সময়টা হেমন্তের কোনো এক সকাল। রাস্তায় পথ চলতে চলতে থমকে দাঁড়াই। এক বাসার বারান্দা বেগুনি রঙের ফুলে-ফুলে ভরে ওঠেছে। দূর থেকে বুঝে উঠতে পারছিলাম না কী ফুল। একটি কাজে ব্যস্ত থাকায় ওই দিন আর গাছটির কাছে যাওয়া হয়নি। পরবর্তী সময়ে ওই স্থানে যাই, ছবি তুলি এবং একে আবিষ্কার করি। এ যে লতা-পারুল। হ্যা লতা-পারুল ফুল ফোটার মৌসুম হিমেল হাওয়া আর শিশিরভেজা হেমন্তকাল।
যদিও হেমন্তের প্রকৃতিতে ফুলের উপস্থিতি কম, তবে লতা-পারুল এর মাঝে অন্যতম। হেমন্তের প্রকৃতিতে নজরকাড়া রূপে লতা-পারুল; তার উপস্থিতির জানান দেয়। উলেস্নখ্য যে, বছরের অন্যান্য সময়ে বিচ্ছিন্নভাবে লতা-পারুল গাছে কম পরিমাণে ফুল ফোটতে দেখা যায়। বাংলাসাহিত্যের বহু কবিতায় লতা-পারুলের নাম এসেছে। এর আদি নিবাস দক্ষিণ আমেরিকা। উত্তর ও মধ্য আমেরিকাসহ ব্রাজিলে এ লতা-পারুল ফুলের বিস্তার রয়েছে।
ফুল প্রেমীদের ভালোবাসায় আমাদের দেশের বিভিন্ন স্থানে ফুলটি চোখে পড়ে। এর পরিবার- ইরমহড়হরধপবধব, উদ্ভিদতাত্ত্বিক নাম- গধহংড়ধ ধষষরধপবধ- ইংরেজি নাম- এধৎষরপ ারহব। এ ছাড়াও এটি নীল পারুল, পারুল লতা, নীল ঘণ্টা, রসুন্ধি ইত্যাদি নামেও সমান পরিচিত। গাছের পাতা কচলালে রসুনের মতো ঘ্রাণ বের হয় বলে রসুন্ধি নামে নামকরণ। লতা-পারুল চিরসবুজ, কাষ্ঠল, শক্ত লতা ও গুল্ম জাতীয় গাছ।
এর লতা কোনো বাউনি বা বৃক্ষের গা ভর করে বেড়ে ওঠে এবং পরবর্তী সময়ে মাঝারি ঝোপে পরিণত হয়। পাতা যৌগিক ও আয়াতকার। রং সবুজ-মসৃণ, শিরা-উপশিরা স্পষ্ট, পাতা লম্বায় ৪ থেকে ৫ সেন্টিমিটার। শীর্ষের পত্রক প্রায়ই আকর্ষীতে পরিণত হয়। শাখার অগ্রভাগে বড় থোকায় প্রচুর ফুল ফোটে। ফুল রঙে বেগুনি থেকে হালকা বেগুনি।
দল ফানেল আকৃতির, পাপড়ি পাঁচটি। ফুল ফোটার আগে পাপড়ির অগ্রভাগের রং গাঢ় বেগুনি ও গোড়ার দিকের রং হালকা বেগুনি থাকে। ফুটন্ত ফুল সকালে সজিব থাকে- তবে রোদ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পাপড়ি কিছুটা ঝিমিয়ে পড়ে। এ জন্য হালকা রোদ-ছায়া পরিবেশে লতা-পারুল ভালো জন্মে এবং ফুলের উজ্জ্বলতা অটুট থাকে অনেক দিন। ফুল ফোটার সময়টাতে গাছে বিভিন্ন পতঙ্গের আনাগোনা লক্ষ্য করা যায়। ফুল ফোটন্ত গাছ খুবই নজরকাড়া। শাখা কলমের মাধ্যমে এর চাষ করা যায়। তা ছাড়া শেকড় কাটিং থেকেও চারা তৈরি করা যায়।
লেখা ও ছবি: মোহাম্মদ নূর আলম গন্ধী
সূত্র: যায়যায় দিন
ফার্মসএন্ডফার্মার২৪/জেডএইচ