বিদেশ থেকে হিমায়িত গরুর মাংস আমদানি প্রক্রিয়া বন্ধের দাবি জানিয়েছেন গরুর মাংস উৎপাদন ও প্রক্রিয়াজাতকরণের সাথে সংযুক্ত ১০টি সংগঠন। সংগঠনগুলোর নেতারা বলছেন, বিদেশ থেকে গরুর মাংস আমদানি করলে দেশীয় উদ্যোক্তা ও প্রান্তিক খামারিরা চরম আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হবেন। ফলে বিশাল যুব সমাজ তথা উদ্যোক্তারা বেকার হয়ে পড়বেন। যার প্রভাব পড়বে গ্রামীণ অর্থনীতি, সামাজিক নিরাপত্তা, খাদ্য নিরাপত্তা ও কৃষি খাতে।
সোমবার (৯ সেপ্টেম্বর ) জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি জানায় তারা।
এতে অ্যানিমেল হেলথ কোম্পানিজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ড. নজরুল ইসলাম বলেন, বিদেশ থেকে অবাধে হিমায়িত গরুর মাংস আমদানি করলে দেশিয় উদ্যোক্তা ও প্রান্তিক খামারিরা চরমভাবে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়বে। এর ফলে তরুন উদ্যোক্তারা বেকার হয়ে পড়বে। আর এর নেতিবাচক প্রভাব গিয়ে পড়বে গ্রামীণ অর্থনীতি, সামাজিক নিরাপত্তা, খাদ্য নিরাপত্তা ও কৃষিখাতে।
দেশে মাংসের উৎপাদন ও চাহিদার তথ্য তুলে ধরে নজরুল ইসলাম বলেন, দেশের ১৬ কোটি ভোক্তার প্রাণিজ আমিষের চাহিদা পূরণে এদেশের খামারি ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। জনপ্রতি দৈনিক ১২০ গ্রাম মাংসের চাহিদা হিসেবে বার্ষিক মাংসের চাহিদা ৭২ দশমিক ৯৭ লাখ মেট্রিক টন।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগি থেকে মোট মাংস উৎপাদিত হয়েছে ৭৫ দশমিক ১৪ লাখ মেট্রিক টন। অর্থাৎ ২ দশমিক ১৭ লাখ মেট্রিক টন উদ্বৃত্ত। এর মধ্যে গরু-ছাগলের মাংস মোট উৎপাদনের ৫৫ শতাংশ। সরকারি তথ্যমতে আমরা ইতিমধ্যে প্রাণিজ আমিষে স্বাবলম্বী হয়েছি। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, বিদেশ থেকে হিমায়িত গরুর মাংস আমদানি সংক্রান্ত একটি প্রস্তাবনা বর্তমানে সরকারের সক্রিয় বিবেচনায় রয়েছে। দেশের বৃহত্তর জনগণের স্বার্থে আমরা হিমায়িত গরুর মাংস আমদানি প্রক্রিয়াটি বন্ধ করার জন্য সরকারের কাছে আবেদন জানাচ্ছি।
সংগঠনের নেতারা আরও বলেন, দেশের ডেইরি ও ক্যাটল শিল্প একটি বিকাশমান শিল্প। স্বাধীনতা পরবর্তী সময় থেকে আজ পর্যন্ত যতটা প্রবৃদ্ধি অর্জন করার কথা ছিল তা সম্ভব হয়নি কেবল বিদেশি গরুর অবাধ বাণিজ্যের ফলে। ডেইরি ও ক্যাটল শিল্প বাংলাদেশের মৌলিক শিল্প। মৌলিক শিল্পে বিদেশি আমদানি নির্ভরতা গ্রহণযোগ্য নয়। এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত রয়েছে গ্রাম বাংলার কোটি কোটি পরিবার ও খামারির জীবন-জীবিকা।
দেশে মাংস উৎপাদনে যেসব সমস্যা রয়েছে তা সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া জরুরি বলেও মনে করেন তারা। গবাদি পশুর উৎপাদন বাড়াতে সহজ শর্তে ব্যাংক ঋণ, সরকারি পতিত জমিগুলো কৃষকদের লিজ দেওয়া ও ১০ বছরের জন্য এই খাতে ভ্যাট রেয়াতেরও দাবি জানার সংগঠনের নেতারা।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন অ্যানিমেল হেলথ কোম্পানিজ অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি মমিন উদ্দৌলা, বাংলাদেশ ভেটেরিনারি অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব ডা. মো. হাবিবুর রহমান মোল্লা, বাংলাদেশ ডেইরি ফার্ম অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. শাহ এমরান, বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব খন্দকার মহসিন প্রমুখ।
ফার্মসএন্ডফার্মার২৪/জেডএইচ