বান্দরবানে গড়ে উঠেছে এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম কুমির খামার

908
সংগৃহিত
সংগৃহিত
সংগৃহিত

কবির হোসেন সিদ্দিকী, বান্দরবান থেকে: বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়িতে বেসরকারিভাবে গড়ে উঠেছে এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম মিঠাপানিতে কুমির চাষ প্রকল্প। এ প্রকল্প সঠিকভাবে পরিচর্যা করা গেলে কুমির রপ্তানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয় হতে পারে। এসব কুমির দেখতে ভিড় করছে প্রতিদিন শত শত দর্শনার্থী।

জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের ২৫ একর পাহাড়ি জমিতে আকিজ গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ ২০০৮ সালে গড়ে তোলে ‘আকিজ ওয়াইল্ড লাইফ ফার্ম লিমিটেড’ নামের কুমিরের খামারটি। তবে বাণিজ্যিকভাবে তারা কুমিরের চাষ শুরু করে ২০১০ সালে।

জানা যায়, প্রথম দফায় অস্ট্রেলিয়া ও মালয়েশিয়া থেকে ৫০টি অস্ট্রেলীয় প্রজাতির কুমির আমদানি করে খামারের উন্মুক্ত জলাশয়ে ছাড়া হয়। প্রতিটি কুমির কিনে আনা হয়েছিল তিন লাখ ৫০ হাজার টাকায়। এর মধ্যে তিনটি কুমির মারা গেলেও সুস্থ রয়েছে ৪৭টি। তার মধ্যে ৩১টি মাদি কুমির, আর ১৬টি পুরুষ।

একেকটি কুমির প্রাপ্তবয়স্ক হতে সময় লাগে প্রায় ১২ বছর। প্রাপ্তবয়স্ক একেকটি মাদি কুমির ৫০-৬০টি করে ডিম দেয়। এরা ডিম দেয় সাধারণত বর্ষাকালে। ডিম ৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় রেখে ৮০-৯০ দিনে ইনকিউবেটরে বাচ্চা ফোটানো হয়। বর্তমানে খামারে বাচ্চাসহ ছোট-বড় কুমিরের সংখ্যা ৭০০টি।

খামারে উন্মুক্ত জলাশয় ও খাঁচার ভেতরে— দুইভাবেই কুমির রাখা হয়েছে। আকিজ ওয়াইল্ড লাইফ ফার্ম লিমিটেডের কো-অর্ডিনেটর মোশারফ হোসেন বলেন, ‘‘বাণিজ্যিকভাবে ২০১০ সালে মালয়েশিয়া ৫২টি কুমির আমদানি করে কুমিরের চাষ শুরু করা হয়েছিল। কিন্তু আনার পর দুটি কুমির মারা যায়। এখন ৪৭টি বড় কুমিরসহ প্রায় ৭০০ কুমির রয়েছে খামারে। এটি দক্ষিণ এশিয়ার বড় খুমির খামারগুলোর মধ্যে অন্যতম। গত বছরই মালয়েশিয়ায় কুমির রপ্তানির টার্গেট ছিল। কিন্তু যোগাযোগ ব্যবস্থাসহ কিছু সমস্যার কারণে তা হয়ে ওঠেনি। তবে সমস্যা সমাধানে সরকারি সহযোগিতা পেলে এ বছরই খামারে উৎপাদিত কুমির মালয়েশিয়ায় রপ্তানি করে হাজার কোটি টাকা আয় করা সম্ভব হবে।’’

তিনি বলেন, ‘‘কুমির চাষের পাশাপাশি প্রজাপতি চাষ, বার্ড পার্কসহ কয়েকটি কটেজ ও মিউজিয়াম হাউস নির্মাণ করে প্রকল্পটিকে আকর্ষণীয় পর্যটন স্থান হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে। খামারটি গড়ে তুলতে প্রতিষ্ঠানের প্রায় সাড়ে ৯ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে।’’

সংশ্লিষ্টরা জানান, এখানে কুমির খামার করায় স্থানীয়দের কর্মসংস্থানের পথ সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমানে খামারে সাতজন কর্মচারী ও দুজন প্রকল্প কর্মকর্তা রয়েছেন। প্রতিদিনই খামারটি দেখতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এসে পর্যটকেরা ভিড় জমাচ্ছেন। যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে না ওঠায় দর্শনার্থীদের অনেক কষ্ট করে খামারে পৌঁছাতে হয়। কিন্তু উন্নত যোগাযোগ গড়ে উঠলে খামারটি পর্যটকদের জন্য আকর্ষণীয় স্থানে পরিণত হবে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নাবিলা রহমান ও ফারজানা চৈতি বলেন, ‘‘বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আমরা শিক্ষার্থীরা কক্সবাজার ভ্রমণে এসে কুমির খামারটির কথা জানতে পারি। কৌতূহল নিয়ে বান্দরবানে কুমির খামারে বেড়াতে এসে কুমির দেখলাম। দারুণ অনুভূতি। কুমির খামারটি আকর্ষণীয় ট্যুরিস্ট স্পট হতে পারে।’’

বান্দরবান জেলা প্রশাসক আসলাম চৌধুরী বলেন, ‘‘দেশের রপ্তানির তালিকায় সম্ভাবনার আরেকটি খাত হচ্ছে কুমির চাষ। আকিজ ওয়াইল্ড লাইফ ফার্ম লিমিটেড বান্দরবানে বাণিজ্যিকভাবে কুমিরের চাষ করছে। খামারে উৎপাদিত কুমির চলতি বছর রপ্তানির টার্গেট রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির। খামারের উন্নয়নে প্রশাসন সব ধরনের সহযোগিতা করছে। সড়ক যোগাযোগসহ স্থানীয় ছোটখাটো সমস্যা সমাধানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ সূত্র:বিপিএন

ফার্মসঅ্যান্ডফার্মার২৪ডটকম/মোমিন