বাড়ির পতিত জায়গায় আদা চাষ করবেন যেভাবে

1367

আদা জিঞ্জিবারেসি (Zingiberaceae) পরিবারভূক্ত একটি উদ্ভিদ মূল যা ভেষজ ঔষুধ এবং মসলা হিসাবে খুব জনপ্রিয়। আদার বৈজ্ঞানিক নাম (Zingiber officinale)। এর উৎপত্তি দক্ষিন-পূর্ব এশিয়ায়।

আদায় আমিষ ২·৩%, শ্বেতসার ১২·৩% , আঁশ ২·৪% , খনিজ পদার্থ, ১·২% পানি ৮০·৮% ইত্যাদি উপাদান বিদ্যমান। এটি ভেষজ ঔষধ। মুখের রুচি বাড়াতে ও বদহজম রোধে, ওজন কমাতে সাহায্য করে। এছাড়াও সর্দি, কাশি, আমাশয়, জন্ডিস, পেট ফাঁপায় আদা চিবিয়ে বা রস করে খাওয়া হয়। কাশি এবং হাঁপানির জন্য আদার রসের সাথে মধু মিশিয়ে সেবন করলে বেশ উপশম হয়।

আমাদের দৈনন্দিন জীবনে আদা একটি গুরুত্বপূর্ন নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস। বর্তমানে আমরা বাজার থেকে আদা অনেক উচ্চমূল্যে ক্রয় করে থাকি। কারন আদার উৎপাদন আমাদের প্রয়োজনের তুলুনায় অনেক কম। আদা চাষ অন্যান্য অর্থকারী ফসলের থেকে অধিক লাভজনক।

বর্তমানে ছাদ কৃষি, বাড়ির আঙ্গিনায় কৃষি খুব জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। আমরা আমাদের পারিবারিক চাহিদা পূরনের জন্য নিজ নিজ উদ্যোগে ছাদে বা বড়ির আশে-পাশে ফাঁকা জায়গায় আদা চাষ করতে পারি।

পারিবারিক চাহিদা পূরনের জন্য বস্তা পদ্ধতি লাভজনক। এজন্য সিমেন্টের ব্যাগ, আলুর বস্তা, পাটের বস্তা, সারের বস্তা, বাড়ির আঙ্গিনার ছাইয়ের ঢিপি আদা চাষের জন্য ব্যবহার করতে পারি। এ ক্ষেত্রে বস্তায় নিচের দিকে ও পাশে অবশ্যই ছিদ্রে করে নিতে হবে। বাড়ির উঠোন, প্রাচীরের কোল ঘেঁষে বা বাড়ির আশেপাশের ফাঁকা জায়গা অথবা ছাদে যেখানে খুশি চাষ করা যায়, এমন কি ছায়াযুক্ত জায়গায় এই পদ্ধতিতে চাষাবাদ করা যায়।

আদা চাষাবাদের জন্য বেলে-দোয়াশ বা দোয়াশ মাটি উপযোগী। মাটি অবশ্যই ঝুরঝুরে হতে হবে। এ ক্ষেতে ছাই অথবা ভার্মি কম্পোষ্ট ও গোবর সার ব্যবহার করা যেতে পারে। বস্তায় মাটি তোলার আগে মিশ্রিত মাটি অবশ্যই রোদে ভালভাবে শুকিয়ে নেওয়া যেতে পারে যার ফলে অনেক মাটি বাহিত রোগের হাত থেকে রক্ষা করা সম্ভব।

রাইজোম অথবা কন্দের মাধ্যমে আদা বংশবিস্তার করে থাকে। কন্দ সরাসরি বস্তায় ব্যবহার করা যেতে পারে অথবা টবে আলাদাভাবে চারা তৈরি করে নেওয়া যেতে পারে। চারার জন্য নির্বাচিত কন্দ বস্তায় বা টবে লাগানোর আগে ছত্রাকনাশক (সিকিউর/নাটিভো/অটোস্টিন) দিয়ে শোধন করে নিতে হবে। একটি বস্তায় ৩-৫ টি চারা বপন করা যেতে পারে। আদা রোপনের ২০-২৫ দিনের মধ্যে কন্দ থেকে গাছ বের হয়ে আসে। ২-৩ মাস অন্তর অন্তর বস্তার মাটি আলগা করে দিতে হবে। একই সাথে সামান্য পরিমান ইউরিয়া, পটাশ ও খইল খাবার হিসাবে ব্যবহার করা যেতে পারে।

আদা চাষের সময় খেয়াল রাখতে হবে অতিরিক্ত পানি দেওয়ার না হয়। স্যাঁতস্যাঁতে আবহাওয়ায় অথবা বর্ষাকালে “কন্দ পচা রোগ” বিস্তার লাভ করে। এ রকম পরিস্থিতিতে নাটিভো/সিকিউর/ফলিকুর/কপার অক্সিক্লোরাইড/অটোস্টিন ব্যবহার করা যেতে পারে। আদ্র আবহাওয়ায় ডগা ও কান্ড ছিদ্রকারী পোকার আক্রমন হয়ে থাকে। যার ফলে পাতা হলুদ বর্ন ধারন করে। এ জন্য ডেল্টামেথ্রিন/সাইপারমেথ্রিন/সুমিথিয়ন জাতীয় কীটনাশক ব্যবহার করা যেতে পারে।

আদা সাধারনত ৭-৮ মাস পর সংগ্রহের উপযুক্ত হয়। এপ্রিল-মে মাসে রোপন করলে ডিসেম্বর-জানুয়ারি মাসে পরিপক্ক আদা সংগ্রহ করা যায়। একটি বস্তা থেকে ১.৫ থেকে ২ কেজি পর্যন্ত আদা উৎপাদন করা সম্ভব।

ফার্মসএন্ডফার্মার/২০আগস্ট২০