এন্টিবায়োটিক এবং এন্টিবায়োটিক রেজিস্টান্ট বিষয়ে
সহজ ভাষায় কিছু তুলে ধরছি :
★ প্রশ্ন : এন্টিবায়োটিক কি?
উত্তর : যেসব ঔষধ আমাদের দেহের ব্যাক্টেরিয়া/জীবাণুকে হত্যা করে সেগুলোই এন্টিবায়োটিক নামে পরিচিত। যেমন : সর্দি- কাশির জন্যে বহুল ব্যবহৃত Zimax(জিম্যাক্স), আমাশয়ের জন্যে Flagyl(ফ্লাজিল),
এখন কার বহুল ব্যবহৃত এন্টিবায়োটিক Cef-3 ইত্যাদি।
★ প্রশ্ন : এন্টিবায়োটিক কিভাবে কাজ করে?
উত্তর : এন্টিবায়োটিক আমাদের শরীরের উপর কোন কাজ করে না। কাজ করে আমাদের শরীরে বসবাস করা ব্যাক্টেরিয়া/জীবাণুর বিরুদ্ধে। এন্টিবায়োটিক এসব জীবাণুকে হত্যা করে অথবা এদের বংশবৃদ্ধি বন্ধ করে দেয়।
★ প্রশ্ন : ব্যাক্টেরিয়া/জীবাণুকে হত্যা করতে কি নির্দিষ্ট
কোন এন্টিবায়োটিক খেতে হয়?
উত্তর : জ্বী। একেক রকম জীবাণুকে হত্যা করতে একেক রকম এন্টিবায়োটিক খেতে হয়। যেমন : আমাশয় এর জীবাণুকে হত্যা করতে Metronidazole-ই সবচেয়ে কার্যকরী এন্টিবায়োটিক। দুনিয়ার যেই দেশেই যান না কেনো আমাশয়ের জন্যে আপনাকে Flagyl ই দিবে। অন্য এন্টিবায়োটিক খেলে কাজ হবেনা।
★প্রশ্ন : জীবাণু কে পুরোপুরিভাবে হত্যা করতে কি পরিমাণ এন্টিবায়োটিক খেতে হয়?
উত্তর : একেক জীবাণু কে পুরোপুরিভাবে নির্মূল করতে
একেক পরিমাণ এন্টিবায়োটিক খেতে হয়। এই ডোজ বাচ্চাদের জন্যে এক রকম আর বড়দের জন্যে আরেক রকম। এন্টিবায়োটিক নির্দিষ্ট পরিমাণে এবং একটি নির্দিষ্ট সময়জুড়ে খেতে হয়। নইলে জীবাণু পুরোপুরিভাবে নির্মূল হয়না। যেমন : বড়দের জন্যে Flagyl এর ডোজ হচ্ছে প্রতিবেলা ৮০০ মিলিগ্রাম করে টানা পাঁচদিন। এর ব্যতিক্রম হলেই এটা পুরোপুরিভাবে জীবাণু কে হত্যা করতে পারবে নাহ। আপনি যদি
৮০০ মিলিগ্রাম এর বদলে ৪০০ মিলিগ্রাম করে খান তাহলে কাজ করবে নাহ। আবার তিনবেলার বদলে একবেলা করে খেলে কাজ হবেনা। একই সাথে যদি পাঁচদিন এর বদলে ২ দিন খাওয়া হয় তাহলেও জীবাণু পুরোপুরিভাবে মরবে নাহ।
★ প্রশ্ন : জীবাণু পুরোপুরিভাবে না মরলেও আমরা সুস্থ হই কেনো?
উত্তর : রোগের লক্ষণ প্রকাশ পাওয়ার জন্যে একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ জীবাণুর দরকার। তার চেয়ে কম জীবাণু থাকলে রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায় না। এন্টিবায়োটিক খাওয়া শুরু করলে জীবাণু মরতে শুরু করে আর রোগের লক্ষণ ও কমতে শুরু করে। তাই, ফুল ডোজ না খেলেও আপাত দৃষ্টিতে আমরা সুস্থ হয়ে যাই।
★ প্রশ্ন : জীবাণু পুরোপুরিভাবে না মরলে কি কোন সমস্যা আছে?
উত্তর : জ্বী। সমস্যা আছে। জীবাণু চুপ করে বসে থাকে না। আপনি জীবাণু কে মারার জন্যে যেই এন্টিবায়োটিক খেয়েছেন সেই এন্টিবায়োটিক এর বিরুদ্ধে জীবাণু প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলে। জীবাণু তার নিজের গঠনে পরিবর্তন আনে যেনো আগের ব্যবহৃত এন্টিবায়োটিক জীবাণুর কিছু করতে না পারে অথবা এমন অস্ত্র তৈরি করে যা দিয়ে আপনার আগের ব্যবহৃত এন্টিবায়োটিক কে ধ্বংস করতে পারে। এর ফলে আপনি যখন আবার সেই এন্টিবায়োটিক খাবেন
সেই এন্টিবায়োটিক ঐ জীবাণুকে আর মারতে পারবে না। তখন আপনি সামান্য আমাশয়ে আক্রান্ত হয়ে মরবেন।
★প্রশ্ন : মরলে আমি মরবো। আপনার কোন সমস্যা? আপনি কেনো জ্ঞান দিচ্ছেন?
উত্তর : যদি শুধু আপনি মরতেন তাহলে কোন সমস্যা ছিলো না। সমস্যা হলো এই জীবাণু আপনার থেকে পরিবেশে ছড়িয়ে পড়বে এবং অন্যদেরকেও আক্রান্ত করবে। মনে করুন আপনার আমাশয় হয়েছে। আর আপনি এন্টিবায়োটিক খাওয়া শুরু করে ডোজ কমপ্লিট করলেন না। তার ফলে আপনার শরীরে
থাকা আমাশয় এর জীবাণু সেই এন্টিবায়োটিক এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধী ক্ষমতা অর্জন করলো। আপনি একদিন মনের সুখে করতোয়া নদীর পাড়ে বসে মলমূত্রত্যাগ করলেন। সেই এন্টিবায়োটিক প্রতিরোধী জীবাণু তখন নদীর পানির মধ্যে দিয়ে ছড়াতে থাকবে। দেখা গেলো যে নদীর আরেক প্রান্তের এক চার বছরের শিশু সেই জীবাণু মিশ্রিত পানিতে গোসল করতে গিয়ে কয়েক ঢোক পানি পান করে ফেললো। দুই-একদিনের মধ্যেই তার আমাশয় হলো। তাকে Flagyl দেয়া হলো। কোন কাজই হবেনা। কারণ, এই জীবাণু ইতিমধ্যেই আপনার এন্টিবায়োটিক এর ডোজ কমপ্লিট না করার
কারণে Flagyl প্রতিরোধী হয়ে গিয়েছে। তাই দেখা যাবে
আমাশয় এর আর কোন ভালো এন্টিবায়োটিক না থাকার কারণে সেই চার বছরের নিষ্পাপ শিশুটি এক রকম বিনা চিকিৎসায় মারা যাবে। একই ভাবে এইভাবে সব ধরনের এন্টিবায়োটিক এর অপব্যবহার চলতে থাকলে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম হয়তো সামান্য
সর্দী আর জ্বরে মারা যাবে। বাক্স ভরা ভরা এন্টিবায়োটিক থাকবে হয়তো, কিন্তু সেগুলো আর কাজ করবে না। গবেষণা মতে, আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের বেশির ভাগই মারা যাবে এন্টিবায়োটিক কাজ না করার কারণে। আর এটার জন্যে দায়ী থাকবো আমরাই।
★প্রশ্ন : এই সমস্যা প্রতিরোধে আমাদের করণীয় কি?
উত্তর : ডাক্তাদের পরামর্শ ছাড়া কোন এন্টিবায়োটিক খাবেন না। দয়া করে এন্টিবায়োটিক এর ডোজ কমপ্লিট করবেন।
আমি এন্টিবায়োটিক সচেতন। আপনি সচেতন তো???
ফার্মসএন্ডফার্মার/০৫সেপ্টেম্বর২০