বাড়তি আয়ের জন্য বাড়ির আঙ্গিনায় শাকসবজি চাষ

1040

homestead-brinjal
সুস্থ ও সবলভাবে বেঁচে থাকতে পুষ্টিকর খাবার খেতেই হবে। একজন পূর্ণ বয়স্ক লোকের দৈনিক ২১৩ গ্রাম সবজি খাওয়া প্রয়োজন। কিন্তু আমরা গড়ে মাত্র ৫৩ গ্রাম শাক-সবজি গ্রহণ করি। এর কারণে এদেশের কোটি কোটি মানুষ দৈহিক ও মানসিক অসুখে ভুগছে। এর মধ্যে বেশির ভাগই হচ্ছে শিশু এবং নারী। আমাদের মোট জনসংখ্যার শতকরা প্রায় ৭০ ভাগ, বিশেষ করে মহিলারা লৌহের অভাবে রক্তশূন্যতার শিকার। একমাত্র ভিটামিন-এ’ র অভাবে বছরে ৩০ হাজার শিশু অন্ধ হয়ে যায়। এসব সমস্যা সমাধানে শাক-সবজি খাওয়ার বিকল্প নেই। কারণ শাকসবজি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ছাড়াও সব ধরনের পুষ্টি সরবরাহ করে। তবে সে সবজি হতে হবে অব্যশই বিষমুক্ত। যেহেতু সব বসতবাড়ির আঙ্গিনায় কম বেশি খোলা জায়গা থাকে। তাই সেসব স্থানে শাকসবজি চাষ করে পারিবারিক পুষ্টির চাহিদা মিটানোর পাশাপাশি বাড়তি আয়েরও ব্যবস্থা করা যায়।

বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে শাকসবজি আবাদের লক্ষে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বেশ ক’টি সবজি মডেল উদ্ভাবন হয়েছে, যার মধ্যে কালিকাপুর সবজি উৎপাদন মডেল অন্যতম। পাবনা জেলাধীন ঈশ্বরদী উপজেলার কালিকাপুরে অবস্থিত ফার্মিং সিস্টেম গবেষণা এলাকায় ১৯৮৫ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত গবেষণা কার্যক্রম চালিয়ে এ সবজি উৎপাদন মডেল উদ্ভাবন করা হয়। এ মডেল’র সবজি বিন্যাস অনুসরণ করে চাষাবাদের মাধ্যমে চার সদস্য বিশিষ্ট একটি পরিবারের সারাবছরের সবজি উৎপাদন করা সম্ভব। এজন্য বসতবাড়ির রোদযুক্ত উঁচু স্থানে ৬ মিটার লম্বা ও ৬ মিটার চওড়া জমি নির্বাচন করে পাঁচটি বেড তৈরি করতে হবে। যেখানে প্রতিটি বেডের প্রস্থ হবে ৮০ সে.মিটার এবং দুই বেডের মাঝখানে নালা থাকবে ২৫ সে. মিটার।

বসতবাড়ির আঙ্গিনায় চাষযোগ্য জমি যেহেতু কম তাই জৈব সার ব্যবহার করে শাক-সবজি চাষ করা উত্তম। এক্ষেত্রে সবজির ধরন অনুযায়ী শতাংশ প্রতি ৬০-১০০ কেজি জৈব সার মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে। প্রয়োজন হলে অল্প পরিমাণ ইউরিয়া, টিএসপি এবং এমওপি সার দেয়া যেতে পারে।

আগাছা শাকসবজির অন্যতম শক্র। এরা একদিকে যেমন খাদ্যের ভাগ বসায়, অন্যদিকে ক্ষতিকর পোকার আশ্রয়স্থল হিসেবে উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করে। তাই আগাছা দেখামাত্র তুলে ফেলতে হবে। প্রয়োজনমতে সেচ এবং পানি নিস্কাশনের ব্যবস্থা নিতে হবে।

শাকসবজি প্রধান প্রধান ক্ষতিকর পোকার মধ্যে কুমড়া জাতীয় সবজির ফলের মাছি পোকা, বেগুনের ডগা ও ফল ছিদ্রকারী পোকা, টমেটো- বেগুন- ঢেঁড়শ’র সাদা মাছি, শিম-বেগুন-লাউ-বাঁধাকপি-টমেটো-শশা-কুমড়া’র জাব পোকা উল্লেখযোগ্য। এসব পোকা আইপিএম বা সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে দমন করতে হবে। এক্ষেত্রে পোকা ধরে মেরে ফেলা, ফেরোমোন ফাঁদ, বিষটোপ এসব ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে। পোকা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব না হলেই কেবল অনুমোদিত কীটনাশক সঠিক সময়ে, নির্দিষ্ট মাত্রায় ব্যবহার করা উচিত।

ফার্মসএন্ডফার্মার২৪/১১জানু২০২০