বৃষ্টিতে তলিয়ে গেলো আলুর খেত, দুশ্চিন্তায় কৃষক

74

আলু রোপণ মৌসুমে ঘূর্ণিঝড় মিধিলির প্রভাবে তালিয়ে গেছে মুন্সিগঞ্জের বিস্তীর্ণ আলুর জমি। তলিয়ে যাওয়া জমিতে পুনরায় চাষাবাদের জন্য এখন পানি সেচ ও নিষ্কাশনের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন কৃষকেরা।

অসময়ের এ বৃষ্টিতে আগাম রোপণ করা আলুর বীজ পচে যেমন ক্ষতি হয়েছে অন্যদিকে জমিও তলিয়ে গেছে। শনিবার ভোর থেকেই কৃষকদের জমি থেকে পানি নামানোর জন্য আইল কেটে নালা তৈরি করতে দেখা গেছে। কিন্তু তারপরেও এখনো অধিকাংশ জমিতে পানি জমে আছে। তাই স্যালো মেশিন বসিয়ে পানি সেচের কাজ করছে অনেক কৃষক। সোমবার (২০ নভেম্বর) সকালে মুন্সিগঞ্জের টঙ্গিবাড়ী উপজেলা ও সদর উপজেলার অনেক আলু জমি ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে।

মুন্সিগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, মুন্সিগঞ্জ জেলায় এ বছর মোট ৩৪ হাজার ৩৪৬ হেক্টর জমিতে আলু আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে এ বছর এই পর্যন্ত মোট ৬ হাজার ২১৫ হেক্টর জমিতে আলু আবাদ করা হয়ে গেছে।

টঙ্গিবাড়ী উপজেলার কাইচমালধা, খলাগাওঁ , ভিটিমালধা, গনাইসার পাচঁগাওঁ, চাঠাতি পাড়া, মান্দ্রা, ধীপুর, চাপ, লাখারং, হাটখান গ্রাম সদর উপজেলার মহাখালী ও বজ্রযোগনী ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ কৃষি জমি ঘুরে দেখা যায়, ওই সমস্ত বিলের জমিগুলোর মধ্যে অধিকাংশ জমি কৃষক আলু রোপণের জন্য চাষ করে রেখেছিলেন। ওই সমস্ত জমিগুলোতে এখন পানি থৈ থৈ করছে। জমির আইল কেটে নালা তৈরি করে কৃষকেরা পানি অপসারণের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

টঙ্গিবাড়ী উপজেলার চাঠাতিপাড়া বিলে আলু জমিতে পানি সেচের কাজ করছিলেন পাচঁগাও গ্রামের পারভেজ মিয়া। তিনি বলেন, আলু রোপণের জন্য জমির খড়কুটো বেছে স্থানে স্থানে স্তুপ করে রেখেছিলাম। কিন্তু গত শুক্রবার সারদিন ও রাতের বৃষ্টিতে জমিতে প্রায় এক ফুট পানি হয়েছে। নালা কেটে দিয়েছিলাম কিন্ত পানি সেভাবে নামছে না তাই মেশিন লাগিয়ে পানি সেচ করছি।

সদর উপজেলার কৃষক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলু লাগানোর জন্য জমি চাষ করে সার বোপণ করে রেখেছিলাম। কিন্তু বৃষ্টিতে জমির পুরোটাই এখন পানির নিচে। পানি নামারও কোনো রাস্তা নেই। বাধ্য হয়ে সেচ মেশিন দিয়ে সেচ করছি।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, আলু আবাদ করা এবং প্রস্তুত করা উভয়ই জমিতেই পানি জমেছে। এতে যে সমস্ত জমিতে আলু বীজ রোপণ করা হয়েছিল সেসব জমিতে বীজ পচে আলু নষ্ট হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ বছর আলু জমির জমা দাম অন্যান্য বছরের চেয়ে বেশি। সঙ্গে সার, বীজ ও শ্রমিক খরচও বেশি হওয়ায় উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতি শতাংশ জমিতে আলু চাষ করতে এবার খরচ গুণতে হচ্ছে ১০০০ থেকে ১২০০ টাকা।

মুন্সিগঞ্জের কৃষকরা নিজেদের জমির পাশাপাশি জমিজমা নিয়ে এ বছর আলু রোপণ শুরু করেছেন। সাধারণত উঁচু জমিতে আলু রোপণ করে ফেলেছেন অনেকে। একদিকে যেমন তাদের উঁচু জমিগুলোতে রোপণ করা আলুর বীজ পচে নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে তেমনি নিচু জমিগুলোর মধ্যে সার ছিটিয়ে রাখায় পুনরায় আবাদে বাড়তি টাকা ব্যয় হবে কৃষকদের।

গজারিয়া উপজেলার ইমামপুর ইউনিয়নের বাঘাইকান্দি গ্রামের কৃষক মো. জসিম উদ্দিন প্রধান বলেন, এ বছর আমি আগাম আলু এক সপ্তাহ আগে আড়াইকানী জমিতে রোপণ করেছিলাম। কিন্তু অসময়ে বৃষ্টিতে পানি জমে সব শেষ হয়ে গেছে। যেসব আলু বীজ রোপণ করেছিলাম তা সবই পচে নষ্ট হয়ে যাবে। এখন কমপক্ষে ১৫ দিন পর আবার আলু রোপণ করতে হবে। এতে নতুন করে আবার সার ছিটাতে হবে। জমি চাষ, বীজ, শ্রম মিলিয়ে আমার আবার আগের মতো নতুন করে খরচ হবে। আমাদের এখানে ৪০ শতাংশ জমিতে কানি হিসেবে প্রতি কানিতে আলু রোপণ করতে ৪৫ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা খরচ হয়। এখন সোয়া লাখ টাকা ক্ষতির মুখে পড়ছি। আবার রোপণ না করলে সবই লস হবে।

এ ব্যাপারে মুন্সিগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালাক ডা. মো. আব্দুল আজিজ বলেন, মুন্সিগঞ্জে সবেমাত্র আলু রোপণ শুরু হয়েছে। এ পর্যন্ত মোট ৬ হাজার ২১৫ হেক্টর জমিতে আলু আবাদ করা হয়েছে। আলু আবাদ হওয়া জমিগুলো উঁচু হওয়াতে কিছু জমিতে পানি জমলেও ফসলের তেমন কোনো ক্ষতি হবে না আশা করছি। এ বছর মুন্সিগঞ্জ জেলার মোট ৩৪ হাজার ৩৪৬ হেক্টর জমিতে আলু আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১০ লাখ ৬৫ হাজার মেট্রিক টন আলু ।