বান্দরবানে এলাচ চাষে সাফলতার হাতছানি

140

বান্দরবানের পাহাড়ে বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে সুগন্ধি মশলা এলাচ। রপ্তানি নির্ভর সম্ভাবনাময় মশলা এলাচ চাষ করে জেলায় ব্যাপক সাড়াও ফেলেছেন কয়েকজন চাষি। ইতোমধ্যে সাফল্যও পেয়েছেন তারা। পাহাড়ে উৎপাদিত এলাচ দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের স্বপ্ন দেখছেন এলাচ চাষিরা।

কৃষি বিভাগের মতে, জেলায় ২০১৮ সালে পরীক্ষামূলক বান্দরবান সদরের চিম্বুক পাহাড়ের ওয়াইজংশন এলাকায় পাহাড়ে ১২০টি সুবজ রঙের এলাচ চারা লাগান স্কুল শিক্ষক মেনয়াং ম্রো ও তার স্ত্রী। পরিমাণে কম হলেও চারা লাগানোর দু’বছর পরই বাগানে এলাচ ফল উৎপাদন হয়। সাফল্যের হাতছানিতে পরে প্রায় দেড় একর পাহাড়ি জমিতে বাণিজ্যিকভাবে এলাচ চাষ করেন সফল এ চাষি। তার দেখাদেখি চিম্বুকের বসন্ত পাড়া, কুহালং এবং রুমার মুন্নুম পাড়া এলাকায় আরও কয়েকজন চাষি সম্ভাবনাময় সবুজ ও কালো রঙের এলাচ চাষ করেছে পাহাড়ে। লাভজনক মশলা চাষে ঝুঁকছে পাহাড়ের চাষিরা।

গত বছর এলাচ উৎপাদন হয়েছিল ১০ কেজির বেশি। এ বছর এলাচের উৎপাদন আরও কয়েকগুণ বেশি হবে বলে ধারণা করছেন চাষিরা। সরকারিভাবে আমদানিনির্ভরতা কমাতে পাহাড়ে বাণিজ্যিকভাবে এলাচ চাষে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে চাষিদের। দেশে বর্তমানে সবুজ-কালো, নিল-সাদা ও বেগুনিসহ বিভিন্ন জাতের ১৩ ধরনের এলাচ আমদানি করা হয়। রান্নায় সুগন্ধ ছড়াতে এলাচ ব্যবহার করে বাঙালিরা। এলাচের রয়েছে অসংখ্য ঔষধি গুণও। দেশের খুচরা বাজারে আকার অনুপাতে প্রতি কেজি এলাচ ১২০০ থেকে ১৮০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। পাহাড়ে এলাচ চাষ কৃষিক্ষেত্রে নতুন সম্ভাবনা দেখাচ্ছে। এলাচ চাষ সম্প্রসারণের জন্য সফল চাষিরা স্থানীয়ভাবে এলাচের চারা উৎপাদন করে আগ্রহী চাষিদের মাঝে ৩৫০ টাকা করে বিক্রি করছেন। পরিকল্পিতভাবে বিভিন্ন জাতের এলাচ চাষ করা গেলে আগামীতে বিদেশ থেকে সুগন্ধি মশলা এলাচ আর আমদানি করতে হবে না। বরং পাহাড়ে উৎপাদিত এলাচ স্থানীয়দের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের স্বপ্ন দেখছে চাষিরা। পাশাপাশি অনেক বেকার মানুষের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে।

চাষি শিক্ষক মেনয়াং ম্রো বলেন, শখের বসে খুলনার বেনাপোল থেকে এলাচ চারা সংগ্রহ করে পরীক্ষামূলকভাবে এলাচ চাষ করেছিলাম। সফলতা পেয়ে বিশ্বব্যাপী চাহিদা থাকায় বাণিজ্যিকভাবে পাহাড়ে এলাচ শুরু করেছি। এ বছর ১০ কেজির বেশি এলাচ ফল পেয়েছি। আমার বাগানে প্রায় তিন শতাধিক এলাচ গাছ রয়েছে। নতুন করে আরও এলাচ চারা সংগ্রহ করেছি। আগামী বছর তিন একর জায়গাজুড়েই এলাচ চাষ সম্প্রসারণ করা হবে।

চাষি এনিমং মারমা বলেন, এলাচ চারা লাগানোর দুবছর পর থেকেই ফলন আসে। তবে পরিমাণে কম, চারা লাগানোর পাঁচ বছর পর থেকে ভালো ফলন পাওয়া যায়। প্রতিটি গাছের গোড়ায় গুচ্ছ আকারে ফুল হয় লতার মতো, সেই ফুলগুলো থেকেই এলাচ ফল হয় গুচ্ছ আকারে। প্রতিটি গাছের গোড়াতে গুচ্ছে গুচ্ছে কমপক্ষে ৯শ থেকে এক হাজার গ্রাম পর্যন্ত ফলন পাওয়া যায়। বছরের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে এলাচ ফল পরিপক্ব হলে বাগান থেকে কাঁচা এলাচ সংগ্রহ করে রোদে শুকানো হয়। একেকটি এলাচ গাছ থেকে ২৫ থেকে ত্রিশ বছর পর্যন্ত ফল পাওয়া যায়।

এ বিষয়ে বান্দরবান কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক এমএম শাহনেওয়াজ বলেন, পাহাড়ে বাণিজ্যিকভাবে মশলা চাষের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। রপ্তানি কমাতে স্থানীয়ভাবে দেশে মশলা চাষ সম্প্রসারণে কাজ করছে কৃষি বিভাগ। মশলা চাষে উদ্বুদ্ধ করতে চাষিদের প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে।