বালাইনাশকের নিরাপদ ব্যবহার

1541

ফসলকে বিভিন্ন ধরনের পোকামাকড় এবং রোগবালাইয়ের হাত থেকে রক্ষার জন্য আমরা বালাইনাশক ব্যবহার করে থাকি। বালাইনাশক ব্যবহারের মূলনীতি হলো সঠিক বালাইনাশক, সঠিক সময়ে, সঠিক মাত্রায় ও সঠিক পদ্ধতিতে প্রয়োগ করা। কিন্তু প্রায়শই বালাইনাশক ব্যবহার করতে গিয়ে অসাবধানতার কারনে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় । এজন্য বালাইনাশক ব্যবহারে নিম্নলিখিত কিছু সাবধানতা সবসময় অবলম্বন করা উচিত।

সঠিকভাবে রোগবালাই, পোকামাকড় ও আগাছা সনাক্তকরণের মাধ্যমে উপযুক্ত বালাইনাশক নির্বাচন করতে হবে।
বালাইনাশকের ল্যাবেল বা প্যাকেটে মেয়াদ লেখা আছে কিনা এবং মেয়াদ উল্লেখ থাকলে তা ব্যবহার উপযোগী আছে নাকি মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে গেছে সেদিকে লক্ষ্য রেখে অনুমোদিত বিক্রেতার নিকট হতে অনুমোদিত বালাইনাশক ক্রয় করতে হবে ।
দানাদার, তরল অথবা পাউডার বালাইনাশক সংগ্রহ করে তাদের জন্য নির্দিষ্ট ব্যবহার বিধি মেনে চলতে হবে।
বালাইনাশক মানুষ ও পশুখাদ্য হতে আলাদাভাবে পরিবহন ও সংরক্ষণ করতে হবে।

বালাইনাশক সংগ্রহ করে এর ব্যবহার বিধি ভালভাবে পড়তে হবে না বুঝলে অভিজ্ঞ কারো মাধ্যমে বুঝে নিতে হবে।
বালাইনাশকের বিষক্রিয়া থেকে নিজেকে রক্ষা করার জন্য সুরক্ষামূলক পোশাক যেমন- এপ্রোন, গামবুট, মুখোশ, গগল্স, হ্যান্ডগ্লাভস, ক্যাপ ইত্যাদি অবশ্যই পরিধান করতে হবে। এ সমস্ত সামগ্রী পাওয়া না গেলে স্থানীয় সহজলভ্য সামগ্রী যেমন- গামছা, ফুলহাতা শার্ট, প্যান্ট বা পায়জামা ব্যবহার করা যেতে পারে।

বালাইনাশকের ধরনের (তরল বা পাউডার) উপর ভিত্তি করে সঠিক মিশ্রণ তৈরী করতে হবে এবং মিশ্রণ তৈরীতে সবসময় পরিস্কার পানি ব্যবহার করতে হবে।

মিশ্রণ তৈরীতে কাদা পানি ব্যবহার করা যাবে না কারণ নজলে তা আটকে যেতে পারে এবং মিশ্রণ ট্যাঙ্কে ঢালার সময় অবশ্যই ছাকনি ব্যবহার করতে হবে।

ফসলভেদে প্রত্যেক বালাইনাশকের নির্দিষ্ট প্রি হারভেষ্ট ইন্টারভেল (PHI) রয়েছে যা মেনে চলতে হবে অর্থাৎ শেষ স্প্রে এবং ফসল উঠানোর নিরাপদ সময় মেনে চলতে হবে অন্যথায় ফসলের ভিতরে বালাইনাশকের বিষাক্ততার অবশিষ্টাংশ থেকে যেতে পারে যা ভোক্তা সাধারণের স্বাস্থ্যহানি ঘটাতে পারে।

স্প্রে করার পর জমিতে লাল নিশান বা পতাকা দিতে হবে এবং খেয়াল রাখতে হবে যাতে মানুষ, গরু, ছাগল, হাঁস, মুরগী ইত্যাদি ক্ষেতে ঢুকে বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত না হয়।

সকাল ও বিকেলে বালাইনাশক স্প্রে করতে হবে এবং বাতাসের বিপরীতে স্প্রে করা যাবে না কারণ এতে চোখে মুখে লেগে বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

ত্রুটিপূর্ণ স্প্রে মেশিন বা নজেল ব্যবহার করা যাবে না এবং স্প্রে মেশিন পিঠে রেখে কখনও বালাইনাশক ট্যাঙ্কে ঢালা, বালাইনাশকের গন্ধ নেয়া বা ছিটানোর পর নজেলে মুখ দিয়ে ফু দেয়া যাবে না।

বালাইনাশক ছিটানোর পর স্প্রে মেশিন পুকুর, ডোবা, নালায় ধোয়া যাবে না । এতে পরিবেশ দূষণসহ মৎস্যসম্পদ, পশুপাখি এবং মানুষের ক্ষতি হতে পারে।

বালাইনাশকের মূল বোতল বা প্যাকেট ছাড়া কখনও কোনরূপ পানীয় বোতল বা পাত্রে রাখা যাবে না এবং স্প্রে করার পর খালি বোতল ক্ষেতের আইলে রাখা যাবে না। খালি প্যাকেট বা বোতল তাৎক্ষণিকভাবে মাটিতে পুঁতে ফেলতে হবে।

বালাইনাশকের বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হলে রোগীকে বমি করাতে হবে, অচেতন অবস্থায় কখনও বমি করানো যাবে না। ডাক্তারকে বালাইনাশকের খালি বোতল বা প্যাকেট দেখাতে হবে এবং পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

কৃষি তথ্য সার্ভিস

ফার্মসএন্ডফার্মার/০১জুন২০