জারবেরা একটি জনপ্রিয় ও গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক ফুল। জার্মান পরিবেশবিদ ট্রগোট জার্বারের নামানুসারে ফুলটির নামকরণ করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক ফুল বাণিজ্যে কাট ফ্লাওয়ার হিসেবে উলেস্নখযোগ্য ১০টি ফুলের মাঝে অন্যতম ফুল এটি। কাট ফ্লাওয়ার হিসেবে দীর্ঘদিন তাজা থাকে বলে ফুলদানিতে জারবেরার জুড়ি নেই।
জারবেরা গণের আওতায় ৪০টির মতো প্রজাতি রয়েছে। জারবেরার রয়েছে নানান রংও। এ গুলোর মধ্যে জারবেরা জ্যামেসোনি প্রজাতিটি চাষাবাদ হচ্ছে সংকরায়ন পদ্ধতির মাধ্যমে। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট ইতোমধ্যে জারবেরার বারি জারবেরা-১ ও বারি জারবেরা-২ নামে দুটি জাত উদ্ভাবন করেছে।
জারবেরা বহু বর্ষজীবী দ্রম্নত বর্ধশীল উদ্ভিদ। গাছ কান্ডহীন, পাতার রং গাঢ় সবুজ এবং পাতার কিনারা খাঁজ কাটা থাকে। গাছ বেশ কষ্ট সহিষ্ণু। রৌদ্র উজ্জ্বল সুনিষ্কাশিত উর্বর জৈব পদার্থসমৃদ্ধ দোআঁশ থেকে বেলে দোআঁশ মাটি জারবেরা চাষের জন্য উত্তম। জারবেরা মূলত শীতকালীন মৌসুমি ফুল এবং শীত মৌসুমে খোলামাঠে আবাদ করা যায়। অন্য ঋতুতে আবাদের ক্ষেত্রে পলিথিন ছাউনিতে চাষের ব্যবস্থা করতে হবে।
তবে শীত ব্যতীত অন্য ঋতুতে কাঙ্ক্ষিত মানের ফুল পাওয়া যায় না। শীত মৌসুমে রোপণের জন্য অক্টোবর থেকে নভেম্বর মাস উত্তম সময়। বীজের মাধ্যমে জারবেরার বংশ বিস্তার করা যায়। তবে এতে মাতৃগাছের গুণাগুণ বজায় থাকে না। এ ছাড়া মাতৃগাছের ক্লাম্প বিভক্ত করে বংশ বিস্তার করা যায়। তা ছাড়া বাণিজ্যিক চাষাবাদের জন্য টিসু্যকালচার পদ্ধতিতে উৎপাদিত চারাই উত্তম। জারবেরা ফুল গাছের চারা জমিতে একবার রোপণ করে তা থেকে সাধারণত পর্যায়ক্রমে ২ বৎসর পর্যন্ত সময় ফুল আহরণ করা যায়। বাণিজ্যিক চাষাবাদের ক্ষেত্রে জমিতে নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে ও নালার ব্যবস্থা রেখে চারা রোপণ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে সারি থেকে সারি ৫০ সে.মি. এবং চারা থেকে চারার দূরত্ব হবে ৪০ সে.মি.।
চারা রোপণের ৮০ থেকে ৯০ দিন পর গাছে ফুল ধরে। বাসাবাড়িতে চাষের ক্ষেত্রে ওঠোন বা ঘরের সামনের ফাঁকা জায়গায় বেড তৈরি করে নিতে হবে। ছাদের টবেও জারবেরা রোপণ উপযোগী ফুল প্রয়োজনে সেচ দিতে হবে এবং পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা রাখতে হবে। গাছের ভালো বৃদ্ধির জন্য সুষম সার ব্যবহার করতে এবং রোগ ও পোকার আক্রমণ দেখা দিলে তা দমনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। জাত ভেদে জারবেরা ফুলের উৎপাদন কম বা বেশি হতে পারে- তবে উত্তম ব্যবস্থাপনায় বছরে প্রতি গাছ হতে ২০ থেকে ২৫টি ফুল পাওয়া যায়।