বিষমুক্ত বেগুন চাষে সফল ধামরাইয়ের কৃষক আইয়ুব আলী

74

লেবুর চাষ ছেড়ে বিষমুক্ত বেগুন চাষ করে প্রথম বছরেই সাফল্যের মুখ দেখছেন ঢাকার ধামরাইয়ের যাদবপুর ইউনিয়নের গাওতারা গ্রামের কৃষক আইয়ুব আলী ইছাক। তিনি ১৭০ শতাংশ জমিতে পারপলকিং জাতের বেগুনের চাষ করেছেন।

অন্য চাষিরা বেগুনের ক্ষেতে ক্ষতিকর পোকা দমনের জন্য কীটনাশক স্প্রে করলেও আইয়ুব কীটনাশক ছেড়ে পোকা দমনে সেক্স ফেরোমন ফাঁদ ব্যবহারের মাধ্যমে পরিচ্ছন্ন চাষাবাদ পদ্ধতিতে বেগুন আবাদ করেছেন। তিনি প্রতি সপ্তাহে ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকার বেগুন বিক্রি করছেন।
ধামরাই সদর থেকে ২০ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে যাদবপুর ইউনিয়ন। ইউনিয়নটি লেবু চাষের জন্য বিখ্যাত। তাই এখানকার ৯৫ ভাগ মানুষই লেবু চাষের সঙ্গে যুক্ত। প্রতিদিন এখান থেকে প্রায় অর্ধকোটি টাকার লেবু বিক্রি হয়ে থাকে। গত বছর লেবুর দাম কম পাওয়ায় গাওতারা গ্রামের ফজর আলী বেপারির ছেলে আইয়ুব এ বছর লেবুর চাষ ছেড়ে ১৭০ শতাংশ বা ৬ বিঘা জমিতে পারপলকিং জাতের বেগুনের চাষ করেছেন। জমিতে দেখা গেছে, পোকা দমনের জন্য ১০-১৫ ফুট পর পর সেক্স ফেরোমন ফাঁদ ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। প্রতিটি গাছে ঝুলছে ১০ থেকে ১৫টি করে বেগুন।

আইয়ুব আলী ইছাক জানান, ১০ বছর ধরে ১৮৩ শতাংশ জমিতে লেবুর চাষ করে আসছিলেন। গত বছর লেবুর দাম কম পাওয়ায় সব গাছ কেটে ফেলে ১৭০ শতাংশ জমিতে সেক্স ফেরোমন ফাঁদ ব্যবহার করে বেগুনের চাষ করেছেন। বেগুন চাষ করে এত লাভ হবে, ভাবেননি তিনি। বেগুনের চাষ করতে তাঁর লক্ষাধিক টাকা খরচ হয়েছে। প্রতি সপ্তাহে ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকার বেগুন বিক্রি করছেন তিনি। পাইকারি দরে প্রতি কেজি বেগুনের দাম পাচ্ছেন ৫০ থেকে ৬০ টাকা। এ বছর প্রায় ৪ থেকে ৫ লাখ টাকার বেগুন বিক্রি করতে পারবেন বলে তিনি আশা করছেন।

আইয়ুব ধামরাইয়ের যাদবপুর ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ড থেকে নির্বাচিত হয়ে টানা ১৮ বছর ইউপি সদস্য ও দেড় বছর ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। একই সঙ্গে ওই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করছেন। তিনি বলেন, তাঁর বাবা ফজর আলী বেপারি একজন কৃষক ছিলেন। তাই তিনিও কৃষকের সন্তান হিসেবে নিজেকে পরিচয় দিতে গর্ববোধ করেন। শুধু আইয়ুবই নন, তাঁর মতো একই ইউনিয়নের কৃষক মোহাম্মদ আলী (৪৫) ১০ হাজার টাকা ব্যয়ে এক বিঘা জমিতে বেগুন চাষ করেছেন। তিনি বলেন, এ পর্যন্ত ৩৫ হাজার টাকার বেগুন বিক্রি করেছেন। আরও ৩০ হাজার টাকার বেগুন বিক্রি করতে পারবেন।

একই ইউনিয়নের কৃষক আবদুস সালাম (৫৫) ২২ শতক জমিতে বেগুন চাষ করেছেন। তিনি বলেন, ২২ শতাংশ জমিতে তাঁর বেগুন চাষে মাত্র ৮ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। ৪০ হাজার টাকার বেগুন বিক্রি করতে পারবেন বলে তিনি আশা করেন। ধামরাই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আরিফুর রহমান জানান, এ উপজেলায় চলতি বছর প্রায় এক হাজার হেক্টর জমিতে বেগুন আবাদ হয়েছে। বেশির ভাগ বেগুন ক্ষেতে সেক্স ফেরোমন পদ্ধতি ব্যবহার হচ্ছে। তিনি জানান, সবজি ক্ষেতে পোকা দমনে যেসব কীটনাশক ব্যবহার হয়, তা মানবদেহের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। এ কারণে তারা কৃষকদের কীটনাশক ব্যবহারে নিরুৎসাহিত করে বিষমুক্ত ও স্বাস্থ্যবান্ধব সবজি চাষে সেক্স ফেরোমন ফাঁদ ব্যবহারের পরামর্শ দিয়ে আসছেন। এ বিষয়ে কৃষকদের কাছ থেকে ভালো সাড়াও পাওয়া যাচ্ছে।