তবিবর রহমান, যশোর প্রতিনিধি: ডালিম, বেদানা, কমলা, মাল্টা, থাই পেয়ারা, কৎবেল ঝুলছে ডালে ডালে। আছে বাতাবি লেবু, কাগজীলেবু, নেওয়া ফল, চেরি ফল। সৌরভ ছড়াচ্ছে গোলাপ, টগর, বকুল ফুল। ৯৫০ বর্গফুটের ছাদে এরকম ২৪০টি ফুল-ফলের গাছের সমাহার দেখলে যে কারও মন জুড়িয়ে যাবে।
গত ৫ বছর ধরে বাড়ির ছাদে তিলে তিলে সবুজের এই সমারোহ ঘটিয়েছেন গৃহবধূ ফারহানা ইয়াসমিন। যা শুধু দৃষ্টি নন্দনই নয়; এলাকার মানুষের কাছেও মডেল।
যশোর শহরের বকচর মসজিদপাড়া এলাকার ব্যবসায়ী আকরাম হোসেনের স্ত্রী গৃহবধূ ফারহানা ইয়াসমিন। বাড়ির ছাদে ফুল বাগান গড়ে তিনি নিজ এলাকায় সুনাম অর্জন করেছেন। সমৃদ্ধি ঘটেছে তার পরিচিতির। এখন তার নাম না বলেও ওই বাড়িতে যে কেউ পৌঁছে যেতে পারেন শুধু ছাদের ফুল-ফলের বাগান করার কারণে।
বকচর র্যাব অফিসের সামনে গিয়ে ‘বাড়ির ছাদে বাগান করেছে’ বললেই স্থানীয়রা বুঝে যান গৃহবধূ ফারহানার কথাই জানতে চাওয়া হচ্ছে। এমন কথা বলেই ৩ ডিসেম্বর ওই বাড়িতে পৌঁছে যায় এ প্রতিবেদক। আর বাড়ির কাছে গিয়ে বুঝতে অসুবিধা হয়নি এই সেই ফারহানার ছাদের বাগান বাড়ি। সিঁড়ি টপকে ছাদে পৌঁছানোর পর চোখে অনুভূত হয় কোমল প্রশান্তি। ছাদে উঠে দেখা গেল গোটা ছাদটাকে ফল, ফুল আর সবজির ক্ষেত বানিয়েছেন ফারহানা। কর্কশ ছাদটাকে সবুজ প্রান্তরে রূপান্তরিত করেছেন তিনি। শুধু কি তাই-ছাদের এই বাগানটার অলি-গলি চেনাতে রেখেছেন শাপলা চত্বর, সবজি চত্বর, রোজ গার্ডেন, মেঠোপথ, সবুজ বনসহ নানা ধরনের নাম।
ছাদের উপরে সারিবদ্ধভাবে টব। আর সেখানে শোভা পাচ্ছে নানা জাতের ফল, ফুল, সবজি আর ঔষধিগাছ।
২৪০টি টবের উপর রয়েছে বিলুপ্ত গাছ নেওয়া, থাই কালো জাম, ডালিম, বেদানা, কমলা, মাল্টা, থাই পেয়ারা, চেরি, কাগজীলেবু, জবা, গোলাপ, বকুল ফুল, শাপল।
আছে বারো মাসি আমড়া, বেগুন, ঝালসহ নানা সবজি। এছাড়া পুদিনাপাতা, আদা, অ্যালোভেরা, মেহেদির মত ঔষুধি গাছ শোভা পাচ্ছে ছাদে।
ফারহানা ইয়াসমিন পপি জানান, প্রথমে শখের বশে ২০১২ সালে একটা দুইটা করে ফুল-ফলের চারা এনে টবে করে ছাদের উপর লাগানো শুরু করি। এখন ২৪০টি টবে রয়েছে ফুল, ফল, সবজি ও ঔষুধি গাছ। দুই সন্তানের জননী ফারাহান নিজের নামেই ‘ফারহানা ফ্রুটস এন্ড ফ্লাওয়ার গার্ডেন’ নাম দিয়েছেন।
তিনি বলেন, এখন বাগান পরিচর্যা করতে তার প্রতিদিন ৪/৫ ঘণ্টা কাজ করতে হয়। সকালে তিন ঘণ্টা এবং বিকালে দেড়-দুই ঘণ্টা কাজ করি। এজন্য তার দুই মেয়ে ও স্বামী আকরাম হোসেন সহযোগিতা করেন।
তিনি জানান, ছাদবাগানে উৎপন্ন সবজি ও ফল বিষমুক্ত। নিজেরা খাই, প্রতিবেশীদেরও সামর্থ অনুযায়ী দিই। তাছাড়া কিছু বিক্রিও করি। এ থেকে মাসে ৩ হাজার টাকা সাশ্রয় হয়।
জানতে চাইলে তিনি বলেন, জৈব সার ছাড়া বাগানে কোন ধরনের রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার করা হয় না। তবে রোগ বালাই দেখা দিলে কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শে কীটনাশক ব্যবহার করা হয়।
যশোর সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা খালিদ সাইফুল্লাহ বলেন, ফারহানার বাড়ির ছাদের বাগান একটি মডেল। আমিসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সেটা কয়েকবার দেখতে গিয়েছি। অত্যন্ত পরিপাটি। টবে করে গাছ লাগানোয় ওই ছাদে পানি পড়ে না। তাই ছাদটি ছ্যাতছ্যাঁতেমুক্ত। আমাদের কাছে কোন প্রয়োজন হলে তিনি যোগাযোগ করেন। আমরা তার মতো নারী কৃষি উদ্যোক্তাদের সহযোগিতা করে থাকি।
চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও এনিম্যাল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত
ফার্মসঅ্যান্ডফার্মার২৪ডটকম/মোমিন