বিপর্যয়ের মুখে খুলনার পোল্ট্রি শিল্প

433

চাহিদার তুলনায় উৎপাদন বেশি ও পাইকারী মুরগির বাজার ব্যবস্থা না থাকায় খুলনায় পোল্ট্রি শিল্প এখন বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে।

খামার মালিকদের দাবি, একটি ডিম উৎপাদনে খরচ ছয় টাকার বেশি। এখন ব্রয়লার মুরগির কেজি প্রতি উৎপাদন খরচ ৯০ টাকার কিছু বেশি। মালিকেরা বলছেন, দাম যখন বেড়ে যায়, তখন চাইলেই উৎপাদন বাড়িয়ে বাড়তি টাকা আয় করা যায় না। আবার যখন কমে যায়, তখন চাইলেও তাৎক্ষণিক উৎপাদন কমিয়ে ফেলা যায় না। ফলে সবসময়ই লোকসানের মুখে পড়তে হচ্ছে।

খুলনা পোল্ট্রি ফিশ ফিড শিল্প মালিক সমিতি সূত্রে জানা গেছে, খুলনা জেলায় প্রতিদিন ৪ লাখ ডিমের প্রয়োজন হয়, আর মাংস লাগে প্রায় ৩০ মেট্রিক টন। যা চাহিদার তুলনায় ২৫ শতাংশ বেশি উৎপাদন হয়। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা, যুগোপযোগী নীতিমালা এবং সংশ্লিষ্ট বিভাগের তদারকির অভাবসহ বিভিন্ন কারণে খুলনাঞ্চলে সম্ভাবনাময় পোল্ট্রি শিল্প এখন ধ্বংসের মুখে।

একদিকে খাবারসহ অন্যান্য দ্রব্যের উচ্চমূল্য এবং মুরগি ও ডিমের মূল্য পড়ে যাওয়ায় উৎপাদন খরচও ওঠাতে পারছেন না ব্যবসায়ীরা। ক্রমাগত লোকসানে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তারা। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য পোল্ট্রি ব্যবসায়ীরা সরকারের কাছে ১৫ দফা প্রস্তাবনা পেশ করেছেন।

পোল্ট্রি ব্যবসায়ীরা জানান, প্রতিটি ডিম উৎপাদনে সব মিলিয়ে ব্যয় হয় ৬ টাকা থেকে সাড়ে ৬ টাকা। সেখানে পাইকারী বিক্রি হচ্ছে ৫ টাকা থেকে ৫ টাকা ৫০ পয়সা। প্রতিটি ডিমে খামারী ১ টাকা ২৫ পয়সা থেকে দেড় টাকা লোকসান গুণছেন। একইভাবে এক কেজি ওজনের ব্রয়লার মুরগি উৎপাদনে খরচ হয় ১১০ টাকা থেকে ১১৫ টাকা।

অন্যদিকে পাইকারী বিক্রি হচ্ছে ৯০ থেকে ১শ’ টাকা। প্রতি কেজিতে লোকসান হচ্ছে ১৫ থেকে ২০ টাকা। এতে উৎপাদন খরচও উঠছে না। এভাবে লোকসান গুণতে গুণতে ক্ষুদ্র ও মাঝারী খামারী ও ব্যবসায়ীদের পথে বসার উপক্রম হয়েছে। এছাড়া ক্রমাগত লোকসানের কারণে অনেকে খামার বন্ধ করে দিয়ে দেনার দায়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।

এদিকে একটি ডিমের মূল্য খামারী সর্বোচ্চ পাঁচ টাকা পেলেও ভোক্তাকে সেটি ক্রয় করতে হচ্ছে আট থেকে নয় টাকায়। এ সব কারণে খুলনা মহানগরীতে ন্যায্য মূল্যে ডিম ও মুরগি বিক্রয় কেন্দ্র স্থাপন জরুরি হয়ে পড়েছে।

ডুমুরিয়া উপজেলার সুভাষ চন্দ্র বসু নামের একজন পোল্ট্রি খামার মালিক জানান, এক সপ্তাহ ধরে ব্রয়লার মুরগি কেজিপ্রতি ৮৮ থেকে ৯০ টাকা দরে বিক্রি করছেন। তিনি বলেন, মুরগি কেউ নিতেই চায় না। যার কাছ থেকে যা পাই, সেই দামে বিক্রি করি।
পোল্ট্রি ফিশ ফিড শিল্প মালিক সমিতির মহাসচিব ও খুলনা বিভাগীয় সমন্বয়কারী এসএম সোহরাব হোসেন বলেন, ‘নানা সংকট, ষড়যন্ত্র, যুগোপযোগী নীতিমালার অভাব, প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাদের কাঙ্ক্ষিত সুযোগ-সুবিধা, চিন্তাধারার অভাব ও চাহিদার আলোকে উৎপাদন ও বিপণন ব্যবস্থা না থাকায় ক্রমেই এ খাতগুলো ধ্বংসের দ্বারপ্রাপ্তে এসে দাঁড়িয়েছে। খামারী ও ব্যবসায়ীদের ক্রমাগত লোকসানে তারা পালিয়ে বেড়াচ্ছে। তাদের দুঃখ, বেদনা ও হাহাকারে কেউ এগিয়ে আসে না, খামারীদের মধ্যে এখন বোবাকান্না চলছে।

তিনি আরও বলেন, পোল্ট্রি খামারীরা ডিম ও মাংস উৎপাদনে রেকর্ড সৃষ্টি করলেও চাহিদার অতিরিক্ত ডিম ও মাংস রপ্তানির কোন ব্যবস্থা না থাকায় লেয়ার, ব্রয়লার খামারী ও ব্যবসায়ীরা চরম বিপদের মধ্যে রয়েছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য সরকারের কাছে ১৫ দফা দাবি-সম্বলিত প্রস্তাব পেশ করেছেন পোল্ট্রি ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন এ ব্যাপারে সমাধান হলে এ শিল্পের ৪০ শতাংশ সমস্যা থাকবে না।

সূত্রঃব্রেকিংনিউজ

ফার্মসএন্ডফার্মার/১৯জানুয়ারি২০২১