বাংলাদেশ পেতে যাচ্ছে প্রথম হাইব্রিড আমের রঙিন জাত

638

আম, সুস্বাদু ও রসালো ফল। সবার কাছেই প্রিয় এ ফল। দিন দিন দেশ ও বিদেশে আমের চাহিদা বাড়ছে। চাহিদা বাড়ায় বেড়েছে আমের অর্থনৈতিক মূল্যায়ন। এখন বাণিজ্যিক ভিত্তিতে গড়ে উঠছে অনেক আম বাগান, দেশের চাহিদার পাশাপাশি আম রপ্তানির ক্ষেত্রেও সৃষ্টি হচ্ছে সম্ভাবনা। তবে বিদেশে আম রপ্তানির ক্ষেত্রে আমটি রঙিন হলে ক্রেতা আকর্ষণীয় হয়।

এই সব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে ফল গবেষকরা আমের গুণগত মান বৃদ্ধি ও জাত উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছেন। এরই ধারাবাহিকতায় দীর্ঘ গবেষণায় এসেছে সফলতা, উদ্ভাবন সম্ভব হয়েছে প্রথম হাইব্রিড রঙিন আমের জাত। চাঁপাইনবাবগঞ্জের আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. জমির উদ্দিনের হাত ধরেই বাংলাদেশে মুক্তায়িত হতে যাচ্ছে প্রথম হাইব্রিড রঙিন আমের জাত। হাইব্রিড নতুন রঙিন এ জাতটির গবেষণা মাঠের নাম ছিল হাইব্রিড ০৫৯।

আমের নতুন রঙিন জাতটি মুক্তায়নের জন্য নাম প্রস্তাব করা হয়েছে বারি আম- ১৩। গবেষণার বিষয়ে বলতে গিয়ে রঙিন আমের জাত উদ্ভাবনী গবেষক ড. জমির উদ্দিন বলেন, ভিন্ন বৈশিষ্ট্যের দুটি আমের জাতের মধ্যে মিলন ঘটিয়ে আরেকটি নতুন জাত উদ্ভাবনের প্রক্রিয়াটিকে বলে আইব্রিডাইজেশন। আর এই প্রক্রিয়ায় উদ্ভাবিত জাতটি হয় হাইব্রিড। সাধারণত আমরা একটা লক্ষ্য স্থির করেই একটি জাতের সঙ্গে অন্য একটি জাতের মিলন ঘটিয়ে থাকি। যেমন অনেক আমের জাত একবছর ভাল ফল দেয় কিন্ত অন্য বছর দেয় না, আবার কোনটা খেতে সুস্বাদু হলেও রঙয়ের দিক থেকে আকর্ষণীয় নয়, এসব নানা দিক বিবেচনায় নিয়ে একটি নতুন জাত উদ্ভাবনে আমরা গবেষণা করে থাকি।

নতুন উদ্ভাবিত আমের রঙিন জাতের গবেষণাকাল সম্পর্কে বলতে গিয়ে আম বিজ্ঞানী ড. জমির উদ্দিন জানান, হাইব্রিড ০৫৯ (প্রস্তাবিত নাম, বারি- ১৩) বাংলাদেশের একমাত্র রঙিন হাইব্রিড আমের জাত হতে যাচ্ছে। রঙিন আমের জাত উদ্ভাবনের লক্ষ্যে ২০০৫ সালের বাংলাদেশের বারি আম-৩ ও আমেরিকার ফ্রোরিডা থেকে সংগ্রহ করা পালমার রঙিন আমের জাত দুইটির সংকরায়ন করা হয়। গবেষণা মাঠে দীর্ঘদিনের পর্যবেক্ষণে নতুন এ জাতটিতে আশানুরূপ ফলাফল মিলেছে। নতুন এ জাতের আম লম্বাটে ও মাঝারি আকৃতির হয়, গড় ওজন ২২০ গ্রাম, সবচেয়ে বড় বিষয় এটি নাবী জাতের , উচ্চ ফলনশীল ও নিয়মিতই ফল দেয়, শেষ জুলাই থেকে আগষ্ট মাসের প্রথম সপ্তাহ এ আম সংগ্রহ করা যায়, পরিপক্ক সংগৃহিত আম সাধারণ তাপমাত্রায় ৮দিন পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায়। এ আমের ভক্ষণযোগ্য অংশ শতকরা ৭৪.৬৭ ভাগ, মিষ্টতা শতকরা ২১ ভাগ।

রঙিন প্রথম আমের জাতটি কবে নাগাদ মুক্তায়িত হতে পারে, এ প্রশ্নে চাঁপাইনবাবগঞ্জের আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. জমির উদ্দিন বলেন, একটি জাত মুক্তায়িত হওয়ার জন্য যে যে প্রক্রিয়া থাকে তার সবগুলোই শেষ হয়ে গেছে। রঙিন জাতটি বারি আম-১৩ নামে মুক্তায়িত করার সুপারিশ করেছি আমরা। আশা করছি অল্পকিছু দিনের মধ্যেই আনুষ্ঠানিকভাবে রঙিন আমের জাত পেতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। আমার ১৫ বছরের শ্রম অবশেষে আলোর মুখ দেখল, দেশের জন্য কিছু একটা করতে পারলাম, এটাই আমার বড় পাওয়া।

কৃষক পর্যায়ে আশা করি রঙিন আমের এ জাতটি আকৃষ্ট হবে। প্রসঙ্গত, গুণী এ আম বিজ্ঞানীর হাত ধরেই বাংলাদেশের প্রথম হাইব্রিড আমের জাত রাবি আম-৪ উদ্ভাবন হয়েছিল। ২০০৩ সালে এ জাতটি মুক্তায়িত হওয়ার পর থেকেই কৃষক পর্যায়ে ব্যাপক বিস্তার লাভ করেছে।

ফার্মসএন্ডফার্মার/৩০জুলাই২০