বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে কৃষকের আলু জমি, লোকসানের আশংকা

104

 

বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে কৃষকের আলু জমি। মুন্সিগঞ্জ জেলাজুড়ে আলু লাগানো জমি এখন বৃষ্টির পানিতে থই থই করছে। ঘূর্ণিঝড় মিগজাউম এর প্রভাবে বুধবার গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি শুরু হলে কৃষকরা বুধবার থেকেই জমির আইলগুলো কেটে পানি নামার জন্য নালা তৈরি করতে থাকেন।

এদিকে, বৃহস্পতিবার ভোর রাত থেকে বৃষ্টি শুরু হলে বেলা বাড়ার সাথে সাথে বৃষ্টির পরিমাণও বাড়তে থাকে। রাত থেকে অব্যাহত বৃষ্টি হচ্ছে।

মুন্সিগঞ্জ সদর ও টঙ্গিবাড়ী উপজেলার বেশ কিছু আলু জমি ঘুরে দেখা গেছে, বৃষ্টিতে ভিজে কোদাল দিয়ে জমির নালা কাটছে কৃষক। কিন্তু কৃষকের জমির পাশের ডোবা ও নালাগুলোও সারাদিনের বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে। তাই কৃষকের কাটা নালাসহ তলিয়ে যাচ্ছে আলু বীজসহ জমি।

ভুক্তভোগী কৃষকদের অভিযোগ প্রতি বছর বর্ষা এলেই যত্রতত্র ড্রেজার (মাটি খনন যন্ত্র) বসিয়ে কৃষি জমি, খাল, কালভার্ট,ব্রিজের গোড়া ভরাট করে আসছে কতিপয় ভূমিদস্যু। এ কাজে এলাকার প্রভাবশালী সিন্ডিকেটসহ অনেক জনপ্রতিনিধিরাও জড়িত। সরকারি খাল, ব্রিজের গোড়াসহ পানি প্রবাহের স্থান যত্রতত্র ভরাট করার কারণে তাদের জমি থেকে পানি নামতে পারছে না।

মুন্সিগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জেলায় এ বছর মোট ৩৪ হাজার ৩৪৬ হেক্টর জমিতে আলু আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ বছর এখন পর্যন্ত ১৬ হাজার হেক্টর জমিতে আলু আবাদ করে ফেলেছে কৃষক। বাকি জমি আবাদ করার জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে।

কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, আলু রোপণের আদর্শ সময় নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে ২৫ দিন পর্যন্ত। সেই আদর্শ সময় পার হয়ে যাচ্ছে। কিছুদিন আগে ঘূর্ণিঝড় মিধিলির প্রভাবে বৃষ্টিপাত হয়। সেই সময়‌ও কৃষকের আলু লাগানো জমি পানিতে তুলিয়ে যায়। এ কারণে আলু চাষ বিলম্বিত হচ্ছিল। তাছাড়া ঘূর্ণিঝড় মিগজাউমের সংবাদ শুনে অনেক কৃষক জমি তৈরি করার পরও অপেক্ষায় ছিলেন বৃষ্টিপাত হয় কীনা। সেই অপেক্ষায় অনেকে জমিতে আলু রোপন করেননি।

এই মৌসুমে মুন্সিগঞ্জের জমিগুলোতে প্রায় লক্ষাধিক শ্রমিক কাজ করে থাকেন। বিশেষ করে উত্তরাঞ্চল থেকে আগত এই সমস্ত শ্রমিক বৃষ্টির কারণে বুধবার থেকে কাজ বন্ধ হয়ে গেছে। এসব শ্রমিক সাধারণত গৃহস্থের বাড়িতে থেকেই কাজ করে থাকেন। কিন্তু বৃষ্টির কারণে কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় শ্রমিকদের এখন স্কুল কলেজের বারান্দা, ইউনিয়ন পরিষদের ভবনের‌ বারান্দাসহ বিভিন্ন পরিত্যক্ত ভবনে আশ্রয় নিয়েছেন ‌।

যে কৃষি বিলগুলো ছিল হাজার হাজার শ্রমিকের কাজে মুখরিত সেই বিলগুলো এখন শ্রমিক শূন্য। তাই কৃষক নিজেই কোঁদাল নিয়ে জমিতে জমিতে ঘুরে আইল কেটে পানি নামানোর নালা করছেন।

এ ব্যাপারে টঙ্গীবাড়ি উপজেলার কৃষক শাহীন খান বলেন, আমি এ বছর পাঁচ কানি (৭০০ শতাংশ) জমিতে আলু আবাদ করছি। আমার জমিগুলো সব পানিতে তলিয়ে গেছে। আমি রাত তিনটা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত জমিতে নালা কেটে পানি নামানোর চেষ্টা করছি। কিন্তু পানি কোথায় নামাবো সারাদিনের বৃষ্টিতে সবস্থান পানিতে ভরে গেছে।

মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলার বজ্রযোগিনী এলাকার কৃষক ইমরান হোসেন বলেন, যেভাবে সকাল থেকে বৃষ্টি হচ্ছে তাতে মনে হয় এ বছর আমাদের রোপন করা আলু বীজ পচে নষ্ট হয়ে যাবে। দুদিন আগে যে আলু বীজের ৫০ কেজির বস্তা ১৮০০ টাকা ছিল, এখন সেই বীজ ২৫০০ টাকা। এখন নতুন করে আলু বীজ জোগাড় করে আর জমি আবাদ করা মনে হয় সম্ভব হবে না।

টঙ্গীবাড়ী উপজেলার কৃষক আবুল হোসেন বলেন, এ বছর সার, বীজ ও জমিজমা বেশি। টাকা ঋণ ও ধার করে দুই কানি জমিতে আলু লাগাইছিলাম। এখন সেই জমি সব পানির নিচে। জমি শুকানোর পর আর আলু রোপন করা সম্ভব হবে না।

এ ব্যাপারে মুন্সিগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ডা. মো. আব্দুল আজিজ বলেন, গত বুধবার পর্যন্ত মুন্সিগঞ্জ জেলায় ১৬ হাজার হেক্টর জমিতে আলুর আবাদ করা হয়ে গেছে। এ বছর মোট ৩৪ হাজার ৩৪৬ হেক্টর জমিতে আলু আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১০ লাখ ৬৫ হাজার মেট্রিক টন আলু। বাকি জমিগুলোতে আলু আবাদের প্রস্তুতি চলছে।

তিনি বলেন, আলু চাষের উত্তম সময় নভেম্বর মাস। তবে এ বছর কিছুদিন আগে ঘূর্ণিঝড় মিধিলি আঘাত হানায় আলু আবাদ বিলম্বিত হয়েছে। এখন আবার বৃষ্টি হচ্ছে এতে আলু চাষ আরও বিলম্বিত হবে।