বাড়িতে ১৬ কেজির টার্কি মুরগি পালন করবেন যেভাবে

312

উনিশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে নিউ ইংল্যান্ড ওয়াইল্ড টার্কির সাথে গৃহপালিত টার্কির সংকরায়নের ফলে বর্তমান জনপ্রিয় ব্রোঞ্জ টার্কি মুরগির সৃষ্টি হয়েছে। এই টার্কি বর্তমানে পালন করা হয়ে থাকে। চাইলে বাড়িতে পালন করতে পারেন ১৬ কেজির টার্কি।

প্রথমেই জেনে নেওয়া যাক টার্কি মুরগির জাত ও উপজাতি নিয়ে। বর্তমানে আদর্শ প্রজননের মাধ্যমে কয়েক ধরনের উপজাতি তৈরি করা হয়েছে। ব্রোঞ্জ (Bronze), ন্যারেনজেনসেট (Narrangansett), সাদা হল্যান্ড (White Holland), বারবন, রেড (Bourbon Red), কালো (Black), শ্লেট (Slate) এবং, বেল্টসভিল হোয়াইট (Beltsville White)।

সাধারণত ব্রোঞ্জ উপজাতের টার্কি মুরগি বেশি পালন করা হয়ে থাকে। লেজ এবং পাখার প্রান্তভাগে সাদা চিহ্ন বিদ্যমান থাকায় এদেরকে খুবই আকর্ষণীয় মনে হয়। শরীরের পালকে তামাটে ব্রোঞ্জ রং এর চিহ্ন বিদ্যমান থাকে। এরা দেখতে বিবর্ণ মেটে রঙের। মিসিসিপি উপত্যকা এবং আমেরিকার পূর্বাঞ্চলের বন্য টার্কির সাথে এদের রংয়ের সামঞ্জস্য রয়েছে। প্রাপ্তবয়স্ক ব্রোঞ্জ টমের ওজন সাড়ে ১৬ কেজি প্রাপ্তবয়স্ক ব্রোঞ্জ হেনের ওজন ৯ কেজির উপরে হয়ে থাকে। এক বৎসর বয়সী ব্রোঞ্জ টমের ওজন- ১৫ কেজি এবং এক বছর বয়সী ব্রোঞ্জ হেনের ওজন- ৪ কেজি। প্রতিটি ব্রোঞ্জ হেন বছরে ৪০ থেকে ৮০ টি ডিম দিয়ে থাকে।

ডিম উৎপাদন
অধিক হারে উর্বর ডিম উৎপাদনের উপর সফল টার্কি পালন নির্ভর করে। টার্কির ডিম উৎপাদনের হার খুবই কম। কম বয়সি হেন বয়স্ক হেন অপেক্ষা অধিক ডিম দেয়। ক্যালিফোর্নিয়াতে টার্কির ডিম উৎপাদনের রেকর্ড পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে টার্কি মুরগি প্রথম বছর ৭৭ টি, দ্বিতীয় বছর ৫০ টি, তৃতীয় বৎসর ৪৪ টি এবং পঞ্চম বছর ২৮ টি ডিম দেয়।

ডিম ফুটে বাচ্চা বের হওয়ার সময় এর উপর ডিম দেওয়ার প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। যেসব বাচ্চা কম সময়ে ফুটে বের হয়েছে তারা শীতকাল পর্যন্ত ডিম দেয় এবং যেসব বাচ্চা বেশি সময়ে ফুটে বের হয় তারা প্রায় বসন্তকাল পর্যন্ত ডিম দেয়।

কৃত্রিম প্রজনন
প্রাকৃতিক প্রজনন এর চেয়ে কৃত্রিম প্রজনন দিয়ে টার্কি মুরগির ডিমের উর্বরতা হার বাড়ানো হয়।

টার্কি মুরগির প্রজনন দলের বৈশিষ্ট্য
যে কোন প্রজনন কর্মসূচির সফলতা নির্ভর করে প্রজনন দলের যোগ্যতার উপর। সতর্কতার সাথে প্রজনন দল নির্বাচন সফলতার পূর্ব শর্ত। আমেরিকার টার্কি ড্রাগন প্রজননের উদ্দেশ্যে তার কি নির্বাচনের জন্য কিছু নীতিমালা সুপারিশ করেছে যা অনুসরণ করা প্রয়োজন।

টার্কি মুরগির খাদ্য ও পুষ্টি
হাঁস-মুরগি ও পোল্ট্রির অন্যান্য প্রজাতির চেয়ে টার্কির পুষ্টির যথেষ্ট ব্যতিক্রমধর্মী। বাচ্চার বৃদ্ধির হার পোল্ট্রির অন্যান্য প্রজাতির বাচ্চার চেয়ে অনেক বেশি। তাই বাড়ন্ত অবস্থায় এদের খাদ্যের প্রোটিনের পরিমান খুবই বেশি দিতে হয়। কিন্তু প্রাপ্তবয়স্ক টার্কিতে প্রোটিনের পরিমাণ কম প্রয়োজন হয়।

পোল্ট্রির অন্যান্য প্রজাতির পুষ্টির চেয়ে আরেকটি উল্লেখযোগ্য দিক হলো কোন পুষ্টি উপাদানের ঘাটতি দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে অভাবজনিত লক্ষণ প্রকটভাবে পরিলক্ষিত হয়। প্রথম চার সপ্তাহ পর্যন্ত টার্কির রেশনে 28 থেকে 26 শতাংশ প্রোটিন থাকা উচিত। ৪ থেকে ৮ সপ্তাহ ২৩ শতাংশ প্রোটিন থাকা উচিত। আট সপ্তাহ থেকে ১২ সপ্তাহের ২১.৫ পার্সেন্ট প্রোটিন থাকা দরকার এবং ১২ থেকে ২৫ সপ্তাহের ১৮% ও ১৫ থেকে ২০ সপ্তাহে ১৬ পার্সেন্ট প্রোটিন দেওয়া উচিত।

প্রোটিনের উৎস হিসেবে মিট এন্ড বোন মিল, সয়াবিন মিল বিভিন্ন ধরনের আমিষ যুক্ত প্রোটিন কনসেনট্রেট ব্যবহৃত করা যেতে পারে। অত্যাবশ্যকীয় অ্যামাইনো এসিড, আবশ্যকীয় খনিজ উপাদান এবং ভিটামিন, পর্যাপ্ত পরিষ্কার পানি বৃদ্ধিকে প্রভাবিত করে। অন্যদিকে স্ত্রী টার্কি মুরগি পুরুষ টার্কি মুরগির তুলনায় প্রোটিনের পরিমাণ বেশি প্রয়োজন হয়।

টার্কি মুরগির খাদ্য গ্রহণের পরিমাণ
টার্কি প্রথম চার সপ্তাহ বয়সে দৈনিক গড়ে ৩০ গ্রাম করে খাদ্য গ্রহণ করে। ৩০ সপ্তাহ বয়সে এদের খাদ্য গ্রহণের পরিমাণ দৈনিক ৩০০ গ্রাম। টার্কি মুরগি বেশ দক্ষতার সাথে খাদ্য রূপান্তরিত করতে পারে। শূন্য থেকে ১২ সপ্তাহ পর্যন্ত সময়ে বাচ্চা প্রতি কেজি ওজন বৃদ্ধির জন্য ২ থেকে ২.৫ কেজি খাদ্য গ্রহণ করে। তিন মাস বয়সের পর থেকে এদের দৈহিক বর্ধনের হার কমে যায়। সপ্তম মাসে প্রতিটি প্রার্থী প্রায় ৩ দশমিক ৫ কেজি ওজন প্রাপ্ত হয়। অষ্টম মাসে ওজন প্রায় পাঁচ কেজি হয়।

টার্কি মুরগির রোগ
বাড়ন্ত টার্কি মুরগি এবং প্রজনন দলে মৃত্যুজনিত কারণে লাভজনক টার্কি উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হয়। বিভিন্ন রোগ ব্যাধির ফলে তার মৃত্যু ঘটে থাকে

কালোমাথা রোগ
কালোমাথা বা ব্ল্যাক হেডস টার্কির একটি মারাত্মক রোগ। এক ধরনের প্রোটোজোয়া এই রোগের কারণ। এ জীবাণু টার্কির সিকাতে অবস্থান করে এবং কয়েক মাস পর্যন্ত সংক্রমণ ছড়িয়ে থাকে। বয়স্ক টার্কির চেয়ে তিন মাস বয়সি টার্কি মুরগি এরোগের প্রতি অধিক সংবেদনশীল।

পড়তে পারেন: দেশে ডিমের শ ১২৫০, মুরগির কেজি ২৬০

রোগের লক্ষণ
মাথার রং কালো হয়ে যায়। হলদে রঙের পাতলা পায়খানা করে। যকৃত ফুলে বড় হয়ে যায়। ট্রাইকোমোনিয়াসিস রোগ
কক্সিডিওসিস এর সাথে এর মিল রয়েছে। অনেক সময় ভুলবশত একে কক্সিডিওসিস মনে হতে পারে। এ রোগে আক্রান্ত 6 থেকে 10 সপ্তাহের বাচ্চা আক্রান্ত হয়।

রোগের লক্ষণ– হলুদ ফেনাযুক্ত এবং অর্ধ তরল পায়খানা করে।

বটুলিজম রোগ
ক্লস্ট্রিডিয়াম বটুলিজম নামক এক প্রকার ব্যাকটেরিয়া থেকে এই রোগ সৃষ্টি হয়। লক্ষণ- টার্কি ঝিমাতে থাকে, গলায় শব্দ হবে, শরীরের বিভিন্ন অংশ অবসন্ন হতে দেখা যায়, ইত্যাদি। এছাড়া মুরগি তে যেসব রোগ পরিলক্ষিত হয় তার টার্কিতে সেসব রোগ দেখা যায়। যেমন- কক্সিডিওসিস, ফাউল কলেরা, ফাউল পক্স এবং প্যারাটাইফয়েড বিভিন্ন প্রকার কৃমিতে এরা আক্রান্ত হয়।

বাড়িতে ১৬ কেজির টার্কি মুরগি পালন করবেন যেভাবে লেখাটি মিসকাত বিডি থেকে নেওয়া হয়েছে।

ফার্মসএন্ডফার্মার/২০জুন ২০২২