যেন উঠা নামা করতে পারে।বন্দুকে ভালভাবে ভর্তি হয়ে যাবার পর বীর্যনলের ছিপিযুক্ত দিকটি ধারালো কাঁচি দিয়ে কেটে দিন।বন্দুকের মধ্যে খাপটি এবার
ভালভাবে রাখুন এবং সঠিকভাবে রক্ষা করুন।
গরম মাদ ছাগলের পিছনের পা ভালভাবে এবং শক্তভাবে ধরে একটু তুলুন।যদি উলম্বভাবে ধরা না হয় তাহলে সঠিক ভাবে দেখাও যাবে না এবং সারভিক্সে ঢোকানোও যাবে না।তুলো দিযে যোনীদারটি যত্নের সাথে পরিষ্কার করুন।যেন কোন মল বা নোংরা না থাকে।
শুক্রানু অবিনাশক কোন খনিজ তেল বা জেল দিয়ে ভ্যাজাইনাল স্পেকুলাম পিচ্ছিল করুন।ধীরে এবং যত্নের সঙ্গে স্পেকুলামটি একটু উঠানামা গতি ও সামান্য চাপ দিয়ে ঢোকান। যোনীনালীলর মধ্যে স্পেকুলামের গভীরতা মাদী ছাগলের আকৃতির উপর নির্ভর করবে।
সদ্য বয়ঃস্বন্ধিপ্রাপ্ত ছাগলের যোনদ্বিার এবং যোনীনালী ছোট আকৃতির হবে,ফলে স্পেকুলাম যোনী নালীতে বেশি ঢুকাতে হবেনা।স্পেকুলাম একবার সঠিক জায়গায় গেলে টর্চ জ্বেলে সারভিক্স খোলা আছে কিনা দেখে নিন।খোলাটা দেখে নিয়ে প্রজনন বন্দুক স্পেকুলামের মধ্যে দিয়ে খোলা সার্ভিক্সে রাখুন। বেশী চাপ দিয়ে সার্ভিক্সে ঢোকাবেন না।যতদুর সম্ভব মুক্ত এবং মসৃণভাবে ঢোকান ও ধীরে ধীরে সার্ভিক্সে বীর্য নিষ্কাশন করুন। নজর রাখুন বীর্য যেন স্পেকুলাম বা সার্ভিক্স থেকে দুরে যোনীনালীতে না পড়ে।প্রজননের পরে ধীরে ধীরে প্রজনন বন্দুক বের করে আনুন।
প্রজনন বন্দুক এবং স্পেকুলাম ভালভাবে পরিষ্কার করুন এবং স্বাস্থ্যকর অবস্থায় রাখুন।
পুরো কৃত্রিম প্রজনন প্রক্রীয়াকালে মাদী ছাগলের যাতে কোন আঘাত না লাগে সেইভাবে ছাগলটিকে সংযত রাখুন।
হিমায়িত বীর্য ব্যবহারকালীন গুরুত্বপূর্ণ স্মরণীয় তথ্যঃ
আধারের মধ্যে সব সময় তরল নাইট্রোজেনের পরিমাণ সন্তোষজনক অবস্থায় বজায় রাখা উচিৎ। বীর্যনল তরল নাইট্রোজেনে ডুবে থাকে। যদি সঠিক পরিমাণ তরল নাইট্রোজেন না থাকে তাহলে শুক্রানূগুলি নষ্ট হয়ে যায় এবং গর্ভধারণের হার কমে যায়।
আধারের মধ্যে বীর্য রাখার পাত্রটি কখনোই আধারের গলার উপরে ওঠানো উচিৎ নয়।বার বার বীর্য রাখার পাত্র গলার উপরে উঠালে শুক্রানুর বেঁচে থাকার ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়। ক্রুটিপুর্ণ বীর্যনল স্বাভাবিক অবস্থায় আনার সময় ফুটো বা বিস্ফোরিত হয়ে যেতে পারে এবং সেক্ষেত্রে প্রজননে ব্যবহার করা উচিৎনয়।
উপসংহারঃপরিশেষে এটা ঠিক যে তরল কিংবা হিমায়িত বীর্য ব্যবহারের দ্বারা কৃত্রিম প্রজননে উত্তম গুণসম্পন্ন বাচ্চা পাওয়া যাবে এবং তাছাড়াও এই বঙ্গীয় (ব্লাক বেঙ্গল)প্রজাতির ছাগলের গুণগত মানও বজায় রাখা সম্ভব।