বুনো আলুর জলবায়ুসহনশীল জাত উদ্ভাবনে পেরুর বিজ্ঞানীদের গবেষণা

578

বুনো-আলু

পেরুর লিমাভিত্তিক অলাভজনক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল পটেটো সেন্টারের (সিআইপি) বিজ্ঞানীরা বর্তমানে আলুর জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অভিঘাত সহনশীল জাত উদ্ভাবনের জন্য গবেষণা করে যাচ্ছেন। নতুন এ জাত উন্নয়নের জন্য ব্যবহার করছেন বুনো আলুর জাত।

জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অভিঘাত সহনশীলতার পাশাপাশি এটি যাতে বিধ্বংসী লেট ব্লাইট ও ব্যাকটেরিয়াল উইল্ট প্রতিরোধের গুণাগুণসম্পন্ন হয়, সে উদ্দেশ্য নিয়েও গবেষণাটি পরিচালিত হচ্ছে।

এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে বলা হয়, আলুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন জাত চাষাবাদের মাধ্যমে পণ্যটির উৎপাদন খরচ অনেকখানি কমিয়ে আনা সম্ভব। একই সঙ্গে তা ক্ষুদ্র আলুচাষীদের আয় ও খাদ্যতালিকা— দুটোরই উন্নয়ন ঘটানোয় সমর্থ হবে বলে প্রত্যাশা করা যায়।

সিআইপি জানায়, এ জাত উন্নয়নের জন্য চার বছর ধরে বুনো আলুর বিভিন্ন জাত নিয়ে পরীক্ষণ ও পর্যবেক্ষণ চালাচ্ছেন গবেষকরা। আলুর এসব বুনো জাত সাধারণত খাওয়ার অযোগ্য হয়। গবেষণার জন্য লিমায় সিআইপির জার্মপ্লাজম ব্যাংকে সংরক্ষিত অন্যান্য জাতের সঙ্গে বুনো এসব জাতের ক্রস করানো হচ্ছে। জার্মানির বনভিত্তিক ক্রপ ট্রাস্ট ও নরওয়ে সরকারের সহায়তায় এ গবেষণা পরিচালিত হচ্ছে।

প্রসঙ্গত, সিআইপির জার্মপ্লাজম ব্যাংকটিকে বলা হয় পৃথিবীতে বুনো আলুর জার্মপ্লাজমের সবচেয়ে বড় সংরক্ষণাগারগুলোর অন্যতম। আলুর এসব জাতের মধ্যে কয়েকটি প্রতিকূল আবহাওয়ায় এবং কীটপতঙ্গ ও রোগবালাইয়ের আক্রমণের মধ্যেও অনায়াসেই বেড়ে উঠতে পারে। এসব জাত এমনভাবে বিবর্তিত হয়েছে, যাতে তারা চরমভাবাপন্ন আবহাওয়ায়ও বড় হতে পারে। বুনো জাতগুলোর এ বৈশিষ্ট্যকে এখন চাষ করা আলুর মধ্যেও নিয়ে আসতে চাইছেন বিজ্ঞানীরা।

সংস্থাটি আরো জানায়, যেহেতু আলুর বুনো জাতগুলো আবাদকৃত জাতের তুলনায় একেবারেই ভিন্ন, সেহেতু এগুলোর মধ্যে ক্রস ঘটানোর আগে গবেষকদের অনেক পরিশ্রমসাধ্য প্রয়াস চালাতে হচ্ছে। সিআইপির বিবৃতিতে বলা হয়, ক্রপ ট্রাস্টের দ্বিতীয় পর্যায়ের সহযোগিতার অর্থে সিআইপির বিজ্ঞানীরা আরো দুই বছর ব্রিডিং-পূর্ববর্তী কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারবেন।

অন্যদিকে বুনো আলুর প্রতিরোধক্ষমতা নির্ধারক জিনসম্পন্ন ক্লোন তৈরির পর তা অন্যান্য দেশের শস্য উন্নয়ন কার্যক্রম-সংশ্লিষ্টদের হাতে তুলে দেয়ারও পরিকল্পনা রয়েছে সংস্থাটির। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হচ্ছে থিয়াগে মেন্ডেস নামে এক গবেষকের নেতৃত্বে। তিনি বলেন, আমরা আমাদের প্রতিরোধী ক্ষমতাসম্পন্ন জাত তৈরি করে কেনিয়া, পেরুসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশের গবেষকদের হাতে তুলে দেব, যাতে তারা স্থানীয় জাতগুলোর সঙ্গে এগুলোর ক্রস ব্রিডিং করতে পারেন। বিশেষ করে আফ্রিকার কৃষকদের জন্য এটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ। কারণ লেট ব্লাইট ও ব্যাকটেরিয়াল উইল্টের কারণে আফ্রিকার ক্ষুদ্র কৃষকরা মারাত্মক অর্থনৈতিক ক্ষতির শিকার হচ্ছেন। জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে এ সমস্যা আরো খারাপের দিকে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে।

এ বিষয়ে থিয়াগে মেন্ডেস বলেন, লেট ব্লাইট নিয়ন্ত্রণের জন্য যে ফাঙ্গিসাইড দরকার, ক্ষুদ্র কৃষকদের পক্ষে তা জোগাড় করা বেশ কঠিন হয়ে পড়ে। অর্থাৎ, এ রোগের সংক্রমণে তারাই ক্ষতিগ্রস্ত হয় সবচেয়ে বেশি। উপরন্তু লেট ব্লাইটের প্যাথোজেনও খুব দ্রুত বিবর্তিত হচ্ছে। ফলে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ফাঙ্গিসাইডও তার উপযোগিতা হারাচ্ছে। আলুর বুনো আত্মীয় জাতগুলোই এখন এটি প্রতিরোধী জাতের নতুন ও সবচেয়ে মূল্যবান জাত হয়ে উঠতে পারে। সূত্র: বি বি

ফার্মসঅ্যান্ডফার্মার২৪.কম/মোমিন