বাংলাদেশে পোল্ট্রি শিল্প একটি ক্রমবর্ধনশীল লাভজনক শিল্প। মুরগি পালনের সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা রোগ। বিভিন্ন রোগের কারণে এই পোল্ট্রি শিল্প মারাত্বকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
পোল্ট্রির বিভিন্ন রোগ বালাইয়ের মধ্যে ভাইরাসজনিত (রানীক্ষেত, গামবোরো, ম্যারেকস্, এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা, ডাক প্লেগ, ইনফেকসাস ল্যারিংগোট্র্যাকিয়াইটিস), ব্যাকটেরিয়াজনিত (ফাউল কলেরা, ফাউল টাইফয়েড, মাইকোপ্লাজমোসিস) ও পরজীবিজনিত (রক্ত আমাশায়, কৃমি) রোগ উল্লেখযোগ্য।
টার্কিতে সাধারণত রাণীক্ষেত, মাইকোপ্লাজমা, এভিয়ান রাইনোট্রাকিয়াইটিস, হিমোরেজিক এন্টারাইটিস ভাইরাস, রক্ত আমাশয়, ফিতা কৃমি, গোল কৃমি, ব্ল্যাক হেড, ফাউল পক্স, নেক্রোটিক এন্টারাইটিস, ফাউল কলেরা ইত্যাদি রোগ হয়ে থাকে। এছাড়া বিভিন্ন প্রকার রাসায়নিক বিষাক্ত পদার্থ, টক্সিন, নিম্নমানের খাদ্য, আবহাওয়া এবং পরিবেশ টার্কি পালনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারে।
কবুতরের বিভিন্ন রোগের মধ্যে ঠান্ডাজনিত রোগ, ডাইরিয়া, ক্যাংকার, কক্সিডিওসিস, নিউমোনিয়া, এগ বাইন্ডিং, ম্যালেরিয়া, গোল কৃমি জাতীয় রোগ উল্লেখযোগ্য।
রোগের লক্ষণঃ রানীক্ষেত রোগে চুনা পানির মত সাদা পাতলা পায়খানা হয়, মুরগি ঝিমায় ও মুখ হা-করে শ্বাস-প্রশ্বাস ত্যাগ কওে এবং ঘাড়, পাখা ও পায়ের অবসতা দেখা দেয়।
গামবোরো রোগে আক্রান্ত মোরগ-মুরগি তার নিজ মলদ্বার ঠুকরায়, পায়ের গিরা ফুলে যায় এবং খুঁড়িয়ে হাঁটে, কাঁপুনি হয় এবং অতি ক্লান্তিতে মাটিতে শুয়ে পড়ে। শরীরে পানি স্বল্পত দেখা দেয় এবং পিপাসা বৃদ্ধি পায়।
ম্যারেকস্ বা ফাউল প্যারালাইসিস রোগে বিভিন্ন অঙ্গের স্নায়ুতন্ত্র আক্রান্ত হয়ে পক্ষাঘাতের সৃষ্টি হয়।
এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা রোগ হলে মুরগির মাথা ফুলে যায়,।মাথা গাঁঢ় নীল রং ধারণ করে, মুরগির চামড়ার নিচে এবং পায়ে রক্ত জমাট বাধে।
ডাক প্লেগ রোগে আক্রান্ত হাঁস আলোর প্রতি অধিক সংবেদনশীল হয়, ক্ষুধামন্দা থাকে এবং ঘনঘন পানি পান করে, পালক কুঁচকে যায় এবং পাখা ও মাথা নিচের দিকে ঝুলে পড়ে।
ইনফেকসাস ল্যারিংগোট্র্যাকিয়াইটিস রোগে মুরগির শ্বাসযন্ত্রে ঘড় ঘড়, সাঁ সাঁ শব্দ ও কাশি হয়।
ফাউল কলেরা এর ক্ষেত্রে হাঁস-মুরগির পাতলা সবুজ পায়খানা হয়, হাঁটু ও মাথা ফুলে যায়, মাথার ঝুটি ও কানের লতি নীলাভ রং ধারণ করে।
ফাউল টাইফয়েড রোগে সবুজ বা হলুদ বর্ণের অতি দূর্গন্ধযুক্ত ডায়রিয়া দেখা দেয়, মাথা ও ঝুটি বিবর্ণ ও সংকুচিত হয়।
মাইকোপ্লাজমোসিস বা ক্রনিক রেসপিরেটরী ডিজিজ রোগে আক্রান্ত মোরগ-মুরগির শ্বাসনালীতে ঘড় ঘড় শব্দ হয়, নাক দিয়ে সর্দি ঝরা সহ হাঁচি ও কাশি পরিলক্ষিত হয়।
রক্ত আমাশায় রোগে লাল বা রক্তমিশ্রিত পাতলা পায়খানা করে, পালক ঝুলে পড়ে, বসে বসে ঝিমায় এবং আক্রান্ত বাচ্চাগুলো একত্রে জড়ো হয়ে থাকে।
চিকিৎসাঃ ভাইরাসজনিত রোগে কার্যকরী কোন চিকিৎসা নাই। সহায়ক চিকিৎসা হিসেবে স্যালাইন ও ভিটামিন এবং দ্বিতীয় পর্যায়ের সংক্রমন রোধে এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করা যেতে পারে। ব্যাকটেরিয়াজনিক রোগের ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী বিভিন্ন এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করা যেতে পারে। রক্ত আমাশায় এর ক্ষেত্রে সালফানামাইড জাতীয় ঔষধ দ্বারা চিকিৎসা করা যেতে পারে। ম্যালেরিয়া, ক্যাংকার ও ককসিডিওসিস এর ক্ষেত্রে এন্টিপ্রোটোজোয়াল এবং কৃমি জনিত রোগে কৃমিনাশক ব্যবহার করতে হবে।
প্রতিরোধ ও প্রতিকারঃ উল্লেখিত ভাইরাসজনিত রোগগুলোর অধিকাংশই বিভিন্ন বয়সের মুরগির বাচ্চার হয়ে থাকে। এজন্য এক দিন বয়সের বাচ্চা থেকে শুরু করে করে বিভিন্ন বয়সের পোল্ট্রিকে টিকা প্রদান করতে হবে। আক্রান্ত পোল্ট্রিকে সুস্থ্য পোল্ট্রি থেকে পৃথক করতে হবে। জীবাণুনাশক ঔষধ দিয়ে নিয়মিতভাবে বাসস্থান, খাবার পাত্র ও পানির পাত্র, যন্ত্রপাতি পরিস্কার করতে হবে।
নিয়মিত কৃমিনাশক ঔষধ, খাদ্যে নির্দিষ্ট পরিমান ককসিডিওষ্ট্যাট নামক ঔষধ সরবরাহ করতে হবে। এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা হলে যে খামারে এই রোগের আক্রমন দেখা যায়, এই খামারের চারপাশের সব খামারের মুরগী এক সাথে ধ্বংস করতে হবে। খামার ঘরে বহিরাগতদের প্রবেশাধিকার নিষিদ্ধ রাখতে হবে এবং খামারের জীবনিরাপত্তা ব্যবস্থা কঠোরভাবে পালন করতে হবে।