মাছে-ভাতে বাঙালির প্রবাদটা পুরনো হলেও এখনও আমাদের মাছ-প্রীতি কমেনি। বরং মাছ উৎপাদনেও বাংলাদেশ এখন বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ দেশ। তবে কেবল বাংলাদেশই নয়, বিশ্বব্যাপীই প্রতিদিন ধরা হচ্ছে বিপুল পরিমাণ মাছ। কিন্তু বাণিজ্যিকভাবে যত মাছ প্রতিদিন ধরা হচ্ছে, এর ৩৫ ভাগই নষ্ট হচ্ছে বিভিন্ন ধাপে। অর্থাৎ, জেলেরা প্রতিদিন যে পরিমাণ মাছ ধরছেন, তার তিন ভাগের একভাগই পৌঁছাতে পারছে না মানুষের প্লেটে! তাই মাছ থাকলেও এবং মাছ ধরা পড়লেও তা নেই মানুষের পাতেই।
এমন অনেক অরাজকতাই আছে, যা চোখে আঙুল দিয়ে না দেখালে টের পাওয়া যায় না। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি বিষয়ক সংস্থা ইউএনএফএও মাছ বিষয়ক এমন পরিসংখ্যান দিয়ে সেটিই জানিয়েছে। গতকাল সোমবার (৯ জুলাই) বিশ্বের সামগ্রিক মাছ উৎপাদন বিষয়ে দ্বিবার্ষিক ওই প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে সংস্থাটি।
ইউএনএফএও’র প্রতিবেদনে মাছ অপচয়ে কারণ তুলে ধরা হয়েছে জেলেদের পর্যাপ্ত উপকরণ ও সংরক্ষণ জ্ঞানের অভাবকে। সাগর বা নদীতে জেলেরা মাছ ধরতে গিয়ে ট্রলারের অনাকাঙ্ক্ষিত ও ছোট মাছগুলো ফেলে দিচ্ছেন। এই বিপুল পরিমাণ মাছ নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি জলজ পরিবেশ নষ্ট করছে। মাছ কিভাবে সঠিক উপায়ে সংরক্ষণ করতে হবে, তা জেলেরা জানছেন না। উন্নয়নশীল দেশগুলোতে এসব সমস্যা বেশি প্রকট বলে জানাচ্ছে ইউএনএফএও।
প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে বাড়ছে পুষ্টির অন্যতম উৎস মাছের চাহিদা। ২০৩০ সাল নাগাদ এই চাহিদা আরও ২০ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে। তবে, মাছের এই চাহিদা মেটাতে এখন তৈরি হচ্ছে বিভিন্ন মৎস খামার। এখনকার মাছের জোগানের প্রায় ৫৩ শতাংশই আসছে এসব খামার থেকে। তবে অতিরিক্ত মৎস্য খামার প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করতে পারে বলেও আশঙ্কা রয়েছে।
শুধু তাই নয়, সাগরে মাছ চাষের অতিরিক্ত বাণিজ্যিকীকরণ ও সংরক্ষিত এলাকায় অবৈধ মাছ শিকার অনেক গুরুত্বপূর্ণ মাছের প্রজাতি দ্রুত বিনষ্ট করছে। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, পৃথিবীর অর্ধেকের বেশি সাগর এলাকা এখন বাণিজ্যিক মাছ চাষের আওতায়। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পৃথিবীর অনেক উষ্ণমণ্ডলীয় এলাকা নিমজ্জিত হবে; সেই সাথে সমুদ্রের ওপর নির্ভরশীলতা আরও বাড়বে।
মাছ উৎপাদনের বর্তমান হার আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে ভালো বলে ইউএনএফএও’র প্রতিবেদনটিতে উল্লেখ করা হয়েছে। এফএও ডিরেক্টর হোসে গ্রাজিনিও দ্যা সিলভা বলেন, ১৯৬১ সাল থেকে জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে পাল্লা দিয়ে মাছের চাহিদা দ্বিগুণ হারে বেড়েছে। অপুষ্টি ও ক্ষুধাহীন একটি পৃথিবী গড়তে মৎস খাত খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
অবৈধ মাছ শিকার বন্ধে সাম্প্রতিক সময়ে নেওয়া পদক্ষেপগুলো মাছ সংরক্ষণে দীর্ঘমেয়াদি ভূমিকা রাখবে বলে তিনি জানান।
প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, পৃথিবীতে ৪৬ লাখ ছোট-বড় বাহনে ৬ কোটি লোক মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করছেন। এফএও যেটাকে মজা করে বলছে, মাছের তুলনায় নৌকার সংখ্যাই যেন বেশি!
সমুদ্র রক্ষা বিষয়ক সংগঠন ওশেয়ানার নির্বাহী পরিচালক লাস গুসতাভসন মাছ অপচয় প্রসঙ্গে বলেন, ক্ষুধার্ত এই পৃথিবীতে খাদ্যের অপচয় মেনে নেওয়া যায় না। পৃথিবীর খাদ্য নিরাপত্তার ক্ষেত্রে এত মাছের অপচয় সত্যিই দুশ্চিন্তার একটি বিষয়। সব কিছুরই একটা সীমা থাকা উচিত! সূত্র: এসবি
ফার্মসঅ্যান্ডফার্মার২৪ডটকম/মোমিন