বোরো ধানের ক্ষতিকারক পোকা দমনে জৈব বালাই দমন পদ্ধতি বা পার্চিং পদ্ধতি কৃষকদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। পরিবেশবান্ধব এ পদ্ধতি দিন দিন জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। কীটনাশক ছাড়াই পোকা দমনে রক্ষা পাচ্ছে পরিবেশ।
দেশে চাষ হচ্ছে উন্নত ফলনশীল ব্রিধান ২৮, ২৯, ৫৮, ৬৩, ৮১, ৮৪ জিরাশাইল, গোল্ডেন আতপ, কাঠারি, হাইব্রিড জাতের ধান। এসব ধানের ক্ষতিকর পোকা দমনে পার্চিং পদ্ধতি বেশ উপকার দেয়।
ফসলের সর্বোচ্চ উচ্চতা থেকে কমপক্ষে এক ফুট উচ্চতায় পার্চিং করা উচিত। পার্চিং মানে খেতে ডালপালা পুঁতে দেওয়া। ফসলের জমিতে ডাল, কঞ্চি, বাঁশের খুঁটি এগুলো পুঁতে পাখি বসার ব্যবস্থা করলে পাখি ক্ষতিকারক পোকার মথ, বাচ্চা, ডিম খেয়ে পোকা দমন করে। মূলত ফিঙে, শালিক, বুলবুলি, শ্যামা, দোয়েল, সাত ভায়রা এসব পাখি পার্চিংয়ে বসে পোকা ধরে খায়। ফসলের পোকা দমনের এ পদ্ধতি বলতে গেলে ব্যয়বিহীন ও পরিবেশবান্ধব। ফসলের ক্ষেতে ডেড পার্চিং ও লাইভ পার্চিং দুটিই করা যায়। মরা ডালপালা পুঁতে দিলে তা হবে ডেড পার্চিং। আর ধঞ্চে, অড়হর এসব জীবন্ত গাছ জমিতে নির্দিষ্ট দূরত্বে লাগিয়ে দেওয়া হলো লাইভ পার্চিং। প্রতি বিঘাতে অন্তত ৪-৫ টি বাঁশের আগা, কঞ্চি বা ডাল পুঁততে হয়। ফসল রোপণের পরপরই পার্চিং স্থাপন করতে হয়।
ক্ষতিকর পোকা বিশেষ করে মাজরা পোকা ধানের ক্ষতিকর আর পাখিদের প্রিয় খাবর এই মাজরা পোকা তাই পার্চিং পদ্ধতি খুব কার্যকর। এই পদ্ধতি কাজে লাগালে কীটনাশকের ব্যবহার কমে যায়। উৎপাদন খরচ কমে।
বালাইনাশকের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে পরিবেশকে দূষণমুক্ত রাখা যায়। এ পদ্ধতি ক্রমেই বাড়ছে। এ বছর এখন পর্যন্ত ৭০ শতাংশ জমি পার্চিংয়ের আওতায় এসেছে। কিছুদিনের মধ্যে সেটা শতভাগের কাছাকাছি যাবে।
ধানের পাতা মোড়ানো ও লেদা পোকা দমনে করণীয়
বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট ধানের পাতা মোড়ানো ও লেদা পোকা দমনে করণীয় বিষয়সমূহ কৃষকদের জন্য উন্মুক্ত করেছেন। কৃষকরা যাতে ফসলের ক্ষতিকর পোকাসমূহ দমন করতে পারে এবং আশানুরুপ ফলন পায় সে লক্ষে কৃষি সংক্রান্ত তথ্য প্রকাশ করে থাকে কৃষি তথ্য সার্ভিস।
পাতা মোড়ানো পোকা
এরা পাতা লম্বালম্বিভাবে মুড়িয়ে পাতার সবুজ অংশ খেয়ে ফেলে, ফলে ক্ষতিগ্রস্ত পাতায় সাদা লম্বা দাগ দেখা যায়। খুব বেশি ক্ষতি করলে পাতাগুলো পুড়ে পাওযার মত দেখায়। ক্ষতিগ্রস্থ পাতার কিনার দিয়ে বিশেষ করে পাতার লালচে রেখা রোগ শুরু হতে পারে।
পূর্ণবয়স্ক স্ত্রী পোকা পাতার মধ্য শিরার কাছে ডিম পাড়ে। কীড়াগুলো পাতার সবুজ অংশ খায় এবং বড় হবার সাথে সাথে তারা পাতা লম্বালম্বিভাবে মুড়িয়ে একটা নলের মত করে ফেলে। মোড়ানো পাতার মধ্যেই কীড়াগুলো পুত্তলীতে পরিণত হয়।
দমন ব্যবস্থাপনা
আলোক ফাঁদের সাহায্যে পূর্ণবয়স্ক মথ ধরে মেরে ফেলা।
জমিতে ডালপালা পুঁতে পোকাখেকো পাখির সাহায্যে পূর্ণ বয়স্ক মথ দমন করা।
শতকরা ২৫ ভাগ পাতার ক্ষতি হলে অনুমোদিত কীটনাশক ব্যবহার করা।
লেদা পোকা
লেদা পোকা কেটে কেটে খায় বলে ইংরেজীতে এদের কাটওয়ার্ম বলে। এই প্রজাতির পোকারা সাধারণতঃ শুকনো ক্ষেতের জন্য বেশী ক্ষতিকর। কারণ এদের জীবন চক্র শেষ করার জন্য শুকনো জমির দরকার হয়। পার্শ্ববর্তী ঘাসের জমি থেকে লেদা পোকার কীড়া নীচু, ভিজা জমির ধানক্ষেত আক্রমণ করে। প্রথমাবস্থায় কীড়াগুলো শুধু পাতাই খায়, কিন্তু বয়স্ক কীড়া সম্পূর্ণ পাতাই খেয়ে ফেলতে পারে। এরা চারা গাছের গোড়াও কাটে।
দমন ব্যবস্থাপনা
আলোক ফাঁদের সাহায্যে পূর্ণবয়স্ক মথ ধরে মেরে ফেলুন।
ধান কাটার পর ক্ষেতের নাড়া পুডিয়ে দিলে বা জমি চাষ করে এ পোকার সংখ্যা অনেক কমিয়ে ফেলা যায়।
আক্রান্ত ক্ষেত সেচ দিয়ে ডুবিয়ে দিয়ে এবং পাখির খাওয়ার জন্য ক্ষেতে ডালাপালা পুঁতে দিয়েও এদের সংখ্যা কমানো যায়।
শতকরা ২৫ ভাগ পাতার ক্ষতি হলে অনুমোদিত কীটনাশক ব্যবহার করা।
ধানের পাতা মোড়ানো ও লেদা পোকা দমনে করণীয় শিরোনামে সংবাদের তথ্য কৃষি তথ্য সার্ভিস থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে।
ফার্মসএন্ডফার্মার/ ২৪ আগস্ট ২০২১