বাটা মাছের পোনা উৎপাদনের বৈজ্ঞানিক উপায়

1685

বাটা মাছের-পোনো

এদেশের মানুষের কাছে বাটা মাছ খুব প্রিয় মাছ হিসাবে সমাদৃত হয়ে এসেছে সব সময়। অতীতে বিভিন্ন প্রাকৃতিক জলাশয় প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যেত। কিন্তু নানাবিধ কারণে এই মাছের প্রজনন ও চারণক্ষেত্র সংকুচিত হয়। ফলে এ মাছ আর তেমন পাওয়া যায় না।

বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীদের গবেষণায় বাটা মাছের কৃত্রিম প্রজনন, পোনা উৎপাদন ও লালন-পালন এবং চাষ প্রযুক্তি উদ্ভাবনে সাফল্য অর্জিত হয়েছে।

বাটা মাছের প্রজনন:

এই মাছটি দেখতে অনেকটা রেবা মাছের মত। রুই জতীয় মাছের সাথে বাটা মাছ চাষ করা হয়ে থাকে। মাছটির আকৃতি ৬-৮ ইঞ্চি হয়ে থাকে। বর্তমানে অনেক কার্প হ্যাচারিতে এ প্রজাতির মাছের রেণু উৎপাদন করা হয়ে থাকে। বাটা মাছ এপ্রিল থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত প্রজনন করে থাকে। প্রজননের জন্য দুই বছর বয়সের স্ত্রী ও পুরুষ মাছ নির্বাচন করতে হবে। উভয় মাছ পরিপক্ক হতে হবে। প্রজননের পূর্বে পরিপক্ক স্ত্রী ও পুরুষ মাছ আলাদা আলাদা ট্যাংকে রাখতে হয়। ট্যাংকে ৬-৭ ঘণ্টা রাখার পর হরমোন ইনজেকশন দিতে হয়। কৃত্রিম প্রজননের জন্য পিজি হরমোন ব্যবহার করা উত্তম। নিম্নে বাটা মাছের প্রজননের ২টি পদ্ধতি বর্ণনা করা হলো-

পদ্ধতি-১ :

কৃত্রিম প্রজননের জন্য স্ত্রী ও পুরুষ মাছকে একটি মাত্র ডোজ দেওয়া হয়। প্রতি কেজি স্ত্রী ও পুরুষ মাছকে যথাক্রমে ৫.০ মিগ্রা. ও ২.০ মিগ্রা. হরমোন ডোজ প্রয়োগ করতে হবে। ইনজেকশন দেওয়ার পর সাথে সাথে ট্যাংকে হাপা স্থাপন করে মাছগুলি একত্রে ছেড়ে দিলে ৭/৮ ঘন্টার মধ্যে ডিম দেয়। তারপর হাপা থেকে ডিমগুলো সার্কুলার ট্যাংকে রেখে পানির ফ্লো দিতে হবে। এ অবস্থায় ১৫/২০ ঘণ্টার মধ্যে ডিম ফুটে রেণু বাহির হবে।

পদ্ধতি-২:

প্রথম ডোজ প্রতি কেজি স্ত্রী মাছকে ১ মিগ্রা., ৬ ঘন্টা পর ২য় ডোজ ৪ মিগ্রা. হিসাবে ইনজেকশন দেওয়া হয়। প্রতি কেজি পুরুষ মাছকে ২ মিগ্রা. ইনজেকশন দিয়ে স্ত্রী ও পুরুষ মাছকে একত্রে ট্যাংকে বা হাপায় দিলে ৬/৭ ঘন্টার মধ্যে ডিম দিয়ে দিবে। ১৫/২০ ঘন্টার মধ্যে ডিম ফুটে রেণু বাহির হয়। রেণু বের হওয়ার সময় পানির ফ্লো বেশি রাখতে হবে। পানির ফ্লো কম থাকলে রেণু মারা যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ডিমের খোসা সরানোর জন্য টুকরা জাল ব্যবহার করতে হবে। তারপর সাথে সাথে পানির ফ্লো দিয়ে দিতে হবে। রেণুর বয়স ৫০/৬০ ঘন্টা হলে রেণুকে খাবার দিতে হবে। মুরগীর ডিম সিদ্ধ করে ডিমের কুসুম ১ লিটার পানির মধ্যে মিশিয়ে ট্যাংকে বা ফানেলে দিতে হবে এবং ২০/২৫ মিনিট পর পুনরায় পানির ফ্লো অল্প করে দিতে হবে। এইভাবে খাবার দেওয়ার পর রেণুগুলোকে নার্সারি পুকুরে ছাড়তে হবে।

বাটা মাছের পোনার পরিচর্যা:

বাটা মাছের নার্সারি করার পূর্বে পুকুর শুকানো প্রয়োজন। পুকুর ভালোভাবে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করতে হবে। প্রথমে চুন প্রতি শতাংশে ০.৫-১.০ কেজি হারে পানিতে মিশিয়ে অথবা শুকানো পাউডার অবস্থায় সমস্ত পুকুরে ছিটিয়ে দিতে হবে। তারপর ২/৩ ফুট পরিমাণ পানি দিতে হবে। প্রতি শতাংশে ৫-৮ কেজি কম্পোষ্ট পানিতে মিশিয়ে পুকুরে ছিটিয়ে দিতে হবে। তিনদিন অপেক্ষা করার পর পুকুরে সুমিথিয়ন প্রতি শতাংশে ১০ মিলি. করে পানিতে মিশিয়ে সমস্ত পুকুরে ছিটিয়ে দিতে হবে।

তার পর জাল টেনে পুকুরের ময়লা আবর্জনা তুলে ফেলতে হবে এবং ময়দা প্রতি শতাংশে ৫০ গ্রাম হারে পানিতে গুলে সমস্ত পুকুরে দিতে হবে। সুমিথিয়ন দেয়ার ২৪ ঘণ্টা পার হলেই বাটা মাছের রেণু পোনা ছাড়তে হবে।

রেণু ছাড়ার পরপরই খাবার হিসেবে রেণুর ওজনের সমপরিমাণ ময়দা ও প্রতি শতকে অর্ধেক সিদ্ধ ডিমের কুসুম পানিতে মিশিয়ে সমস্ত পুকুরে ছিটিয়ে দিতে হবে। দুই দিন পর থেকে সরিষার খৈল রেণুর ওজনের সমপরিমান পূর্ব দিন ভিজিয়ে রেখে পরদিন সকাল বেলা বেশি পানিতে মিশিয়ে পাতলা কাপড় দ্বারা ছেকে শুধু পানিটুকু সমস্ত পুকুরে দিতে হবে। পুনরায় সকাল বেলা সরিষার খৈল ভিজিয়ে বিকাল বেলা একই ভাবে দিতে হবে।

রেণুর বয়স ৫ দিন হলেই পুকুরে দিনে ২ বার হররা টানতে হবে। হররা টানার পরপরই খাবার প্রয়োগ করতে হবে। খাবার হিসেবে সরিষার খৈল অথবা নার্সারি ফিড পাউডার ব্যবহার করা যেতে পারে। ১০ দিন বয়স হলেই রেণুর ওজনের দেড়গুণ হারে খাবার দেওয়া যেতে পারে। বিশ দিন হলে দ্বিগুণ হারে, ৩০ দিন হলে তিনগুণ হারে খাবার দেওয়া যেতে পারে। প্রয়োজনে পুকুরে পানি দিতে হবে ও ৩০/৪০ দিন পর অন্য পুকুরে রেণু স্থানান্তর করতে হবে। অতপর পোনার ওজনের ৫০% হারে খাবার শুরু করতে হবে এবং ১০ দিন অন্তর অন্তর খাবার বৃদ্ধি করতে হবে।

ফার্মসঅ্যান্ডফার্মার২৪ডটকম/মোমিন