বালাইনাশক ব্যবহারে সমস্যা ও সমাধান

1996

আমরা আমাদের ফসলের প্রয়োজনে বালাইনাশক ব্যবহার করি। কিন্তু প্রাইশই দেখা যায়, বালাইনাশক ব্যবহার করতে গিয়ে বিভিন্ন প্রকার অনাকাঙ্খিত বিপদ এবং সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়। কীটনাশক হলো বিষাক্ত পদার্থ, যা মানুষ, পশুপাখি, কৃষি, পরিবেশ, বাতাস, পানি, মাটি, আবহাওয়াকে দারুনভাবে প্রভাবিত করে। এজন্য বালাইনাশকের ব্যবহার অত্যন্ত সচেতনতার সাথে করতে হয়। বালাইনাশক ব্যবহারের সময় ৪টি বিষয় মাথায় রাখতে হবে, সঠিক ঔষুধ, সঠিক সময়ে, সঠিক মাত্রায় এবং সঠিক প্রয়োগ পদ্ধতি অবলম্বন করে প্রয়োগ করতে হবে। তা না হলে ব্যবহার কার্যকর হবে না বা কাঙ্খিত ফল আসবে না।

বালাইনাশক ব্যবহারে সমস্যা
১. পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হয়
২. কৃষকের স্বাস্থ্যহানি ঘটে
৩. ফসল উৎপাদনে খরচ বেড়ে যায়

বালাইনাশক ব্যবহারে করণীয় বিষয়গুলো-
শুরুতে কীটনাশক কেনার সময় খেয়াল রাখতে হবে আমরা সঠিক পোকার জন্য সঠিক কীটনাশকটি, অনুমোদিত বিক্রেতার কাছ থেকে এবং বিশেষ করে অনুমোদিত বালাইনাশক কিনছি কিনা। তারপর কীটনাশকের লেবেল বা প্যাকেটে মেয়াদ লেখা আছে কিনা এবং তা মেয়াদ উত্তীর্ণ কিনা।

কেনার পরই আসে পরিবহন। উপযুক্ত নিরাপদ প্যাকেট পরিবহন, খাদ্য দ্রব্যের সাথে পরিবহন না করা, খোলা অবস্থায় পরিবহন না করা। সংরক্ষণের সময়ও বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে। তার মধ্যে আছে খাদ্য দ্রব্যের সাথে না রাখা, ব্যবহৃত অন্যান্য শিশি বোতলের সাথে না রাখা, শিশুদের হাতের নাগালের বাহিরে সংরক্ষণ করা।

ব্যবহারকালীন সর্তকতা আমাদের অনেকটুকু উপকারে আসে। এর মধ্যে আছে মুখে মুখোশসহ বিশেষ পোশাক পরা, চোখে কালো চশমা পরা, হাতে মোজা পরা, সারা শরীর ভালোভাবে ঢেকে রাখা, বালাইনাশক ব্যবহারকালীন কোন কিছু না খাওয়া এবং ধূমপান থেকে শতভাগ বিরত থাকা। সবচেয়ে ভালো গোসল করার পর খাওয়া। বাতাস যে দিকে বইছে তার দিকে প্রয়োগ করা, বিপরীত দিকে নয়। সকালের চেয়ে বিকারে করা ভালো, দুপুরে নয়। কাটাছেঁড়া শরীর নিয়ে প্রয়োগ না করা। হাত াদয়ে ওষুধ না মেশানো। গ্লাবস পরা।

কোনো কারণে বালাইনাশক ব্যবহারে সমস্যা দেখা দিলে প্রাথমিক চিকিৎসা হিসেবে কীটনাশক শরীরে লাগলে তাৎক্ষণিক কাপড় বদলে ফেলা এবং প্রচুর পানি ও সাবান দিয়ে ভালোভাবে ধোয়া, গিলে ফেললে গলায় আঙ্গুল দিয়ে বমি করা ও মৃদু গরম পানিতে ১চা চামচ লবণ মিশিয়ে রোগীকে খাওয়ানো। যতক্ষণ না পেট পরিষ্কার না হয় ততক্ষণ পর্যন্ত রোগীকে এভাবে লবণ পানি খাইয়ে যাওয়া, চোখে লাগলে পরিষ্কার পানি দিয়ে ১৫ থেকে ২০ মিনিট ধরে চোখে পানির ঝাপটা দেয়া, অচেতন রোগীকে কিছু খাওয়ানোর চেষ্টা না করা, নিঃশ্বাস বন্ধ হলে কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যবস্থা করা, যত দ্রুত সম্ভব ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া। সাথে কীটনাশকের প্যাকেট নিয়ে যাওয়া।

কীটনাশক ব্যবহরের পর খালি বোতল, প্যাকেট, ড্রাম ইত্যাদি পুকুর, ডোবা, খালে-বিলে বা খালি জায়গায় না ফেলা। এসব বোতল বা প্যাকেট ব্যবহারের পর মাটির নিচে পুঁতে রাখা, বালাইনাশক ব্যবহারের পর ব্যবহারকারী ভালোভাবে শরীর সাবান দিয়ে ধুয়ে পরিষ্কার করে গোসল করা এবং বিশ্রাম নেওয়া। আমরা অনেকেই বালাইনাশক ব্যবহারের সময় এসব সর্তকতা অবলম্বন করি না। কিন্তু এটি মোটেই ঠিক না। কেননা প্রভাব বা প্রতিফলন যে কোনো সময় ঘটতে পারে। শুধু মনে রাখতে হবে বিষ নিয়ে কাজ করছি। বিষ কোনো মতেই সুপেয় বা সুমধুর নয়, পরম বিষাক্ত। আমাদের সার্বিক সাবধানতা আমাদের সুস্থ সবল জীবন-যাপনে সহায়তা করবে। কীটনাশক বা বালাইনাশকের সাথে যারা জড়িত তাদের প্রত্যেকের জন্য এসব বিষয়গুলো আব্যশকীয়ভাবে জরুরি। প্রতিটি শর্ত নির্দেশনা অক্ষরে অক্ষরে পালন করতে হবে। গুরুত্ব কম দেয়া চলবে না। ব্যক্তি স্বাস্থ্য, সামাজিক স্বাস্থ্য এবং সর্বোপর জাতীয় স্বাস্থ্য রক্ষায় আমাদের সবার পূর্ণ সচেতন হতে হবে।

আমাদের দেশের অধিকাংশ কৃষক বেশি সচেতন না। অনেকেই কীটনাশকের বিষক্রিয়া সম্পর্কে জানেন না। এমনকি এর প্রয়োগবিধি সম্পর্কে ও অনেক কৃষকের ধারণা নেই। সঠিক কীটনাশক ও মেয়াদি কীটনাশক কিনা তা ভালোভাবে না জেনেই জমিতে প্রয়োগ করে ফেলেন। ফলে কৃষকগণ ফসলের কীটপতঙ্গ সঠিকভাবে দমন করতে পারেন না অন্যদিকে পরিবেশও দূষিত হয়। অনেক সময় তারা অসাধু ব্যবসায়ী দ্বারা প্রতারিত হন। বালাইনাশক ব্যবহার করে কার্যকরভাবে বলাই দমন করতে তো পারেনই না বরং ক্ষতি হয় পরিবেশের। এ প্রেক্ষিতে কীটনাশক ব্যবহার সম্পর্কে ব্যাপক গণসচেতনতা সৃষ্টি করা আবশ্যক। প্রথমেই কীটনাশকের লেবেল বা প্যাকেটে মেয়াদ লেখা আছে কিনা এবং তা মেয়াদোত্তীর্ণ কিনা তা দেখে নিশ্চিত হতে হবে। আবার সঠিক বালাইয়ের জন্য সঠিক বালাইনাশকও বাছাই করতে হবে। একটি বালাইনাশক ব্যবহারের ফলে তা দ্বারা শস্যের নির্দিষ্ট পোকা ছাড়াও মাটিতে বিদ্যমান অন্যান্য প্রায় সব জীব মারা যায়। ফলে পরিবেশ ক্রমশ তার জীববৈচিত্র্য হারাচ্ছে এবং ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ছে। মেয়াদ উত্তীর্ণ বালাইনাশকে সঠিক মাত্রার ইনগ্রেডিএন্ট বা পোকা মরার জন্য যে উপাদান তা থাকে না। অর্থাৎ কার্যকারিতা ঠিক থাকে না। ফলে যে পোকার জন্য তা ব্যবহার করা হয় তা অনেক সময়ই দমন করা যায় না বরং সে পোকা বা তার বংশধর প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলে। ফলে দেখা যায় পরবর্তী সময়ে সঠিক মাত্রার কীটনাশকও কাজ করে না, অধিক মাত্রায় প্রয়োগ করতে হয়।

ফার্মসএন্ডফার্মার/১৯মে২০