বেকারত্ব দূর করতে মাছের সাথে শামুকের চাষ করুন

1819

শামুক
বেকারত্ব দূর করতে শিক্ষিত যুবকরা মাছ চাষ করে, জীবনের পরিবর্তন ঘটায়। যুগান্তকারী এক পরিবর্তনের সূচনা করেছেন ময়মনসিংহের মুক্তাগাছার সত্রাশিয়া এলাকার আবু রেজা মাহবুবুল হক শাহীন (৫০)। মাছ চাষে তিনি শুরু করেছেন শামুকের ব্যবহার। নিজ খামারেই তিনি শামুক থেকে মাছের খাদ্য তৈরি করছেন। এতে তাঁর বাজারজাত মৎস্য খাদ্য ব্যবহারের পরিমাণ কমেছে। ফলে মাছ চাষের ব্যয়ও কমে এসেছে।

এ ছাড়া শামুকের তৈরি খাবার খাওয়ানোয় মাছের স্বাদও ভালো বলে মাহবুবুল হক জানান। কোনো কোনো মাছ চাষি মাহবুবুল হকের কাছে জানার পর নিজেদের খামারেও এ পদ্ধতি ব্যবহার করছেন। অন্যদিকে বিজ্ঞানীরা মাছ চাষে শামুকের ব্যাপক ব্যবহারকে সাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব বলে মন্তব্য করেছেন। এ ছাড়া মাছ চাষে শামুকের তৈরি খাবার ব্যবহার বাড়লে দেশে ‘মিট অ্যান্ড বোন’-এর আমদানি অনেকাংশে কমে যাবে, যা বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয়ে ভূমিকা রাখবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান। কাকতলীয় ঘটনার মধ্য দিয়েই যেমন বড় বড় ঘটনা বা কাহিনীর সূত্রপাত, ময়মনসিংহের মাহবুবুল হক শাহীনের ক্ষেত্রেও অনেকটা তেমনি।

মাহবুবুল হক শাহীনের মাছ চাষি হওয়ার কোনো সম্ভাবনাই ছিল না। তিনি ১৯৮৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে হিসাববিজ্ঞানে অনার্স করেন। ১৯৯১-এর দিকে ফ্রান্সে চলে যান। কিন্তু ২০০৫-এ আবার দেশে ফিরে আসেন। দেশে ফিরে নিজ এলাকা মুক্তাগাছায় চাচা এম এ সোবহানের মাছের খামারে যুক্ত হন। শুরু করেন শিং, মাগুর, কৈ, পাঙ্গাশ, তেলাপিয়া মাছের চাষ। শিক্ষিত যুবক হলেও একজন পরিশ্রমী মানুষ হিসেবে দিনভর কাদা-পানিতে মাখামাখি করে সাফল্যস্বরূপ প্রথম বছরই মাছ চাষে আগের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ লাভ করেন। মাছ চাষের সময়ই মাহবুবুল হক শাহীন খেয়াল করেন, একটি পুকুরের পাঙ্গাশ মাছ বেশ পুষ্ট হয়েছে।

কারণ খুঁজতে গিয়ে তিনি মাছের পেটে পেলেন শামুক। এ ঘটনাটি মাহবুবুল হক শাহীনকে নতুন করে ভাবায়। তিনি খালবিল থেকে শামুক সংগ্রহ করে নির্দিষ্ট একটি পুকুরে চাষ শুরু করেন। যোগাযোগ করেন মৎস্য বিজ্ঞানীদের সঙ্গে। শামুক চাষে তিনি সফল হন। এরপর সফল হন শামুক থেকে মাছের খাদ্য তৈরিতেও। মাহবুবুল হক শাহীন বলেন, তাঁর খামারে মাছের খাবারের প্রায় ৪০ ভাগ এখন তিনি শামুক থেকে তৈরি করছেন। গত বছর তিনি শামুক থেকে খাদ্য তৈরি করেছিলেন চার টন।

এবার তাঁর লক্ষ্যমাত্রা আট টন। মাহবুবুল হক শাহীন বলেন, তাঁর নিজের পুকুরের শামুক থেকে যে খাবার তৈরি হয়, এটি তাঁর নিজের খামারেই প্রয়োজন পড়ে। তবে তিনি প্রান্তিক অনেক মাছ চাষিকে এ ব্যাপারে পরামর্শ দিয়ে সহায়তা করে যাচ্ছেন। নিবেদিতপ্রাণ মাছ চাষি মাহবুবুল হক শাহীন দিন-রাত মাছ চাষ নিয়েই ব্যস্ত থাকেন। সবচেয়ে বড় কথা হলো, তিনি তাঁর নিজের মেধা আর সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যমে মাছ চাষে বিভিন্ন ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে চেষ্টা করছেন।

তিনি বলেন, একজন মাছ চাষি তাঁর ক্ষুদ্র প্রযুক্তির ব্যবহার করে শামুক থেকে মাছের অন্যতম উপকরণ প্রোটিন উৎপাদন করতে পারে। মাছ চাষির উৎপাদিত প্রোটিনে কোনো রাসায়নিক প্রভাব থাকার সুযোগ নেই। তিনি বলেন, আমাদের দেশে মাছ চাষে প্রোটিনের উৎস হিসেবে যে শুঁটকি ব্যবহার করা হয়, তা সংরক্ষণের জন্য প্রচুর পরিমাণে নিষিদ্ধ রাসায়নিক উপাদান ব্যবহার করা হয়, যা মানব শরীরের জন্য ক্ষতিকর। তবে শামুকে কোনো ক্ষতিকর রাসায়নিক থাকে না। তাঁর ভাষায়, ‘সুস্বাস্থ্যের জন্য’ শামুক চাষে গুরুত্ব দেওয়া দরকার।

তিনি আরও বলেন, কুড়া, খৈল, শামুকের গুঁড়ো, ভিটামিন, লবণ শ্রমিক ও মেশিন চার্জ মিলিয়ে শামুক দিয়ে তৈরি এক কেজি মাছের খাবারের মূল্য সাড়ে ১১ টাকার মতো। অথচ বাজারে মাছের খাবারের মূল্য প্রতি কেজি ১৮ থেকে ২০ টাকা। শামুক চাষ সম্পর্কে মাহবুবুল হক শাহীন বলেন, ৪০-৪৫ দিনে ১২০ শতাংশ পুকুর থেকে সঠিক ব্যবস্থাপনায় দুই হাজার কেজি শামুক আহরণ সম্ভব। প্রতি কেজি শামুকের গড় উৎপাদন ব্যয় হয় মাত্র পাঁচ টাকা মতো।

ফার্মসএন্ডফার্মার২৪/জেডএইচ