বাড়ির আঙিনায় ভেন্না গাছ চাষ করবেন যেভাবে

1255

ভেন্না বা ক্যাস্টর বা রেঢ়ী গাছের পরিচিতি, চাষ পদ্ধতি ও উপকারিতা

নাম : ভেন্না বা রেঢ়ী
বৈজ্ঞানিক নাম : Ricinus Communis

Malpighiales বর্গের Euphorbiaceae পরিবারের Acalypheae গ্রোত্রের একটি উদ্ভিদ। যা কিনা আগাছা হিসাবেই সুপরিচিত। এই ভেন্নার বীজে তেলের পরিমান ৪৫-৬০% তেল থাকে যা ট্রাই গ্লাইসিরাইড যার বেশির ভাগ রাইসোলেনিক এসিড।

ভেন্না বহুবর্ষজীবি উদ্ভিদ। ভেন্না গাছ ১০-১৫ ফুট পর্যন্ত উঁচু হতে পারে। প্রায় ডালপালাওহীন গাছ, উপরের দিকে অল্পকটি ডাল হতে দেখা যায়। গাছের কাণ্ডের ভেরতটা ফাঁপা থাকে। কাণ্ডের বেড় ৫-৬ ইঞ্চি হতে পারে। কাণ্ডে ৫-৬ ইঞ্চি দূরে দূরে একটি করে গিঁট থাকে। প্রতিটা গিট থেকে বেরোয় একটা করে পাতা।

কান্ড ধূসর প্রকৃতির এবং ফাঁপা হয়।

ভেন্না গাছ দেখতে কিছুটা পেঁপে গাছের মত, হালকা-পলকা গাছ পাতেও দেখতে অনেকটা ছোট পেঁপে পাতার মতই। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় পাতার উদ্ভিদের মধ্যে ভেন্না একটি। লম্বা বোঁটা বা ডাঁটা যুক্ত সবুজ এই পাতার ব্যস এক থেকে দেড় ফুট পর্যন্ত হতে পারে। বোঁটা দুই থেকে তিন ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়। বোঁটার ভেতরটাও পেঁপে ঢাটার মতই ফাঁপা হয়। পাতার বাইরের কিনারে খাঁজকাটা খাঁজকাটা থাকে।

সাধারণত বর্ষাকালে ভেন্নার চারা গজায়। প্রতি বছর হেমন্ত ও শীতকালে ভেন্নার ফুল-ফল হয়। ভেন্না গাছের মাথায় থোকা থোকা লালচে ফুল হয়। ফলও হয় থোকা থোকা, একেকটা প্রায় এক ইঞ্চির মত। সবুজ ফলের গায়ে নরম নমর কাঁটা থাকে। কাটা এতোই নমর যে গায়ে ফোঁটে না।

ফলের ভিতরে ৩ বা ৪টা কালো বাদামী ছোপের বীজ থাকে। ভেন্নার এই বীজ থেকেই তৈরি হয় ক্যাস্টর অয়েল।

জাত এবং চাষ পদ্ধতি:

বাংলাদেশে অনুমোদিত জাত নেই কিন্তু লাল এবং সবুজ নামে দুইটি স্থানীয় জাত রয়েছে। তবে প্রতিবেশী দেশ ইন্ডিয়ার রয়েছে ৮ টি উফশী জাত এরমধ্যে NPH-1, TMV5, TMV6, CO1 ইত্যাদি প্রসিদ্ধ।

চাষাবাদ : বাংলাদেশের জলবায়ু এবং আবহাওয়া ক্যাস্টর চাষের উপযোগী। বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমান ৫০০-৮০০ মিমি.

মাটি : যেকোন অনুর্বর মাটিতে ভেন্না চাষ হতে পারে। তবে মাটির পিএইচ ৫.৫-৬.০ হলে ভাল। বেলে দো আশ মাটিতে ভেন্না ভাল হয়।

রোপণ সময় : বর্ষার আগে জুন মাসে / বছরের যে কোন সময়। সেচ এবং বৃষ্টি নির্ভর পদ্ধতি চাষ করা যায়।

জমি তৈরি : আগাছা পরিষ্কার করে ৩-৪ চাষ দিয়ে জমি প্রস্তুত করে নিতে হবে।

বীজের হার এবং বপন: ১০-১২/হেঃ, চারা থেকে চারার দূরত্ব ৪০-৬০ সেঃ মিঃ এবং সারি থেকে সারির দূরত্ব ৯০-১২০ সেমি।

সার ব্যবস্থাপনা: তেমন সার লাগে না তবে ভাল ফলনের জন্যে N: P: K অনুপাত হবে ৪০কেজি : ৪০কেজি : ২০কেজি হেক্টর
প্রতি। ইউরিয়া অর্ধেক শেষ চাষের সময় বাকি সার এক সাথে আর বাকি অর্ধেক ইউরিয়া চারা গজানোর ৩০ -৪০ দিন পর দিতে হবে। অধিক ফলনের জন্যে ২০কেজি/হেঃ সালফার ব্যবহার করলে ভাল হয়।

রোগ বালাই: তেমন হয় না তবে পড বোরার দেখা যায় মাঝে মাঝে।

ফসল সংগ্রহ: ১৪০-১৭০ দিনের মধ্যে ফল পাকতে শুরু করে এবং ২-১ টি ফল পেকে শুকিয়ে গেলেই সংগ্রহ করতে হবে এবং মাড়াই করে সংরক্ষণ করতে হবে।

ফলন: বৃষ্টি নির্ভর ৩৫০-৫০০ কেজি/হেঃ এবং সেচ নির্ভর পদ্ধতিতে ৭০০-৮০০ কেজি ক্যাস্টর বীজ পাওয়া যায়।
(নোট : আন্তঃ ফসল হিসাবে বাদাম, ছোলা ইত্যাদি চাষ করে বাড়তি আয় সম্ভব হয়।)

স্থানীয় ভাবেভেন্নার তেল বানানোর প্রক্রিয়া:

এ সম্পর্কে স্থানীয়রা বলেন, প্রথমে পাকা ফল সংগ্রহ করে তা থেকে বীচি বের করে নিতে হয়। সংগৃহিত বীচি প্রথমে সিদ্ধ করে রোদে দিতে হয়। তারপর বীচিগুলো কড়াইয়ে ভেজে পাথরে পিসতে হয়। পাথরে পিসার পর গুড়োগুলো বড় পাতিলে পানিতে জাল দিতে হয়। জাল দিতে দিতেই পানির উপরেই তেলের অংশগুলো বলের মত গোল গোল হয়ে পানিতে ভাসতে থাকে। পানিতে ভাসমান সেই গোলাকার বলগুলো বড় চামচ দিয়ে উঠিয়ে নিয়ে সংরক্ষণ করতে হয়। সেইগুলোই মূলত ভেন্নার তৈল। এই তেলের রং সয়াবিন তৈলের মত। তবে গন্ধটি ভিন্ন। তারা জানায় ১ কেজি তৈলের জন্য আড়াই কেজি ভেন্নার বীজের প্রয়োজন হয়।

ফার্মসএন্ডফার্মার/১০এপ্রিল২০