কলকাতার মুরগির বাজারে কার্যত ধস নেমেছে। বার্ড ফ্লুর আতঙ্কে কলকাতার মানুষ মুরগি খাওয়া ছেড়েছে। ফলে, মুরগির বাজারে নিদারুন মন্দা নেমেছে। যে গোটা মুরগি গত সপ্তাহে একশো ষাট টাকা দরে বিকিয়েছে, তা এই সপ্তাহে নেমে এসেছে একশো চল্লিশ টাকায়।
যদিও রাজ্য সরকার এখনও পশ্চিমবঙ্গে বার্ড ফ্লুর প্রকোপের কথা ঘোষণা করেনি, তাও কলকাতা পুরসভা পুর বাজারগুলি থেকে মুরগির রক্ত পরীক্ষাগারে পাঠানোর জন্যে নমুনা সংগ্রহ করার সঙ্গে সঙ্গে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। শুধু মুরগি নয়, লাইভস্টক অর্থাৎ পাঁঠা, শূকর এবং ভেড়ার মাংস বিক্রিতেও টান পড়েছে।
চিকিৎসকরা এখনই মুরগি খাওয়ার ব্যাপারে কোনও নিষেধাজ্ঞা জারি না করলেও সাধারণ মানুষ সাবধানের মার নেই এই আপ্তবাক্যে বিশ্বাসী হয়ে মুরগিকে ব্রাত্য করেছে। এমনকি রেস্তোরাঁগুলিতেও চিকেনের আইটেম পরিবেশন বন্ধ রাখা হচ্ছে।
ভারতের কয়েকটি রাজ্যে অ্যাভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা বা বার্ড ফ্লু ছড়িয়ে পড়ার পর সতর্কতা হিসেবে দেশটি থেকে মুরগি, মুরগির বাচ্চা ও ডিম, হাঁস এবং পাখি জাতীয় প্রাণির আমদানি অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করা হয়েছে।
একই সঙ্গে অবৈধভাবে চোরাপথেও এসব প্রাণী যাতে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে না পারে, সেজন্য সীমান্তবর্তী জেলাগুলোর প্রশাসনকে সতর্কতা করে চিঠি দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব রওনক মাহমুদ বিবিসি বাংলাকে এ কথা জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, “সতর্কতা হিসেবে এসব পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে, যদিও বাংলাদেশে এখনও কোন জেলায় বার্ড ফ্লু’র সংক্রমণ দেখা যায়নি।”
ফ্লু মাত্র দেড় সপ্তাহ আগে রাজস্থানে কাকের অস্বাভাবিক মৃত্যুর রহস্য থেকে আবিষ্কার হয় বার্ড-ফ্লু-র উপস্থিতি। অন্যদিকে মাত্র কয়েকদিনের মধ্যে কেরলে হাঁস-মুরগি সহ ১ লক্ষের বেশি পাখির মৃত্যু হয়। যদিও এখনও পর্যন্ত কোনো মানুষের ফ্লু-তে আক্রান্ত হওয়ার খবর মেলেনি স্বাস্থ্যদপ্তরের সূত্রে। পূর্ব-ভারতে বার্ড-ফ্লু-এর উপস্থিতি না পাওয়া গেলেও শুধু গুজবের জেরে কমছে মাংসের দাম, এমনটাই জানিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গ পোল্ট্রি ফেডারেশনের সেক্রেটারি মদন মাইতি।
বাংলাদেশে বার্ড ফ্লু সংক্রমণ রোধে সতর্কতামূলক আগাম প্রস্তুতি নিতে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরকে চিঠি দেয়া হয়েছে।
সচিব জানিয়েছেন, তাদের দপ্তর পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছে এবং বাংলাদেশের কোন জায়গা থেকে এখনও বার্ড ফ্লু সংক্রমণের কোন খবর পাওয়া যায়নি।
কর্মকর্তারা জানান, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ে এমন নির্দেশনা দেয়া হয়েছে, যেন হাঁস-মুরগির ছোটখাট অসুস্থতার খবর পাওয়া গেলে সাথে সাথে সেগুলোর পরীক্ষা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়।
একই সঙ্গে সরকারি ও বেসরকারি খামারগুলোকেও সতর্ক থাকার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
বাংলাদেশের মুরগির বাজারের প্রায় ৭০ শতাংশ বিদেশি জাতের মুরগির দখলে। আর ডিমের বাজারের প্রায় ৮০ শতাংশই আসে বিদেশি জাতের মুরগি পালনকারী ফার্মগুলো থেকে।
বাংলাদেশে সব মিলিয়ে মুরগির খামারির সংখ্যা ৭০ হাজারের বেশি।
করোনার কারণেও কমেছিল মুরগির দাম মদন মাইতির মতে, মুরগির মাংসের সঙ্গে করোনার যোগাযোগ সংক্রান্ত গুজবের জেরে গত বছরের জানুয়ারি মাসেই উত্তর চব্বিশ পরগণায় পোল্ট্রি-মুরগির দাম নেমে এসেছিল ৪০-৭২ টাকা/কেজি-তে। খাদ্যদপ্তরের এক আধিকারিক এ প্রসঙ্গে আবার হু-এর বিধির কথাও মনে করান।
হু-এর মতে, ৭০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উত্তপ্ত করলেই মাংসকে বার্ড-ফ্লু-এর জীবাণু থেকে মুক্ত করা সম্ভব, তাই অহেতুক আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই।
ফার্মসএন্ডফার্মার/২০জানুয়ারি২০২১