১৭ বছর আগেও বাংলাদেশে খাদ্যশস্য উৎপাদনে ঘাটতি ছিল। ঘাটতি মেটাতে মূলত আমদানির ওপর নির্ভর করতে হতো। কিন্তু ২০০৮-০৯ অর্থবছর থেকে উদ্বৃত্ত খাদ্যশস্য উৎপাদন হতে থাকে।
বর্তমানে চাল, গম ও ভুট্টার উৎপাদনের চাহিদা ছাড়িয়ে গেলেও গম উৎপাদনে এখনও পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ। কৃষি সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রকৃতিগতভাবে বাংলাদেশের আবহাওয়া গম উৎপাদনের অনুকূলে নয়।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০০১-০২ অর্থবছরে মোট খাদ্যশস্যের উৎপাদন হয় দুই কোটি ৫৯ লাখ ৭০ হাজার টন। ওই বছর খাদ্যশস্যের মোট চাহিদা ছিল দুই কোটি ৭০ লাখ ৪৫ হাজার টন। ঘাটতি ছিল ১০ লাখ ৭৫ হাজার টন।
এর পরের অর্থবছরে খাদ্য ঘাটতি কিছুটা কমে হয় নয় লাখ ১১ হাজার টন। ২০০২-০৩ অর্থবছরে মোট উৎপাদন ছিল দুই কোটি ৭৭ লাখ ৮৮ হাজার টন। ওই বছর খাদ্যের চাহিদা ছিল দুই কোটি ৭৭ লাখ ৮৮ হাজার টন।
২০০৩-০৪ অর্থবছরে খাদ্যশস্যের ঘাটতি আরও কমে আসে। ওই বছর খাদ্য ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়ায় নয় লাখ ১১ হাজার টন। এ বছর দেশে খাদ্যের চাহিদা ছিল দুই কোটি ৮৫ লাখ ৯৪ হাজার টন। ওই বছর মোট উৎপাদনের পরিমাণ ছিল দুই কোটি ৭৬ লাখ ৮৩ হাজার টন।
এর পরের বছর খাদ্য উৎপাদন কমে যায়। এতে খাদ্যশস্যের ঘাটতির পরিমাণ ঊর্ধ্বমুখী হয়। ২০০৪-০৫ অর্থবছরে দুই কোটি ৮১ লাখ ৩৫ হাজার খাদ্যশস্যের চাহিদার বিপরীতে উৎপাদিত হয় দুই কোটি ৬৪ লাখ ৮৯ হাজার টন।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০০৫-০৬ অর্থবছরে বর্ধিত চাহিদার কারণে ঘাটতির পরিমাণ এর আগের বছরের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ হয়। ওই বছর খাদ্য উৎপাদন হয় দুই কোটি ৭৭ লাখ ৮৭ হাজার টন। চাহিদা ছিল তিন কোটি পাঁচ লাখ ৫৯ হাজার টন।
পরের বছর মোট খাদ্যশস্যের উৎপাদন ছিল দুই কোটি ৮৯ লাখ ৫৪ হাজার টন। সারাদেশে চাহিদা ছিল তিন কোটি তিন লাখ ৫৯ হাজার। খাদ্য ঘাটতির পরিমাণ কমে হয় ১৪ লাখ পাঁচ হাজার টনে।
২০০৭-০৮ অর্থবছরে খাদ্যশস্যের উৎপাদনের সঙ্গে সঙ্গে চাহিদার পরিমাণও বাড়ে। এ বছরে তিন কোটি ১১ লাখ ২১ হাজার টন খাদ্য উৎপাদিত হলেও চাহিদার পরিমাণ ছিল তিন কোটি ২০ লাখ ৯৭ হাজার টন। ঘাটতির পরিমাণ ছিল নয় লাখ ৭৬ হাজার টন।
পরের বছর থেকে উদ্বৃত্ত খাদ্য উৎপাদন হয় দেশে। ২০০৮-০৯ অর্থবছরে অতিরিক্ত খাদ্য উৎপাদিত হয় এক লাখ ৪৬ হাজার টন। ওই বছর তিন কোটি ২৭ লাখ ৫০ হাজার টন খাদ্যশস্যের চাহিদার বিপরীতে উৎপাদিত হয় তিন কোটি ২৮ লাখ ৯৬ হাজার টন।
তথ্য অনুযায়ী, ২০০৯-১০ অর্থবছরে খাদ্য উদ্ধৃত্তের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় ছয় লাখ ৩৯ হাজার টন। এ বছর খাদ্য উৎপাদিত হয় তিন কোটি ৩৮ লাখ ৩১ হাজার টন। চাহিদা ছিল তিন কোটি ৩১ লাখ ৯২ হাজার টন।
২০১০-১১ অর্থবছর অতিরিক্ত খাদ্য উৎপাদনের পরিমাণ ২০ লাখ ৪৫ হাজার টনে উন্নীত হয়। এ অর্থবছরে তিন কোটি ৪০ লাখ ২০ হাজার টন খাদ্যশস্যের চাহিদা থাকলেও উৎপাদিত হয় তিন কোটি ৬০ লাখ ৬৫ হাজার টন।
২০১১-১২ অর্থবছরে তিন কোটি ৬৮ লাখ ৩৯ হাজার টন চাল, গম ও ভুট্টা উৎপাদিত হয়। ওই বছর চাহিদা ছিল তিন কোটি ৪৫ লাখ ৪ হাজার টন। অতিরিক্ত খাদ্যশস্য উৎপাদনের পরিমাণ ছিল প্রায় ২৩ লাখ টন।
২০১২-১৩ অর্থবছরে খাদ্যশস্য উৎপাদনের পরিমাণ তিন কোটি ৭২ লাখ ৬৬ হাজার টন এবং ২০১৩-১৪ অর্থবছরে খাদ্যশস্য উৎপাদনের পরিমাণ ছিল তিন কোটি ৭৭ লাখ ৮২ হাজার টন। ওই দুই বছরে খাদ্যশস্যের চাহিদার পরিমাণ দেখানো হয় সাড়ে তিন কোটি টনের মতো।
২০১৪-১৫ অর্থবছরে দেশে মোট উৎপাদন হয়েছে তিন কোটি ৬০ লাখ ৫৮ হাজার টন। ওই অর্থবছরে দেশে খাদ্যশস্যের চাহিদা ছিল তিন কোটি ৫৮ লাখ ২০ হাজার টন।
২০১৫-১৬ অর্থবছরে দেশে মোট খাদ্যশস্য উৎপাদিত হয় তিন কোটি ৮৪ লাখ ১৮ হাজার টন। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে তিন কোটি ৮১ লাখ ৪১ হাজার টন চাল, গম ও ভুট্টা উৎপাদিত হয়েছে। এই দুই অর্থবছরেও চাহিদার চেয়ে উদ্বৃত্ত উৎপাদন হয়েছিল দেশে।
খাদ্যশস্যের উদ্বৃত্ত উৎপাদন প্রসঙ্গে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. নাসিরুজ্জামান বলেন, ‘এই সরকার ক্ষমতায় আসার পর কৃষিতে বিভিন্নভাবে বিনিয়োগ করেছে। সারে ভর্তুকি, প্রণোদনা- নানাভাবে কৃষিতে বিনিয়োগ হচ্ছে। এই বিনিয়োগের রেজাল্ট হলো আজ আমাদের উদ্বৃত্ত খাদ্যশস্য।’
তিনি বলেন, ‘সরকারের নানামুখী বিনিয়োগের কারণে কৃষক শুধু তার খাওয়ার জন্যই এখন খাদ্যশস্য উৎপাদন করছে না, বাণিজ্যিকভাবেও তারা খাদ্যশস্য উৎপাদনে গেছে। এভাবে খাদ্যের উৎপাদন বেড়েছে।’
কৃষি সচিব আরও বলেন, ‘এরপরও কৃষককে কৃষি পেশায় ধরে রাখা যাচ্ছে না। সম্প্রতি এক গবেষণা বলছে, কৃষি থেকে দুই শতাংশ হারে কৃষক কমছে। তবে কৃষিতে নারীর অংশগ্রহণ ৬৩ শতাংশ হারে বেড়েছে। কৃষিতে কৃষককে ধরে রাখতে না পারলে বিপদ। এ খাতে কৃষককে ধরে রাখতে আমরা কাজ করছি।’ সূত্র:জেএন
ফার্মসঅ্যান্ডফার্মার২৪ডটকম/