বারোমাসি জাম্বুরার জাতের সন্ধান মিলেছে

770

জাম্বুরা

মেহেরপুর জেলায় কীটনাশকমুক্ত জাম্বুরার কদর এখন বেড়েছে। বাণিজ্যিকভিত্তিতে এ লেবু চাষ না হলেও অনেক বাড়িতেই এ জাম্বুরার গাছ আছে। মেহেরপুর জেলা শহরের পৌর ঈদগাহর পাশের একটি বাড়ির প্রাচীরের পাশে জাম্বুরা গাছে পাকা জাম্বুরা ঝুলতে দেখা যায়।

মেহেরপুরে এখন বাণিজ্যিক ভিত্তিতে জাম্বুরা চাষে উদ্যোগী হচ্ছে মানুষ। জাম্বুরা ভোক্তাদের নজর কাড়তে এ মৌসুমী ফলটি এখনও ফরমালিনমুক্ত আছে। মৌসুমী এ ফলটি বছরের সবসময় ধরবে এমন একটি জাতের সন্ধান পেয়েছে মেহেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ। শহরের মানুষ ফলটিকে বাতাবি লেবু হিসেবে জানলেও গ্রামবাংলায় ফলটির পরিচয় জাম্বুরা নামে। পুষ্টিগুণের কারণে সবশ্রেণীর মানুষের কাছে ফলটি সমান প্রিয়।

জাম্বুরার চারা রোপণের ৫/৭ বছরের মধ্যে ফলন পাওয়া সম্ভব। প্রতিটি গাছের গড় আয়ু ৩০/৫০ বছর পর্যন্ত হয়ে থাকে, ধারাবাহিকভাবে ফলনও পাওয়া যায় বেশি। বসত বাড়ির আঙিনায় কিংবা পরিত্যক্ত জমিতে এ লেবুর চারা রোপণ করা যায়। মেহেরপুরের উৎপাদিত জাম্বুরা মানসম্মত ও সুস্বাদু হওয়ায় এর চাহিদা রয়েছে।

জাম্বুরা ভিটামিন ‘সি’ সমৃদ্ধ একটি সুপরিচিত লেবু গোত্রের ফল। বেশির ভাগই বসতবাড়ি, স্কুল, কলেজের আশপাশে ও পতিত জায়গায় জাম্বুরা চাষ করা হচ্ছে। কোন কোন অঞ্চলে এটি বাতাবি লেবু নামেও পরিচিত। অন্যান্য ফলের তুলনায় যেমন দামে সস্তা, তেমন পুষ্টিতেও ভরপুর। টক-মিষ্টি এ ফলটি লবণ-মরিচ মিশিয়ে মাখিয়ে খেতে ভালো লাগে। জাম্বুরা ফল হিসেবে যেমন চমৎকার, তেমনই পুষ্টিও ব্যাপক। আশ্বিন থেকে পৌষ মাস পর্যন্ত ফলটি গাছে দুলতে থাকে। তবে সবচেয়ে বেশি পাকে আশ্বিন থেকে কার্তিক মাসের মাঝামাঝি সময়ে। সঠিকভাবে পরিচর্যা করলে প্রতি হেক্টরে ১৫/২০ টন ফলন উৎপাদন করা সম্ভব।

বিশ্বে সাইট্রাস (লেবুজাতীয় ফল) একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ফল। উৎপাদনের দিক থেকে পৃথিবীর ফলগুলোর মধ্যে এর স্থান দ্বিতীয়। বাংলাদেশের আবহাওয়া লেবুজাতীয় ফল উৎপাদনের জন্য খুবই উপযোগী।

মেহেরপুরের গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার সজিব উদ্দীন জাম্বুরা সম্পর্কে বলেন , প্রচুর ভিটামিন সি, বিটা ক্যারোটিন, ভিটামিন বি, ফলিক অ্যাসিড, পটাশিয়ামসহ শরীরের প্রয়োজনীয় সব পুষ্টি উপাদান আছে এতে। তাই কখনো রোগ নিরাময়ে, কখনো রোগ প্রতিরোধে এবং শরীরের ঘাটতি পূরণের জন্য জাম্বুরা খুব কার্যকর।

মেহেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক ড. মো. আক্তারুজ্জামান জানান, কমলা লেবুর থেকে জাম্বুরার পুষ্টিমান বেশি। এ লেবুর চাষ সম্প্রসারণের উদ্রোগ নেয়া হয়েছে। একটি বারোমাস ফল পাওয়া যাবে এমন একটি লেবুর জাতের সন্ধান মিলেছে। সেই জাতটি ছড়িয়ে দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। লেবুচাষে রোগবালাই ও পোকার আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে- উন্নত পরিচর্যা পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে। সুস্থ সবল ও রোগমুক্ত চারা গাছ নতুন এলাকায় রোপণ করতে হবে।রোগাক্রান্ত ডাল-পালা কেটে ফেলতে হবে। বাগান পরিষ্কার রাখতে হবে। নিমের পাতার রস ১ কেজি প্রতি ২০ লিটার পানিতে মিশে স্প্র্রে করতে হবে। ডাইথেন এম-৪৫ কীটনাশক ২ গ্রাম প্রতি লিটার পানিতে মিশে স্প্রে করতে হবে। প্রয়োজনীয় পরিমাণ পটাশ ও দস্তা সার প্রয়োগ করতে হবে।

ফল সংগ্রহের পর বাগানের আবর্জনা এবং যদি আক্রান্ত অংশ থাকে পুড়িয়ে ফেলতে হবে। ডাইথেন-এম-৪৫ পানিতে ০.৩ % হারে মিশে ১০-১২ দিন পর পর ৩-৪ বার স্প্রে করতে হবে। জিংক সালফেট ও ছাই বর্ষার আগে গাছের গোড়ার মাটি আলগা করে প্রয়োগ করতে হবে। ফল সংগ্রহ করে আবর্জনা কেটে ফেলতে হবে। বাণিজ্যিক ভিত্তিতে এ লেবুচাষে এখন অনেকেই উদ্যোগী হচ্ছে লাভজনক আবাদের কারণে। দেশে লেবুজাতীয় ফলের বার্ষিক উৎপাদন প্রায় ৪০ হাজার মেট্রিক টন।

ফার্মসএন্ডফার্মার২৪/জেডএইচ